বর্ষীয়ান অভিনেতা কে কে রায়না। ছবি: সংগৃহীত।
বাঙালির কাছে তিনি পরিচিত ‘অজিত’ নামে। প্রিয় সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সীর সহকারী অজিতের চরিত্রে অভিনয় করেই জনপ্রিয়তা পেয়েছেন অভিনেতা কে কে রায়না। সম্প্রতি তাঁর নাটক ‘পিছা করতি পারছাইয়াঁ’ মুক্তি পাচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। এই ‘টেলি প্লে’-তে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন ইলা অরুণ। আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কে কে রায়না জানালেন কলকাতা তাঁর প্রিয় শহর।
প্রশ্ন: টেলি প্লে-তে কাজ করে কেমন অভিজ্ঞতা হল?
কে কে রায়না: নাটককে ক্যামেরার মাধ্যমে মঞ্চস্থ করার অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে একেবারে আলাদা। দর্শক কিন্তু এই নাটককে একটি নাটকের আকারেই দেখবে। মঞ্চে অভিনয় করেছি নানা পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে। কিন্তু সেই একই অভিনয়ের সময় ‘ক্যামেরা-অ্যাকশন’ শোনাটা নিঃসন্দেহে একটা নতুন অনুভূতি।
প্রশ্ন: টেলি প্লে-র ক্ষেত্রে কোন কোন দিকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত বলে মনে করেন?
কে কে রায়না: থিয়েটার করার জন্য আমি দেশ-বিদেশের অনেক জায়গায় গিয়েছি। কিন্তু, টেলি প্লে-এর মাধ্যমে আমরা একই সঙ্গে দূরদূরান্তের নানা জায়গায় পৌঁছে যেতে পারি। আর যদি তা দর্শকের পছন্দ হয়ে যায়, তা হলে তাঁরা বার বার দেখতে চাইবেন। ধরা যাক, আজ থেকে ২০ বছর পর কেউ যদি ‘পিছা করতি পারছাইয়াঁ’ নাটকটি দেখতে চান, তা হলে তাঁরা এই টেলি প্লে দেখে নিতে পারেন।
প্রশ্ন: অভিনেতা হিসাবে আপনার পছন্দের মাধ্যম কোনটি?
কে কে রায়না: কণ্ঠস্বর আমার খুব কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই মঞ্চ নাটক আমার সবচেয়ে পছন্দের মাধ্যম। একজন অভিনেতা যখন মঞ্চে অভিনয় করেন, তখন তাঁর অভিব্যক্তি দেখতে পান শুধুমাত্র প্রথম আট সারির দর্শক। তার পর আর সেই অভিব্যক্তি পৌঁছয় না। সেখানে অভিনেতার একমাত্র সম্পদ তাঁর বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।
‘পিছা করতি পারছাইয়াঁ’ নাটকের একটি মুহূর্তে ইলা অরুণের সঙ্গে কে কে রায়না। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: নাটকের সবচেয়ে ভাল দর্শক কোন শহরে পেয়েছেন?
কে কে রায়না: নিঃসন্দেহে কলকাতা। কলকাতার দর্শক খুব সংবেদনশীল, নাটকের পরে তাঁদের মনে অনেক জিজ্ঞাসা থাকে। সেটা ভাল দর্শকের লক্ষণ। কলকাতার পরে আমি জয়পুরকে রাখব।
প্রশ্ন: অনেকেই জানেন না, আপনি পরিচালক রাজকুমার সন্তোষীর জন্য ‘ঘাতক’, ‘চায়না গেট’-এর মতো ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন। কিন্তু তার পরে আর বিশেষ কিছু লেখেননি, কেন?
কে কে রায়না: লেখালিখির বিষয়টি আমার কাছে খুবই ব্যক্তিগত। বাইরে থেকে যদি কেউ আমার লেখার উপর তাঁর মত প্রয়োগ করতে চান, সেটা আমার পছন্দ হয় না। ‘চায়না গেট’ যখন লিখেছিলাম, তখন ‘ছাম্মা ছাম্মা’ গানের কোনও উল্লেখ ছিল না। রাজকুমার সন্তোষী আমার বিশেষ বন্ধু, তাই আমি ওঁর ছবি চিত্রনাট্য লিখেছিলাম। আমার সঙ্গে এই গান নিয়ে মতানৈক্যও ঘটেছিল। রাজকুমার আমাকে আশ্বাস দিয়েছিল এই গানটা সুপারহিট হবে। ঘটনাচক্রে সেটাই হয়েছে। আমি যে ধরনের ছবি লিখতে চাই, তার জন্য প্রযোজক পাওয়া মুশকিল।
প্রশ্ন: কলকাতায় অনেকে আপনাকে অজিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় নামে বেশি চেনেন। বাসু চট্টোপাধ্যায়ের ‘ব্যোমকেশ বক্সী’তে কাজ করার অনুভূতি কেমন ছিল?
কে কে রায়না: বাসুদার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা এক কথায় অনবদ্য। ওঁর ‘সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ’-এর জনপ্রিয়তা আজও সবচেয়ে বেশি। কারণ, বাসুদা চরিত্রগুলিকে অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন। আর আমি মনে করি, ব্যোমকেশ বক্সীর পুননির্মাণ যত বারই হোক না কেন, বাসুদার কাজকে কেউ ছুঁতে পারবে না।
প্রশ্ন: এর পর আর কোন কোন কাজে দেখা যাবে আপনাকে?
কে কে রায়না: সেপ্টেম্বর মাস থেকে একটি ওটিটি-র জন্য ‘সারথী’ বলে একটি সিরিজ়ে কাজ শুরু করছি। ‘সারথী’র গল্প মালবাহী ট্রাকচালকদের নিয়ে। আমার মনে হয়, এমন একটা কাহিনি এর আগে কেউ কোনও দিন দেখেননি।
প্রশ্ন: ওটিটি একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম। বিনোদন দুনিয়ায় এটি কেমন পরিবর্তন এনেছে বলে আপনি মনে করেন?
কে কে রায়না: বড় পর্দায় ছবি হিট করাতে গেলে শাহরুখ খানের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ওটিটি-তে মনোজ বাজপেয়ীর জনপ্রিয়তা বেশি। আমার মনে হয় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এখানেই তৈরি করেছে ওটিটি। প্রতিভা এবং মেধার সদ্ব্যবহার করা হচ্ছে এখানে। ওটিটি দেখিয়ে দিয়েছে তারকার প্রয়োজন নেই।