আরও অনেক তরুণীর মতো তিনিও এসেছিলেন বলিউডের নায়িকা হতে। প্রাথমিক স্ট্রাগলের পরে রাতারাতি তাঁর ভাগ্য বদলে দেয় বক্স অফিসে ব্যর্থ একটি ছবি। যে নায়কদের সঙ্গে তিনি কেরিয়ার শুরু করেছিলেন, আজ তাঁদের ছবির প্রযোজক তিনি। দিব্যা খোসলা কুমারের জীবনের গল্প হার মানাবে ছবির চিত্রনাট্যকেও।
দিল্লির এক মধ্যবিত্ত পরিবারে দিব্যার জন্ম ১৯৮১ সালের ২০ নভেম্বর। তাঁর বাবার একটি ছাপাখানা ছিল। মা ছিলেন শিক্ষিকা। দিল্লিতে বি কম পড়ার সময় থেকে তিনি মডেলিং শুরু করেন। প্রথমে তিনি প্রিন্ট মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনে কাজ করতেন। পরে ধীরে ধীরে ভিডিয়ো দুনিয়াতেও পা রাখেন।
২০০০ সালে ফাল্গুনী পাঠকের ‘আইয়ে রামা হাথ সে ইয়ে দিল খো গ্যয়া’ মিউজিক ভিডিয়োতে অভিনয় করেন দিব্যা। তাঁর কাজ প্রশংসিত হওয়ায় দিব্যার কাছে সুযোগ বাড়তে থাকে। মডেলিং এবং অভিনয়কেই তিনি পেশা করবেন বলে ঠিক করেন। দিল্লি থেকে পাড়ি দেন মুম্বই।
মুম্বই এসে শুরু হয় তাঁর অভিযান। সুযোগ পান কুণাল গঞ্জাওয়ালার ভিডিয়ো ‘জিদ না করো ইয়ে দিল কা মামলা হ্যায়’ মিউজিক ভিডিয়োয় অভিনয়ের। বিপরীতে নায়ক ছিলেন সলমন খান। টিনসেল টাউনে প্রথম কাজে সলমনের সঙ্গে অভিনয় এক লহমায় দিব্যাকে নিয়ে আসে প্রচারের আলোয়।
এর পর অভিজিৎ ভট্টাচার্যর মিউজিক ভিডিয়ো ‘কভি ইয়াদোঁ মেঁ আও’-তেও অভিনয় করেন দিব্যা। পরপর দু’টি মিউজিক ভিডিয়ো সুপারহিট হওয়ায় দিব্যার কাছে এ বার এল তেলুগু ছবি ‘লভ টুডে’-তে নায়িকা হওয়ার সুযোগ।
দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে অভিষেক হওয়ার পরে বলিউড থেকেও ডাক আসতে সময় লাগল না। ২০০৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি ‘অব তুমহারে হাওয়ালে বতন সাথিয়োঁ।’
অনিল শর্মার পরিচালনায় এই ছবিতে দিব্যা অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন, অক্ষয় কুমার, ববি দেওলের মতো তারকার সঙ্গে। ছবিটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। কিন্তু মুক্তির আগে এই ছবির সূত্রেই পাল্টে যায় দিব্যার জীবনের গতিপথ।
ছবির প্রযোজকও ছিলেন অমিল শর্মা। তাঁর বাড়িতে ছবির গান নিয়ে একটি আলোচনায় ডাক পড়েছিল দিব্যার। সেখানে টি-সিরিজের তরফে হাজির ছিলেন ভূষণকুমার। ছবির মিউজিকের দায়িত্ব ছিল গুলশন কুমারের সংস্থা টি-সিরিজ। সংস্থার কর্ণধার ভূষণকুমার প্রথম দর্শনেই দিব্যার প্রেমে পড়েন।
ক্রমে দু’জনের মধ্যে আলাপ ঘনিষ্ঠ হয়। কিন্তু ভূষণ কুমারের থেকে নিজের দূরত্ব বজায় রাখতেন দিব্যা। তাঁর আশঙ্কা হত, বড় শিল্পপতি ভূষণকুমার হয়তো প্লে বয়। কিন্তু এর পর ভূষণকুমারের এক বন্ধু দিব্যার কাছে যান। জানতে চান, কেন তিনি ভূষণকুমারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না।
এর পর দিব্যার মনে হতে থাকে, তাঁকে নিয়ে ভূষণকুমারের অনুভূতি হয়তো মিথ্যে নয়। ধীরে ধীরে তাঁদের প্রেমপর্ব শুরু হয়। ভূষণকুমারের বোনের বিয়েতে সপরিবার আমন্ত্রিত ছিলেন দিব্যা খোসলা। সেখানেই তাঁর এবং ভূষণের বিয়ের কথা চূড়ান্ত হয়।
২০০৪ সালের ডিসেম্বরে মু্ক্তি পায় দিব্যার প্রথম ছবি ‘অব তুমহারে হাওয়ালে বতন সাথিয়োঁ।’ তার ২ মাস পরে বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে সাদামাটা অনুষ্ঠানে বিয়ে করেন ভূষণ-দিব্যা। পরে দিল্লি ও মুম্বইয়ে রাজকীয় পার্টির আয়োজন করা হয়।
ভূষণকুমারকে বিয়ের পরে রাতারাতি ইন্ডাস্ট্রির নজরের কেন্দ্রে চলে আসেন দিব্যা। আগে তাঁর কোনও অস্তিত্বই ছিল না। সেখান থেকে তিনি হয়ে ওঠেন ইন্ডাস্ট্রির সবথেকে বড় প্রযোজনা সংস্থার মালিক।
বিয়ের পরে অভিনযয় থেকে ধীরে ধীরে প্রযোজনায় পা রাখেন দিব্যা। মুম্বইয়ে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সিনেম্যাটোগ্রাফি নিয়ে তিনি কোর্স করেন। টি সিরিজের হয়ে মিউজিক ভিডিয়ো পরিচালনা করতে থাকেন তিনি। প্রায় ২০ টি মিউজিক ভিডিয়োর পরে দিব্যা ছবি পরিচালনা করবেন বলে ঠিক করেন।
দিব্যার কাছে এক দিন ভূষণকুমার জানতে চান, তিনি কী উপহার পছন্দ করেন? উত্তরে স্বামীকে দিব্যা বলেন, তিনি একটি ছবি পরিচালনা করতে চান। এর পর ২০১৪ সালে দিব্যাকে ‘ইয়ারিয়াঁ’ ছবি পরিচালনার সুযোগ দেন ভূষণকুমার। ২ বছর পরে তিনি পরিচালনা করেন ‘সনম রে’।
পরিচালকের পাশাপাশি দিব্যা প্রযোজকও। ‘রয়’, ‘খানদানি শফাখনা’, ‘বাটলা হাউস’, ‘স্ট্রিট ডান্সার থ্রি ডি’, ‘লুডো’, ‘ইন্দু কি জওয়ানি’-র মতো ছবিগুলির প্রযোজক দিব্যা।
অভিনেত্রী পরিচয়ও সম্পূর্ণ মুছে ফেলতে চান না দিব্যা। ২০০৪-এ প্রথম ছবির ১২ বছর পরে তিনি অভিনয় করেছিলেন ‘সনম রে’-তে। ২০১৭ সালে তাঁকে দেখা গিয়েছিল শর্ট ফিল্ম ‘বুলবুল’-এ। আগামী বছর দিব্যাকে দেখা যাবে ‘সত্যমেব জয়তে২’ ছবিতে।
কেরিয়ারের পাশাপাশি দিব্যা ব্যস্ত গৃহিণী। স্বামী ভূষণকুমার এবং ছেলে রুহানকে নিয়ে তাঁর ভরপুর সংসার। ঘর এবং বাইরের জগতের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখেন তিনি। উপভোগ করেন হঠাৎ করে পাল্টে যাওয়া জীবনকে।