বাজি পোড়ানোর গল্প শোনালেন টলিউডের তারকারা।
দীপাবলিতে ইতিহাস গড়ছে ২০২১। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ, এ বারের কালীপুজোয় শব্দবাজি বা আলোর বাজি কিছুই পোড়ানো যাবে না। কেবল জ্বালানো যাবে নানা ধরনের আলো, মোমবাতি, প্রদীপ। এ বছর তাই আক্ষরিক অর্থেই ‘আলোর উৎসব’ হয়ে উঠতে চলেছে দীপাবলি।
বাজি ‘হারিয়ে’ মন খারাপ হবে কাদের? শব্দ নয়, আলোর উদযাপনের পক্ষে কারা? টলি-তারকাদের সঙ্গে কথা বলেছিল আনন্দবাজার অনলাইন।
ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি লাগোয়া বাড়ির মেয়ে পাওলি দাম। বড় হয়েছেন কালীপুজো, দেদার বাজি পোড়ানো দেখে। নিজেও একটা সময় চকোলেট বোমা, তুবড়ি, রকেট-সহ হরেক বাজি পোড়াতেন। অতিমারির আবহে বাজি নিষিদ্ধ হতেই একটু মন খারাপ অভিনেত্রীর। বললেন, ‘‘ছোটবেলায় দীপাবলি বললেই বুঝতাম রকমারি আলো। আর আতস বাজি। অতিমারি আর পরিবেশ দূষণের কারণে একটি স্মৃতি মুছে যাবে।’’ পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, বাজি পোড়ানো এক অর্থে টাকা পোড়ানো। উপার্জন শুরুর পর থেকে এই অর্থের অপচয়ের দিকটাও ভাবাত তাঁকে। আবার একইসঙ্গে ভুলতে পারছেন না বাজির কারখানার কারিগরদের মুখগুলোও। যাঁরা এর ফলে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে চলেছেন। সব মিলিয়ে পাওলির মত— বৃহত্তর স্বার্থে এটুকু মেনে নিতেই হবে সবাইকে।
প্রতীকী ছবি।
ভবানীপুরের চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে এক সময়ে তুবড়ি তৈরি হত। উত্তমকুমার চট্টোপাধ্যায়ের নাতি গৌরব চট্টোপাধ্যায়ও এক সময়ে অল্পবিস্তর বাজি পোড়াতেন। তাঁর দাবি, ‘‘শব্দবাজি কখনওই পছন্দ করতাম না। পোড়াতামও না। তাই বাজি নিষিদ্ধ হওয়াতে আমার খুব খারাপ লাগছে না।’’ গৌরবের বক্তব্য, অতিমারিতে বিশ্ব আক্রান্ত। দূষণ সেই সংক্রমণ আরও বাড়িয়ে দেয়। ফলে, আজ না হয় কাল বাজি নিষিদ্ধ করতেই হত। পাশাপাশি তিনি পথের কুকুর-বেড়াল ও পোষ্যদের অসুবিধার দিকটিও তুলে ধরেছেন। জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ির পোষ্যটি তিনটে দিন শব্দের দাপটে ভয়ে কুঁকড়ে থাকত। বুঝতে পারতেন, খুবই কষ্ট হত তার। বাজি নিষিদ্ধ হলে অন্য প্রাণীরাও ভাল থাকবে। এটা ভেবেই স্বস্তি পাচ্ছেন গৌরব।
ছোট পর্দার ‘রাজা’ ওরফে রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলেবেলার স্মৃতি জুড়ে আতসবাজি। ছেলে সহজকে নিয়ে বাজি পুড়িয়েছেন। বাজি তৈরির রোজগারে অনেকের সংসার চলে, সেটাও জানা। অভিনেতার মতে, এই মুহূর্তে সেই সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে পরিবেশ দূষণ। যা বিশ্বকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। অতিমারির জেরে লকডাউনে কিছু দিন সব বন্ধ থাকায় দূষণ সামান্য কমেছে। বাজি পোড়ানোর অনুমতি দিলে তা দ্বিগুণ বাড়বে বলে মনে করেন রাহুল। একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রবীণ নাগরিকদের কথাও। অতিমারি হৃদরোগ বাড়িয়েছে। বাজি পুড়লে তাঁদের সেই সমস্যা আরও বাড়বে বই কমবে না। এই প্রজন্মের কচিকাঁচাদের জন্য রাহুলের সহজ সমাধান, এখনকার ছোটরা বাজি না পুড়িয়ে বড় হলে কোনও সমস্যা নেই। তারা বরং সুস্থ পরিবেশে বেড়ে উঠুক। এর বাইরে আপাতত তাঁর আর কিচ্ছু চাওয়া নেই।
বাজি নিষিদ্ধ হওয়ায় খুশি অভিনেত্রী পায়েল দে-ও। পায়েল এবং তাঁর স্বামী দ্বৈপায়ন দাস বরাবর বাজির ঘোর বিরোধী। দ্বৈপায়ন অবশ্য বড় হয়েছেন কানপুরে। সেখানে কালীপুজো, দীপাবলি উপলক্ষে টানা সাত দিন বাজি পুড়ত। আনন্দবাজার অনলাইনকে অকপটে পায়েল জানালেন, হাইকোর্টের রায়ে তাঁরা খুব খুশি। কিন্তু এক মাত্র ছেলে মেরাক! সে যে বাজি পোড়াতে পারবে না? পায়েলের বক্তব্য, ‘‘গত কালীপুজোয় ওর হাতে তারাবাজি দিয়েছিলাম। দেখলাম ছেলের আগ্রহই নেই! ফলে, বাজি নিয়ে আমাদেরও মাথাব্যথা নেই।’’