Music

লাইভ অনুষ্ঠান বন্ধ, বদলে শুরু ভার্চুয়াল শো: কী বলছিলেন শিল্পীরা

বিদেশের জন্যও একই ভাবে অনালাইন শো হচ্ছে। কখনও শিল্পী একক ভাবে পারফর্ম করছেন, কখনও একাধিক শিল্পী একসঙ্গে। 

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২০ ০০:০৮
Share:

মার্চ মাস থেকেই সব কিছু থমকে গিয়েছিল। করোনার প্রকোপ যত বেড়েছে, অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রির মতো সঙ্গীতজগৎও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল প্রথমে। শো, ইভেন্ট সর্বত্রই তালা ঝুলল লকডাউনে। পুজোর মরসুম থেকে শুরু করে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সঙ্গীতশিল্পীদের সুসময়। কিন্তু এ বার কোনও শোয়ের অগ্রিম বুকিং নেই। বিদেশেও করোনার দাপট অব্যাহত। এই শোগুলির বুকিং প্রায় এক বছর আগে থাকতেই হয়, এ বার সবই সাত সমুদ্রের জলে।

Advertisement

বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি দ্রুত সমে ফিরছে। তাই সেখানকার শিল্পীদের কাছে প্লেব্যাকের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু টলিউড ইন্ডাস্ট্রি এখনও পুরোদস্তুর ট্র্যাকে ফেরেনি। আর শুধু প্লেব্যাক দিয়ে মিউজ়িক ইন্ডাস্ট্রি বাঁচতে পারে না, তার জন্য দরকার শোয়ের অক্সিজেন। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল শোয়ের ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে। যেখানে শিল্পীরা অনলাইনে শো করছেন। শ্রোতারা টাকা দিয়ে সেই শোয়ের টিকিট কাটছেন। এটাই এখন নতুন ‘ই’ভেন্ট। আগের মতোই শোয়ের সময়, স্থান ও শিল্পীদের তালিকা অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শ্রোতারা টিকিট কেটে রাখছেন। তার পর নির্দেশ অনুযায়ী লগ-ইন করলে লাইভ অনুষ্ঠান দেখা যাচ্ছে। শুধু দেশে নয়, বিদেশের জন্যও একই ভাবে অনালাইন শো হচ্ছে। কখনও শিল্পী একক ভাবে পারফর্ম করছেন, কখনও একাধিক শিল্পী একসঙ্গে।

নিউ নর্মালের এটাও একটা ধাপ। কিন্তু দুধের স্বাদ কি ঘোলে মেটে? পুজোর সময়েই আমেরিকা টুর ছিল অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের, যা স্বাভাবিক ভাবেই বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে তিনি অনলাইনে বেশ কিছু লাইভ শো করেছেন। সেই অভিজ্ঞতার কথা গায়ক-সুরকার বলছিলেন, ‘‘অনলাইন শোগুলো একটু যান্ত্রিক। মঞ্চে শ্রোতাদের সামনে গান গাওয়ার সময়ে যে উন্মাদনা, যে প্রতিক্রিয়া পাই, তা এখানে থাকে না। ওই প্রতিক্রিয়ার মূল্য একজন শিল্পীর কাছে অনেক। তবে এই পরিস্থিতিতে নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল।’’

Advertisement

অনিন্দ্য

অনুপম রায় আবার এর মধ্যে চ্যারিটি শো ছাড়া কোনও লাইভ অনুষ্ঠান করেননি। করতেও চান না। তা হলে এই সময়টা কী ভাবে কাজে লাগাচ্ছেন? ‘‘গান লিখছি, সুর করছি, গাইছি... সৃষ্টিতে তো বাধা নেই,’’ বললেন অনুপম। এর মধ্যে ‘অ্যায়সি রাতোঁ’ বলে একটি হিন্দি সিঙ্গল করেছেন তিনি, যেটি ইউটিউবে বেশ হিট। অন্য দিকে ইমন চক্রবর্তী আবার এই মাধ্যমটি এক্সপ্লোর করতে বেশ উৎসাহী। জানালেন, বিদেশে তাঁরও কিছু শো বাতিল হয়েছে। ‘‘এর মধ্যে কিছু ভার্চুয়াল শো করেছি। অনলাইনে শো করলে কিছু টেকনিক্যাল ব্যাপার মাথায় রাখতে হয়। ক্রমশ সড়গড় হওয়ার চেষ্টা করছি,’’ বলছিলেন ইমন। এই টেকনিক্যাল কারণেই লোপামুদ্রা মিত্র অনলাইন শোয়ের বিষয়টি নিয়ে একটু দ্বিধায় রয়েছেন। বলছিলেন, ‘‘ভার্চুয়াল শো করলাম কয়েকটা। আমরা মঞ্চে অভ্যস্ত, তাই দর্শকের সঙ্গে ইন্টার‌্যাকশনের সময়ে ভাবতে হয় না। এখানে সেটা মাথায় রাখতে হচ্ছে। আর খেয়াল রাখতে হয় ইন্টারনেটের স্পিড ঠিক আছে কি না!’’ তবে দর্শকের সামনে পারফর্ম করার অনুভূতি মিস করছেন গায়িকা। আরও একটি সমস্যার কথা তুললেন তিনি। ভার্চুয়াল শোয়ে অল্প হলেও পারিশ্রমিক পাচ্ছেন শিল্পীরা। কিন্তু মঞ্চে শোয়ের সময়ে যে সব শিল্পী যন্ত্রে সঙ্গত করতেন, লাইট, স্টেজ সামলাতেন, তাঁরা এই পরিস্থিতিতে বিপদে পড়েছেন। বিভিন্ন ভাবে তাঁদের সাহায্য করার চেষ্টা করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্যই, বলে মনে করেন লোপামুদ্রা।

অনুপম

ইভেন্ট অর্গানাইজ়ার রানা সিংহ রায় বলছিলেন, ‘‘ডিজিটাল শোয়ে টাকা যেমন কম পাওয়া যাচ্ছে, তেমন খরচও কম। প্রোডাকশন কস্ট নেই বললেই চলে। আগে একটা শো থেকে শিল্পীরা যে টাকা পেতেন, তার ২০-৩০ শতাংশ টাকাতেই অনলাইন শোয়ে রাজি হতে হচ্ছে তাঁদের।’’ ভার্চুয়াল শোয়ের পেমেন্ট প্রসঙ্গে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের মত, ‘‘অনলাইন শোয়ে টাকা কম জেনেও রাজি হচ্ছি। পারিশ্রমিকের চেয়েও বড় ব্যাপার হল, অভ্যেস। নিজের অস্তিত্বের প্রশ্নও রয়েছে। একজন সৃজনশীল মানুষের পক্ষে কিছু না করে বসে থাকাটা খুব কষ্টকর।’’

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও আগের মতো পারিশ্রমিক পাওয়া যাবে কি না, সে প্রশ্নও কিন্তু উঁকি দিচ্ছে শিল্পীদের মনে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement