কোয়েল মল্লিক। ছবি: দেবর্ষি সরকার
প্র: ছবিতে মিতিনমাসি চরিত্রটিতে যেন নারীবাদী সুর বাজে। কিন্তু সুচিত্রা ভট্টাচার্যের লেখায় তো তেমন ছিল না!
উ: সুচিত্রা ভট্টাচার্য নারীবাদে নয়, বিশ্বাস করতেন মানবিক গুণে। ‘সারান্ডায় শয়তান’-এ একটা জায়গা আছে, যেখানে একটা স্টেশনে পার্থ ট্রেন থেকে নামছে, মিতিনও সঙ্গে নামছিল। সেখানে মিতিনের দিদি বলে, ‘পার্থ নামুক, ও দৌড়ে চলে আসতে পারবে, তুই পারবি না’— এটা সুচিত্রা ভট্টাচার্যেরই লেখা। তাই ‘মিতিন মাসি’র সংলাপে বলা হয়েছে, ‘সমাজ মেয়েদের শিখিয়েছে তারা অবলা।’ বলা হয়নি, পুরুষরা বলেছে। মিতিন মাসি গোড়া থেকে জোর দিয়েছে ডিফেন্স শেখায়। ভয় পেলে পৃথিবীটাই অন্ধকার। কারও যদি মনে হয়, এই কথাগুলো নারীবাদী অ্যাঙ্গল থেকে বলা হয়েছে, তা হলে সেটা ভুল।
প্র: চরিত্রটি উইমেন এমপাওয়ারমেন্টের কথাও বলে। আপনার কাছে নারী ক্ষমতায়নের মানে কী?
উ: আমি ফেমিনিজ়মে বিশ্বাস করি না। ‘নারী’ শব্দটার মধ্যে অনেকটা শ্রদ্ধা আছে। আই রেসপেক্ট দোজ় মেন অ্যান্ড আই কনসিডার দোজ় পিপল টু বি মেন হু নো হাউ টু রেসপেক্ট উইমেন। একজন পুরুষ যখন খুব আত্মবিশ্বাসী এবং পরিপূর্ণ, তখনই সে তার স্ত্রীকে পুশ করতে পারে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। সমাজ হচ্ছে পাখির মতো, যার দুটো ডানা, নারী এবং পুরুষ। সমাজকে এগোতে হলে দু’জনকেই এগোতে হবে।
প্র: ‘ভূতপরী’র পোস্টারে প্রথম বার দেখা গেল কোয়েল মল্লিক প্রেজ়েন্টস... তার মানে এ বার থেকে সুরিন্দর ফিল্মসেরও ফোরফ্রন্টে?
উ: (স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে হেসে) আমি ভীষণই খুশি। রানে (নিসপাল সিংহ) অনেক দিন থেকেই বলছিল, ইটস হাই টাইম ইউ শুড প্রেজ়েন্ট আ ফিল্ম। আমি বলছিলাম, আমার নাম হোক বা তোমার, কোনও তফাত নেই। আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্ব থেকে শুরু, তাই পারস্পরিক বোঝাপড়াটা খুব পরিষ্কার। ছবির গল্প থেকে শুরু করে পুরো ক্রিয়েটিভ প্রসেসে থাকতে পেরে খুব ভাল লাগছে। আসলে রানে পিছনে না থাকলে এটা হত না। একটা সময় ছিল, রানেকে বলতাম, আমি এখানে মিসফিট। ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে তখন নিজেকে মেলাতে পারছিলাম না। তখন ও বলত, ‘তুমি হলে মিস ফিট।’ এটা খুব সাহস জুগিয়েছিল।
প্র: কিন্তু প্রোডাকশন হাউস মানে তো শুধু ক্রিয়েটিভ প্রসেসে যুক্ত থাকা নয়, বাণিজ্যের দিকও আছে...
উ: বিজ়নেসের বেসিক কিছু আমি জানি। তবে ওই বুককিপিং যদি বলেন, তা হলে না। সিনেমা থেকে শুরু করে ওয়েব প্ল্যাটফর্ম, টিভি... সুরিন্দর ফিল্মস বহু দিকে ডালপালা মেলছে। তবে হ্যাঁ, কিছু কিছু জায়গায় আমি ঢুকি না। কারণ সেগুলো রানের গুলে খাওয়া। প্রোফেসরের উপর স্টুডেন্ট তো কথা বলতে পারে না (হেসে)। ক্রিয়েটিভ ব্যাপারে রানে আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করে, কোন গল্পটা নিয়ে কাজ করা যায়, কোন নায়িকাকে চরিত্রটায় মানাবে। তবে বিজ়নেসের ক্ষেত্রে ফাইনাল ডিসিশন অবশ্যই রানের।
প্র: ক্যামেলিয়া প্রোডাকশনের সঙ্গে প্রথম বার কাজ করলেন। শোনা যাচ্ছে, অনেক সময়েই আপনাকে স্পটে পৌঁছে অপেক্ষা করতে হয়েছে। টাইম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে রীতিমতো সমস্যা হয়েছে!
উ: তেমন কিছু হয়নি। ওদের সঙ্গে কাজ করে আমার ভাল লেগেছে।
প্র: সব সময়ে ডিগনিফায়েড থাকাটা সহজ নয়...
উ: আমাকে যদি বলা হয়, জীবনটা আঁকতে, সেই ছবিটা আমার কাছে খুব স্বচ্ছ। কারণ জীবন সম্পর্কে আমার ক্ল্যারিটি আছে। দর্শক যখন আপনাকে ভালবাসছেন, তখন সেই তারকারও কিছু দায়িত্ব থাকে। নিজেকে খুশি রাখা যেমন জরুরি, তেমনই অন্যকে খুশি করার মধ্যেও বিরাট আনন্দ লুকিয়ে থাকে। সেটা বুঝতে গেলে জীবনে একটা বেসিক ডিসিপ্লিন দরকার। এত দিন যা কাজ আমি করেছি, সেটা সকলের ভালবাসা ছাড়া সম্ভব হত না। এটা আমার মডেস্টি নয়, বিশ্বাস। যতটা দেবেন, ততটাই ফেরত আসবে।
প্র: জীবনটা এতটা ঘেরাটোপে রাখেন কী ভাবে?
উ: আমরা দু’জনেই আসলে ভীষণ প্রাইভেট পার্সন আর আমি প্রচণ্ড লাজুক। প্রিভেসিটা আমার দরকার। ফ্যামিলি অ্যালবামের ছবিগুলো আমার কাছে স্মৃতি রোমন্থনের জন্য। এগজ়িবিশনে দেওয়াটা আমার কাছে লজ্জার। আমি নিজে জানি না, এতটা লাজুক হয়ে কী ভাবে লাইমলাইটে রয়েছি। পাউট করে ছবি তোলা আমার দ্বারা হয় না। অনেক সময়ে দেখি, কাপলরা ছবি তুলছে বা কেউ একা সেলফি তুলছে, দেখে খুব ভাল লাগে। আমি কেয়ার ফ্রি হলেও সেটা নিজের খোলসে।
মেকআপ: অভিজিৎ চন্দ, স্টাইলিং: পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়, শাড়ি: আনন্দ