ঋত্বিক
প্র: ২০১৯ সালে আপনার ছবি পরপর মুক্তি পেয়েছিল সিনেমা হলে। অতিমারির জন্য ২০২০তে দীর্ঘ বিরতি। এ বছর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে ‘বিনিসুতোয়’। অভিনেতা হিসেবে মনের অবস্থা ঠিক কী রকম?
উ: ২০২০তে যা হল, তা আমাদের ভাবনায় ছিল না। সকলে নিজেদের মতো করে বিষয়টা বুঝলাম। হলে ছবি রিলিজ়ের পরিস্থিতি তখন ছিল না। নিজের পেশা নিয়ে দুশ্চিন্তা, খারাপ লাগা ছিল, আছেও। আগামী দিনের দিশা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে আশঙ্কার পাশাপাশি খানিক আশায় বুক বাঁধি। মনে হয়, দর্শক সিনেমা হলে ছবি দেখতে আসবেন।
প্র: অতনু ঘোষের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কী রকম?
উ: অতনুদার সঙ্গে ‘বিনিসুতোয়’ আমার তৃতীয় কাজ। নিজের ছবিতে অতনুদা জোরালো ভাবে উপস্থিত থাকেন। এই ছবির বিষয় হয়তো জটিল নয়। কিন্তু ওঁর গল্প বলার নিজস্ব ধারা রয়েছে। পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয় নিয়েও উনি খুব উৎসাহী। ঠিক কী চাইছেন শিল্পীদের কাছ থেকে, তা স্পষ্ট ব্রিফ করে দেন। দরকার পড়লে অভিনয় করেও দেখিয়ে দেন। অভিনেতা হিসেবে সেটা খুব লাভজনক বলে মনে হয়।
প্র: জয়া আহসানের সঙ্গে আগেও তো কাজ করেছেন?
উ: এক ছবিতে ছিলাম। তবে একসঙ্গে দৃশ্য সে ভাবে ছিল না। ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর শর্ট ফিল্ম ‘ভালবাসার শহর’-এ একটি দৃশ্য ছিল দু’জনের।
প্র: কিন্তু ওই একটি দৃশ্যেই আপনাদের রসায়ন ফুটে উঠেছিল। দু’জনেই দক্ষ শিল্পী বলে কি সেটা সম্ভব হয়েছিল?
উ: অভিনেতা হিসেবে যখন কাজ করি, তখন তো আলাদা করে রসায়নের বিষয় মাথায় রাখি না। চিত্রনাট্য, মুহূর্ত সব মিলিয়ে হয়তো পুরো বিষয়টা জমাট বাঁধে। শিল্পী ভাল হলে, তাঁরা হয়তো আরও পরত যোগ করেন দৃশ্যে। খুব খারাপ অভিনেতা হলে আমি বুঝতে পারি না, ভাল করছে না কি খারাপ করছে (জোরে হাসি)। তবে জয়া খুব উঁচু দরের অভিনেত্রী। সেটা জানি বলেই বলছি, ‘বিনিসুতোয়’ ওকে ভাল লাগবে।
প্র: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কাবাড্ডি কাবাড্ডি’র শুট করার সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন...
উ: এই ছবিটাই অতিমারি আবহে প্রথম শুট করছিলাম। কিন্তু ওটা করার সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। গুরুতর অসুস্থ হইনি। হোম আইসোলেশনে থেকেই সুস্থ হয়ে উঠেছিলাম। ছবিটার চার-পাঁচ দিনের কাজ বাকি রয়েছে এখনও।
প্র: ঘরবন্দি দিনগুলো কী ভাবে কাটালেন?
উ: গত বছরের শুরুর দিকে যখন প্রথম লকডাউন হয়েছিল, তখন বাড়ির সব কাজ আমি আর অপরাজিতা মিলে করেছি। ছোট বাচ্চা আছে বলে চেয়েওছিলাম নিজেরাই সবটা করতে। এটা করতে গিয়ে বেশ খানিকটা আত্মনির্ভরও হয়েছি। কিছুটা ভয় যেন কেটে গিয়েছে। মানে আগামী দিনেও সামলে নিতে পারব, এমন বিশ্বাস জন্মেছে। গাছ পরিচর্যার নতুন অভ্যেস তৈরি হয়েছে। ওটিটিতে চুটিয়ে ডকুমেন্টারি দেখেছি। আমি হ্যাপি সোল। তাই ভাল-মন্দ মিশিয়েই কাটিয়েছি দিন।
প্র: গত বিধানসভা নির্বাচনে যে ভাবে একঝাঁক শিল্পী ময়দানে এলেন, রাজনীতি কি অভিনেতাদের কাছে বিকল্প হয়ে উঠেছে বলে মনে হয়?
উ: সকলেই নিজেদের মতো করে বিকল্পের সন্ধানে থাকে। কিন্তু রাজনীতি যদি অভিনেতাদের কাছে বিকল্প হয়, তবে সাধারণ মানুষের জন্য তা বিপদের। কারণ এই পেশাতেও সময় দিতে হয়, ডেডিকেশন লাগে। টিকে থাকা সহজ নয়। সকলের কাছে হয়তো বিকল্প নয়, তবে কয়েকজনকে দেখে তো তেমনই মনে হল।
প্র: অনেকেই ইতিমধ্যে নির্বাচনে হেরে গিয়ে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন...
উ: হ্যাঁ, দলে নাম লেখানোর আগে অনেকেই বললেন কী যেন একটা ‘কাজ’ তাঁরা করতে চান। একটা ‘আদর্শ’-এর কথাও বলছিলেন (হাসি)। কিন্তু সেটা কী, তা তাঁরা স্পষ্ট করেননি। হেরে যাওয়ার পরে রাজনীতির বাইরে থেকেও কাজ করা যায় বলছেন তাঁরা। সেটা আগে বুঝলেও হত। আমরা একটু অন্য রকমই বুঝলাম (হাসি)।
প্র: আপনার মতে, অভিনেতারা রাজনীতি সচেতন হবেন। কিন্তু রাজনীতি থেকে দূরে থাকবেন?
উ: বিষয়টা ঠিক তা নয়। রাজনীতি করাটা ব্যক্তিনির্ভর। কিন্তু দলনির্ভর রাজনীতি করার কিছু দায়বদ্ধতা থাকে। দলের নিজস্ব মতাদর্শ, জটিলতা থাকবেই। কোনও ব্যক্তি সেই দলে যাচ্ছেন মানে, সে দিকগুলো সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। তবে দলবদলের খেলা বাড়তে বাড়তে কোনও দলের প্রতি মানুষের কতটা শ্রদ্ধার জায়গা রয়েছে এখন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে সব মানুষের নিজস্ব রাজনৈতিকবোধ থাকে। সেটা বাড়লে সমাজের পক্ষেও ভাল।