আলিয়া
প্র: এখনও পর্যন্ত করা চরিত্রের মধ্যে গঙ্গুবাই (‘গঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ি’) কি সবচেয়ে কঠিন?
উ: চরিত্রের নিরিখে তো বটেই, শুটিংয়ের দিক থেকেও কঠিন ছিল। চরিত্রটি খুবই ইমোশনাল। বিনোদনের দিকটাও মাথায় রাখতে হয়েছে। আমার অফস্ক্রিন ব্যক্তিত্বের চেয়ে অনেকটাই আলাদা গঙ্গুবাই। আর স্যরের (সঞ্জয় লীলা ভন্সালী, পরিচালক) সঙ্গে কাজ করা খুব সহজ নয়। পরিচালক হিসেবে উনি এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত এবং নিখুঁত যে, অভিনেতাদের সব রকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হয়। সেটে এক মুহূর্তের অবসর ছিল না। তবে চাপ বলতে দুশ্চিন্তার কথা বলছি না। এনার্জি এবং পারফরম্যান্সের দিক থেকে সেরাটা চান স্যর। তাই সেটে সব কিছু ‘হাই’ রাখতে হত (হাসি)।
প্র: ‘রাজ়ি’র পরে এটি আপনার দ্বিতীয় বাস্তব চরিত্র। কী ভাবে তৈরি করেছিলেন নিজেকে?
উ: কাথিয়াওয়াড়ির গঙ্গুবাই বম্বের কামাথিপুরা অঞ্চলে জীবনের বেশির ভাগ সময় থেকেছেন। তাই দু’ধরনের বাচনভঙ্গি আমাকে রপ্ত করতে হয়েছে। তবে এটা খানিক টেকনিক্যাল দিক চরিত্রটির। শুটিং শুরুর পরেই প্রথম চরিত্রটার খোলসের ভিতরে ঢুকতে পারি। এ ক্ষেত্রে ভাগ্যও সহায় ছিল। দু’বছর ধরে শুধু গঙ্গুর চরিত্রে অভিনয় করেছি। মাঝে অন্য কোনও ছবি করিনি। তবে পরিকল্পনা কিন্তু এমন ছিল না। প্রথমে নব্বই দিনের শিডিউল ছিল। অতিমারির কারণে দেড়শো দিনে শুটিং শেষ হয়েছে। স্যরের চোখে অবশ্য এটা ‘ছোট’ ছবি (জোরে হাসি)!
প্র: ‘গঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ি’র প্রথম টিজ়ার মুক্তি পাওয়ার পরে নেটিজ়েনের একাংশ আপনার দেহসৌষ্ঠব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। পতিতালয়ের কর্ত্রীর চরিত্রে শরীরী আবেদনে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারবেন বলে মনে হয়েছিল?
উ: চিত্রনাট্য পড়ার পরে খুব একটা সংশয় ছিল না। তবে প্রথম যখন জেনেছিলাম, এমন একটা চরিত্রে স্যর আমাকে ভেবেছেন, অবাক হয়েছিলাম। উনি যে মাপের পরিচালক, ওঁর দূরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাধ্য আমার নেই। তাই স্যরের দৃষ্টিভঙ্গির কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছি। মানুষের মনে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। কারণ এই অবতারে তাঁরা আমাকে আগে দেখেননি। ইন্টারনেটে গঙ্গুবাইয়ের বৃদ্ধ বয়সের একটাই ছবি পাওয়া যায়। তাই হয়তো ওঁর বয়স নিয়ে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। ছবিতে গঙ্গুর সতেরো থেকে বত্রিশ বছর বয়সের সময়কাল ধরা হয়েছে। শরীরী আবেদন নিয়ে আমার যে সংশয় একেবারেই ছিল না, তা নয়। তবে নির্মাতা-পরিচালক, মেকআপ শিল্পী সকলেই এর জন্য খেটেছেন। আমার মতে, মুক্তির আগে ছবির যে কোনও দিক নিয়ে দর্শকের মধ্যে আলোচনা হলে তা ভালই (হাসি)।
প্র: গত কয়েক বছরে নারীকেন্দ্রিক হিন্দি ছবির সংখ্যা বেড়েছে। এর জন্য অভিনেত্রীদের মার্কেট ভ্যালু কি বাড়ছে?
উ: আশা করছি, সেটাই হোক। বরাবরই অভিনেত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র দেওয়া হয়েছে। ‘মাদার ইন্ডিয়া’, শাবানাজির (আজ়মি) ‘অর্থ’ বা ‘ব্ল্যাক’-এর মতো ছবি তো আগেও হয়েছে। তবে খুব কম প্রযোজক এখনও বড় মাপের নারীকেন্দ্রিক ছবির জন্য বিনিয়োগ করেন। অভিনেতাদের সঙ্গে গল্পের জোর না থাকলে, বৃহত্তর দর্শকের কাছে ছবির আবেদন তৈরি হয় না। ‘গঙ্গুবাই’-এ একটা চরিত্রই ছবি ধরে রেখেছে। চরিত্রের প্রেমে পড়লে, ছবিটাও দর্শকের ভাল লাগবে।
প্র: ওটিটি যে ভাবে স্টারডমের সংজ্ঞা বদলে দিয়েছে, মনে কি হয় আপনারাই সুপারস্টারদের শেষ প্রজন্ম?
উ: কঠিন প্রশ্ন! (খানিক সময় নিয়ে) নিজেকে স্টার বলতে সঙ্কোচ হয় (হাসি)। গত কয়েক বছরে আমাকে নিয়ে যে উৎসাহ তৈরি হয়েছে, সেটা বুঝতে পারি। কিন্তু আমার স্টারডম ছবির জন্য। ঠিক ছবি না বাছলে, মানুষ দেখবেন না। ওটিটিতেও যদি ছবি করি, সেখানে আমার সিনেম্যাটিক প্রেজ়েন্সের জৌলুস কমবে না। আসলে ওটিটি অন্য একটি মাধ্যম। বড় পর্দার চেয়ে খাটো মাধ্যম, এ ভাবে দেখতে চাই না।
প্র: সোশ্যাল মিডিয়া কি এখনকার তারকাদের বৈধতা দেয়?
উ: সোশ্যাল মিডিয়া মরীচিকার মতো, বিভ্রান্তি ছড়ায়। এখানে পাওয়া ভালবাসা বা ঘৃণা, কোনওটাকেই গুরুত্ব দিই না। ফ্যানক্লাবগুলির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। কারণ ওরা সব সময়ে পাশে থেকে উৎসাহ জোগায়। দর্শকের একটাই ভাষা, যা ছবি রিলিজ়ের পরে বোঝা যায়। আমার পোস্টে তিরিশ জন ‘লাভ ইউ’ লিখলেই ছবি হিট হয়ে যায় না। এ প্রজন্মের অনেকেই হয়তো ফলোয়ার, লাইকের সংখ্যা নিয়ে মাতামাতি করেন। কিন্তু আমার কাছে এটাই একমাত্র মাপকাঠি নয়। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতেও অভিনেত্রীদের চেয়ে অনেক অভিনেতার কম ফলোয়ার রয়েছে। তাতে কি অভিনেতা হিসেবে তাঁদের গুরুত্ব কমে? সোশ্যাল মিডিয়া ইজ় আ গুড ডিসট্র্যাকশন।
প্র: আপনার শেষ দু’টি ছবি (‘কলঙ্ক’, ‘সড়ক টু’) চলেনি। ব্যর্থতাকে ভয় পান?
উ: একেবারেই নয়। তবে প্রযোজকদের জন্য খারাপ লাগে। একটানা সাফল্য তো বোরিং! কারও জীবনেই শুধু সাফল্য থাকে না। বরং ব্যর্থতার পরে এলে তার মূল্য বেশি হয়। ব্যর্থতা সাহস জোগায়, মনের জোর বাড়ায়।
প্র: এই বছর কি রণবীর কপূরের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন?
উ: গত কয়েক বছরে আমার বিয়ের ভুয়ো কার্ডও ছাপা হয়ে গিয়েছে (জোরে হাসি)। দু’বছর তো ঘরে বসেই কাটিয়ে দিলাম। না হলে বিয়ে হয়ে যেত। বিশ্বাস করি, সব কিছু সময় মেনে হয়। ঠিক সময় এলে বিয়েও হবে (হাসি)।
প্র: বিয়ের পরে ক্যাটরিনা কাইফের সঙ্গে কথা হয়েছে?
উ: ওর বিয়ের সাজ যে সুন্দর হয়েছে, তা মেসেজ করে বলেছি। শুভেচ্ছাও জানিয়েছি।
প্র: বিতর্কের সঙ্গে মহেশ ভট্টের নাম সমার্থক। ওঁর মেয়ে হিসেবে কি গর্ববোধ করেন?
উ: জনসমক্ষে বাবা কী বলেন, তা দিয়ে ওঁকে বিচার করা যায় না। বাড়িতে আমরা পাবলিক ইমেজ দূরে রাখি। বাবা হিসেবে ওঁকে পাওয়ায় নিশ্চয়ই গর্বিত। বাবার ক্ষমতা আছে জোর গলায় কথা বলার। আমার নেই। এমনিতেও আমি কম কথার মানুষ। সব বিষয়ে আমার মতামত সকলের জানার দরকার নেই (হাসি)।