এ দেশে ভি শান্তারাম, রাজ কপূর, মেহবুব, যশ চোপড়া, সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটকের মতো পরিচালকেরা মহিলাকেন্দ্রিক ছবি বানিয়েছেন এবং বার্তা দিয়েছেন যে, নিজের সম্মানের জন্য নিজেকেই দাঁড়াতে হবে।
সঞ্জয়
প্র: বছর শুরু হল ‘গঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ি’র সাফল্য দিয়ে। কী ভাবে উদ্যাপন করছেন এই ভালবাসা, প্রশংসা?
উ: আলাদা ভাবে কিছু করিনি। তবে মুখের হাসিটা অনেক চওড়া হয়ে গিয়েছে। যখন ‘গঙ্গুবাই...’ এর শুটিং করছিলাম, তখনও ভিতরে একটা আনন্দ হত এই ভেবে যে, কোনও রকম আপস না করে আমি ছবিটা বানিয়েছি। শুটিংয়ের প্রথম দৃশ্য, যেখানে আলিয়া নিজের মুখে পাউডার থুপে দিচ্ছে। আর শেষে আমরা শুট করেছি ‘মেরি জান’ গানটা, যেটা গাড়ির মধ্যে ওয়ান টেক শট ছিল— পুরো শিডিউলে আমি খুব নিশ্চিন্তে কাজ করেছি।
প্র: ছবিমুক্তির আগের চাপ এখন তো আর নেই...
উ: নিজের ছবি রিলিজ়ের আগের দিন ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকি আমি। সে সময়ে মোবাইলের দিকেও তাকাই না। রিভিউ পড়তে পিছপা হই না, কিন্তু একপেশে রিভিউ পড়ি না। এ বার অবশ্য বার্লিন থেকেই যে সব ভাল ভাল প্রতিক্রিয়া এসেছিল, তাতে অনেকটা স্বস্তি পেয়েছিলাম।
প্র: গুজরাতি প্রেক্ষাপটের প্রতি আপনার বিশেষ টান রয়েছে...
উ: গঙ্গুবাই গুজরাতের কাথিয়াওয়াড়িতে জন্মেছিলেন। তবে তিনি যদি দেশের অন্য কোনও প্রান্ত থেকেও আসতেন, তবুও আমি এ ছবি বানাতামই। এত বছর আগে একজন যৌনকর্মী নিজের সম্মানের জন্য লড়াই করেছিলেন, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে। তাঁর জীবন, অস্তিত্বের লড়াই আমাকে আকর্ষণ করেছিল। ষাটের দশকে মুম্বইয়ের আজ়াদ ময়দানে দাঁড়িয়ে তাঁর ভাষণের প্রতিধ্বনি আমি এই দশকে বসেও শুনতে পাই এবং ছবি তৈরি করতে বাধ্য হই।
প্র: গঙ্গুবাইয়ের চরিত্রে আলিয়া ভট্টের নির্বাচন নিয়ে নানা মত ছিল। আপনি কী ভেবে আলিয়াকে বেছে নিয়েছিলেন?
উ: প্রথমবার আলিয়া যখন গঙ্গুবাইয়ের চরিত্রটা সম্পর্কে শুনেছিল, বলেছিল, ‘আমি এ ছবি করতে পারব না।’ কিন্তু আমি জানতাম, আলিয়াই আমার গঙ্গুবাই। কামাথিপুরার সঙ্গে আমার বহু দিনের এবং খুব কাছের সম্পর্ক। এখন মুম্বইয়ের অভিজাত এলাকার বিলাসবহুল বাড়িতে থাকলেও শুরুর দিকে আমি ও দিকেই থাকতাম। আমার আত্মা আজও কামাথিপুরার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে। অনেক আলোচনা, রিসার্চ, টিম মিটিং, আলিয়ার সঙ্গে বহু বার কথা... সব কিছুর পরে ছবিটা দাঁড়িয়েছে। আলিয়াকে গঙ্গুবাই বানানোটা আমার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।
প্র: ছোট থেকে আপনি আলিয়াকে চেনেন, তাই ওঁর সঙ্গে কাজ করাটা কি সহজ ছিল?
উ: আলিয়া অত্যন্ত বুদ্ধিমতী অভিনেত্রী। সেটে সারাক্ষণ ও সবাইকে লক্ষ করত, সেটাই কিন্তু ভাল অভিনেত্রীর লক্ষণ। আমার কাছ থেকে ব্রিফ নিত, তার পরে সেটা নিজের মতো করে সাজিয়ে নিত। আমি অভিনেতাদের সঙ্গে বেশি কথা বলি না, তাঁদের পর্যবেক্ষণ করি।
প্র: আপনার ছবিতে মহিলা চরিত্ররা খুবই বলিষ্ঠ হয়। চিত্রনাট্য কি সেটা ভেবেই লেখেন?
উ: আমার ছবির নায়িকারা সুন্দরীও হন (হেসে)। আমার মতে নারী ভগবানের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এ দেশে ভি শান্তারাম, রাজ কপূর, মেহবুব, যশ চোপড়া, সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটকের মতো পরিচালকেরা মহিলাকেন্দ্রিক ছবি বানিয়েছেন এবং বার্তা দিয়েছেন যে, নিজের সম্মানের জন্য নিজেকেই দাঁড়াতে হবে। আমার জীবনেও মা এবং বোনের বিরাট প্রভাব রয়েছে।
প্র: ছবিতে অভিনেতা শান্তনু মাহেশ্বরীকে দর্শক বেশ পছন্দ করছেন। এই চরিত্রে কোনও বড় স্টারকে নিলেন না কেন?
উ: কারণ শান্তনুকে মা পছন্দ করেছিলেন। একদিন টিভিতে শান্তনুকে দেখিয়েছিলেন মা। আলিয়ার বিপরীতে যে ভাবে দাপিয়ে অভিনয় করেছে ও, সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। মা ঠিক একই ভাবে শ্রেয়া ঘোষালকেও সিলেক্ট করেছিলেন।
প্র: অজয় দেবগণের সঙ্গে আপনার খুব ভাল সম্পর্ক। এত বছর বাদে কাজ করে কী রকম লাগল?
উ: বাইশ বছর পরেও অজয় স্যরের কোনও পরিবর্তন নেই। এত বড় তারকা বলেই কোনও নিরাপত্তাহীনতা নেই। অজয় স্যর নিজের মতামতও দেন খুব সুন্দর ভাবে।
প্র: ‘ইনশাল্লাহ’ ছবিটি বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে কি?
উ: গঙ্গুবাই ২০১১ সালে তৈরি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এতটা সময় লেগে গেল। ‘ইনশাল্লাহ’ ভাগ্যে থাকলে ঠিক তৈরি হবে। আমার পরবর্তী প্রজেক্ট ওয়েব সিরিজ় ‘হীরা মান্ডি’। এই মুহূর্তে সেটাই আমার ফোকাস।