ভূমি।
প্র: এলজিবিটি সম্প্রদায়ের কোনও চরিত্র বড় পর্দায় তুলে ধরার সময়ে শিল্পী হিসেবে কি বাড়তি দায়িত্ববোধ কাজ করে?
উ: আমি বরাবর এমন চরিত্র করেছি, যাদের জার্নি মানুষ হিসেবে সমৃদ্ধ করবে, আমার ক্ষমতায়নের অনুঘটক হবে। আমার মতে এখনও অবধি যে ধরনের হিন্দি ছবি হয়েছে, সেখানে এই ধরনের চরিত্রদের প্রতি পুরোপুরি সুবিচার করা হয়নি। এ ছাড়া, বিষয়টি আমার কাছে খানিক ব্যক্তিগতও বটে। আমার বন্ধু মহলে এবং পরিবারে বিসম যৌনপ্রবৃত্তির অনেক মানুষ আছেন। এঁদের সকলের জার্নি খুব কাছ থেকে দেখেছি। এই ধরনের চরিত্রের জন্য চিত্রনাট্যের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা প্রয়োজন। ‘বধাই দো’ কমেডি ঠিকই। কিন্তু এই মানুষগুলোর লড়াইয়ের সঙ্গে আপস করে হাস্যরস দেখানো হয়নি। তাই শিল্পী হিসেবে বাড়তি দায়িত্ব তো আছেই। নিখুঁত চরিত্রায়নের জন্য অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয়।
প্র: গত কয়েক বছর ধরে আপনার কাছের বন্ধু আয়ুষ্মান খুরানা এই ধরনের চরিত্রদের তো সামনের সারিতে এনেছেন। তার পরেও বলবেন হিন্দি ছবি সুবিচার করেনি?
উ: আয়ুষ্মানের আগে ‘ফায়ার’, ‘মার্গারিটা উইথ আ স্ট্র’-এর মতো ছবির কৃতিত্বকে অস্বীকার করছি না। তবে বলতে চাইছি, এক দশকে এমন একটাই ছবি তৈরি হলে সেটা যথেষ্ট নয়। এখনও সমাজে গে, লেসবিয়ানদের নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা, অপপ্রচার রয়েছে। সমাজে যদি এখনও তাঁদের স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে দেখা না হয়, তবে ছবিতে বিষয়টা কী ভাবে স্বাভাবিক বলে গণ্য হবে? যৌনপ্রবৃত্তি দিয়ে নয়, নীতিবোধ, সততা, আচরণের মতো মাপকাঠি দিয়ে মানুষের বিচার হওয়া উচিত। ‘বধাই দো’ সে কথাই বলে।
প্র: রাজকুমার রাওয়ের সঙ্গে প্রথম বার কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
উ: রাজ খুব ভাল বন্ধু হয়ে গিয়েছে। আমাদের অনস্ক্রিন রসায়নের জন্য অফস্ক্রিন বন্ধুত্ব হয়েছে, না কি অফস্ক্রিনের বোঝাপড়া অনস্ক্রিন ফুটে উঠেছে, তা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই (হাসি)। এর আগে আমি কোনও ছবি করিনি, যেখানে নায়ক এবং নায়িকার রোম্যান্টিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ফারাক আছে। এই ছবিতে নায়কের বিপরীতে নায়িকা নয়। সেটা আমার কাছে নতুন। আমাদের রসায়ন জয়-বীরু বা টম-জেরির মতো। অফস্ক্রিন রাজের সঙ্গে আমার সম্পর্ক এ রকমই (হাসি)।
প্র: কেরিয়ারের শুরুর দিকে কয়েকটি ছবির জন্য ছোট শহরের প্রতিবাদী মেয়ের চরিত্রে টাইপকাস্ট হয়ে যাচ্ছেন বলা হত। ‘পতি পত্নী অওর উয়ো’র পরে ‘মিস্টার লেলে’র মতো ছবি দিয়ে কি সেই ধারণা ভাঙতে চান?
উ: সত্তর বছরের দাদির চরিত্র থেকে ‘সোনচিড়িয়া’, ‘দম লগা কে হাইশা’ থেকে ‘পতি পত্নী’র মতো চরিত্র...আমার কিন্তু কখনও মনে হয়নি টাইপকাস্ট হয়েছি। লুকের নিরিখেও একটা চরিত্রের সঙ্গে অন্যটার মিল নেই। ‘শুভ মঙ্গল সাবধান’-এ মেয়েটি দিল্লির। তাই ছোট শহরের বলা যায় না। তবে আমি সমাজের একটা বিশেষ শ্রেণির নারীচরিত্রদের তুলে ধরেছি, যাদের ক্ষমতায়ন হয়নি, সে ভাবে সেলিব্রেট করা হয়নি। ‘বধাই দো’র চরিত্রগুলি দেহরাদূনের। একটা কথা মানতেই হবে, ভারতের ছোট শহরগুলির জীবনধারায় বড়সড় পরিবর্তন এসেছে। সেটাই ছবিতে তুলে ধরা হচ্ছে। ছ’বছরের কেরিয়ারে সব সময়ে বিভিন্ন জ়ঁরের ছবি করার চেষ্টা করেছি। ‘মিস্টার লেলে’ নিয়ে এখনই কিছু বলতে পারব না। টাইপকাস্ট হওয়ার ভয় আমার নেই। তবে লোকে যদি বলে, সব ছবিতে একই ধাঁচের অভিনয় করি, সেটাতে ভয় পাই। তাই প্রতিটা চরিত্রের জন্য পরিশ্রম করি।
প্র: এই প্রজন্মের প্রায় সব অভিনেত্রী ছকভাঙা চরিত্র করতে চান। বাঁধা গতের চরিত্রে কি দর্শকের ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে?
উ: সমাজের পরিবর্তনগুলোই ছবিতে প্রতিভাত হয়। নব্বইয়ের দশকে অভিনেত্রীরা যে কাজ করে গিয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস নেই। কিন্তু এখন দর্শক বদলে গিয়েছে। আমরা কী করছি, সেটার চেয়েও বড়, দর্শক কী দেখছেন, দেখতে চাইছেন। তাই এই প্রজন্মের সকলেই অন্য ধরনের কাজ করতে চাইছেন। শ্রীদেবী ম্যামের ‘লমহে’ আমার খুব পছন্দের। এই ছবিগুলোর আবেদন একটা প্রজন্মেই আবদ্ধ নয়। কিন্তু যে কোনও কাজেরই চূড়ান্ত মূল্যায়ন করেন দর্শক।
প্র: ক্লাইমেট ওয়ারিয়র উপাধি উপভোগ করেন?
উ: এটা নিয়ে কথা বলতে গেলে দিন পেরিয়ে যাবে (হাসি)। ছোটবেলা থেকেই এই সংক্রান্ত কাজ করছি। এখন শুধু একটা ট্যাগ দিয়েছি। আমার প্যাশন প্রজেক্ট বলতে পারেন। অভিনেতা হওয়ার সুবাদে যে সুবিধেগুলো পাচ্ছি, তা গঠনমূলক কাজে লাগাতে চাই।