অ্যামাজন প্রাইমের অ্যাকশন ক্রাইম থ্রিলার ওয়েব সিরিজ ‘মির্জাপুর’। মাদক আর বারুদের পোড়া গন্ধ মেশানো টানটান প্লট। এই সিরিজের প্রতিটা চরিত্রই দর্শকদের মনে গেঁথে গিয়েছে। যার অন্যতম হলেন মুন্না ত্রিপাঠী।
রক্তপাত, নৃশংসতা এবং বন্দুকের আকাশভেদী আওয়াজ… মুন্না ভাইয়ার কাছে এ সব যেন কিছুই নয়। বন্দুকের নলে চোখ রেখেই দিন শুরু হয় তাঁর। অথচ রিয়েল লাইফে সেই মুন্নাকেই এক সময় মাত্র ৩২ টাকা খরচ করার আগেও পকেটে হাত রেখে ভাবতে হত!
‘মির্জাপুর’ ওয়েব সিরিজের মুন্না ত্রিপাঠীর প্রকৃত নাম দিবেন্দ্যু শর্মা। বলিউডে নতুন মুখ নন দিব্যেন্দু। তবে এখনও পর্যন্ত যা যা অভিনয় করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে সফল এই ‘মির্জাপুর’।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে দিব্যেন্দুর এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে অনেকখানি পরিশ্রম। অনেক বাধা পেরিয়ে তাঁকে এই জায়গায় পৌঁছতে হয়েছে।
তাঁর জন্ম ১৯৮৩ সালে দিল্লিতে। ছোট থেকে অভিনয়ে তাঁর ঝোঁক ছিল। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়ার কারণে কখনও এটাকে পেশা হিসাবে ভাবেননি।
ছোটবেলায় পড়াশোনায় একেবারেই ভাল ছিলেন না। দশম শ্রেণির পরীক্ষায় মাত্র ৪৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন।
রেজাল্টের অবস্থা দেখে বাবা একাদশ শ্রেণিতে কলাবিদ্যায় ভর্তি করিয়ে দেন। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং অঙ্ক -এই ৩ জটিল বিষয় সিলেবাস থেকে বাদ পড়ায় পড়াশোনাতে ভীষণ মনোযোগী হয়ে পড়েন তিনি।
তাঁর প্রিয় বিষয় তখন রাষ্ট্রবিজ্ঞান। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৮৪ শতাংশ নিয়ে পাশ করলেন। পরীক্ষার নম্বর দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন বাবা। প্রথমে ভেবেছিলেন ছেলে বোধ হয় রেজাল্টে কিছু কারচুপি করেছেন।
দিল্লির কিরোরিমল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হতে আসাই হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।
কলেজে থিয়েটারের একটা দল ছিল। সেই দলে নাম লেখান দিব্যেন্দু। সরাসরি অভিনয়ের সঙ্গে সেই প্রথম তাঁর পরিচয়।
অভিনয়ই যে তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য সেটা বুঝে গিয়েছিলেন কলেজে থাকাকালীনই। পুণে গিয়ে এফটিআইআই-এ ভর্তি হন। সেখান থেকে পাশ করে বেরনোর পর ২০০৬ সালে মুম্বই চলে আসেন। তাঁর স্ট্রাগল মূলত শুরু তখন থেকেই।
হাতে টাকা ছিল না। আবার টাকার জন্য বাবাকেও বেশি চাপ দিতে পারতেন না। বোন কিছুটা সাহায্য করতেন যদিও।
কিন্তু দাদা হয়ে বোনকে কখনও কিছু দিতে না পারার লজ্জাও তাড়া করে বেড়াত তাঁকে। উল্টে বোনের থেকে সাহায্য নেওয়াটা মোটেই পছন্দ ছিল না তাঁর।
সস্তায় প্রথমে একটি দু’কামরার ঘরে ৩ বন্ধু মিলে থাকতে শুরু করেন। ঘরভাড়াটা ভাগ করে নিতেন তাঁরা। টুকটাক যা কাজ পেতেন সেটা দিয়ে দিন কাটানো ছিল খুব কঠিন।
অনেক খুঁজে বাড়ির কাছে ৩২ টাকায় একটা খাবার দোকানের খোঁজ পান। ৪টি রুটি আর সঙ্গে মাংসের ঝোল। এই খেয়েই দিন কাটিয়ে দিতেন। এতে খরচও বাঁচত অনেকটা।
মুম্বইয়ে পৌঁছনোর পর সাড়ে ৩ বছর দরজায় দরজায় ঘুরেছেন। ২০০৭ সালে মাধুরী দীক্ষিতের কামব্য়াক ফিল্ম ‘আজা নাচলে’তে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান। এই ফিল্মে এক পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
কিন্তু এই ফিল্মের পর তাঁর হাতে আর কোনও কাজ ছিল না। ফের দরজার দরজায় কড়া নাড়া শুরু।
পরের সুযোগ আসে ২০১১ সালে ‘প্যায়ার কা পঞ্চনামা’তে। মনপ্রাণ দিয়ে অভিনয়টা করেছিলেন। ফিল্মে তাঁর অভিনয় দর্শকমহলে বেশ প্রশংসিতও হয়।
এরপর ‘চশমে বদ্দুর’, ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’, ‘ব্রহ্মাস্ত্র’, ‘বাত্তি গুল মিটার চালু’-র মতো ছবিতে অভিনয় করে নজর কাড়েন।
কিন্তু ওয়েব সিরিজ ‘মির্জাপুর’ আচমকাই যেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে তাঁকে। প্রথম সিজনেই দর্শকদের বেঁধে ফেলেছিল তাঁর অভিনয়। দ্বিতীয় সিজনেও প্রধান চরিত্র মুন্না ত্রিপাঠী ওরফে মুন্না ভাইয়াকে পছন্দ করেন দর্শকরা।
এটা অবশ্য দিব্যেন্দুর প্রথম ওয়েব সিরিজ নয়। এর আগে ‘পার্মানেন্ট রুমমেটস’ নামে এক সিরিজে অভিনয় করেছেন। ‘ফটাফট’ নামে একটি শর্ট ফিল্মেও অভিনয় করেছেন তিনি।