সৃজিত মুখোপাধ্যায়, গ্লোব প্রেক্ষাগৃহ, দেব অধিকারী। ছবি: ফেসবুক।
পুজোয় বাঙালির অনেক কিছু চাই। নতুন জামা, জুতোর পর্ব পেরিয়ে নতুন ছায়াছবিতে অনেক দিন পৌঁছে গিয়েছেন শহর কলকাতার মানুষ। এ বছরের বাড়তি চাওয়া নাকি নতুন প্রেক্ষাগৃহ! এই চাহিদাও অপূর্ণ রাখছেন না পরিবেশক, অজন্তা সিনেমার মালিক শতদীপ সাহা। তাঁর হাত ধরে পুরনো খোলনলচে বদলে অত্যাধুনিক সাজে ফিরছে শহরের ঐতিহ্যপূর্ণ প্রেক্ষাগৃহ গ্লোব। সঙ্গে বাড়তি পাওনা পুজোর তিনটি বাংলা ছবি! আনন্দবাজার অনলাইনকে শতদীপ জানিয়েছেন, ছবি দেখতে ভালবাসেন যাঁরা, তাঁদের জন্য এই উপহার।
রবিবার থেকে দরজা খুলে যাচ্ছে নতুন প্রেক্ষাগৃহের। তালিকায় ‘টেক্কা’, ‘বহুরূপী’, ‘শাস্ত্রী’, ‘স্ত্রী ২’, ‘তুম্বাড়’-এর মতো ছবি। এখানেই শেষ নয়। রবিবার প্রেক্ষাগৃহে দেব ও সৃজিত মুখোপাধ্যায় তাঁদের পুজোর ছবি ‘টেক্কা’র টিকিট বিক্রি করবেন। উনিশ শতকের প্রেক্ষাগৃহটি সেই সময়ে যথেষ্ট আধুনিক ছিল। যেমন, প্রেক্ষাগৃহে তখন প্রধানত বিদেশি ছবির প্রাধান্য থাকত। ২০২৪-এ এসেও একই ভাবে ঝাঁ চকচকে সেটি, দাবি শতদীপের। পার্থক্য, শুধু ইংরেজি নয়, নানা ভাষার ছবি দেখানো হবে গ্লোবে। তাঁর কথায়, “দুটো পর্দা থাকছে। অর্থাৎ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহটি এ বার মাল্টিপ্লেক্স। একটিতে আসনের সংখ্যা ২৩৯টি। অন্যটিতে ১৯৭।” পুরনো প্রেক্ষাগৃহের পর্দাটি ৭০ মিমি মাপের ছিল। শতদীপ জানিয়েছেন, আধুনিক প্রেক্ষাগৃহে অত বড় পর্দা ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাই পর্দার আকার আগের তুলনায় ছোট হলেও অন্যান্য প্রেক্ষাগৃহের তুলনায় যথেষ্ট বড়। টিকিটের মূল্যও নাকি অন্যান্য প্রেক্ষাগৃহের তুলনায় কম।
গ্লোব সিনেমার অন্দরমহল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
কাঠের দরজায় আলো দিয়ে লেখা গ্লোব সিনেমা। উপরে লাল-সাদা নিয়ন আলোর লোগো যা ছোট থেকে বড় সকলের নজর কাড়বে। দরজার উপর প্যানেল করে লাগানো মৃদু আলো। কাচের ঘেরাটোপে পাঁচটি ছবির স্ট্যান্ডি সাজানো। একপাশে বসার, খাবারের জায়গা। সে সব পেরিয়ে লাল কার্পেট বিছানো সিঁড়ি দিয়ে ভিতরে পা রাখলেই লাল গদিমোড়া আরামদায়ক চেয়ারের সারি। সমাজমাধ্যমে গ্লোবের নয়া রূপ প্রকাশ্যে আসতেই চর্চা শুরু প্রেক্ষাগৃহ নিয়ে। শতদীপ জানিয়েছেন, নতুন প্রেক্ষাগৃহে বসে ছবি দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছে শহর।
উত্তর থেকে দক্ষিণ— শহরে একের পর এক নামজাদা প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে শতদীপের এই প্রয়াসের নেপথ্যে কোন ভাবনা কাজ করেছে? পরিবেশকের রসিকতা, “আমার বাড়ির পাশের প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে যাবে! বরং চালু থাকলে রোজ এসে ছবি দেখতে পারব। এই ভাবনা থেকেই বলতে পারেন।” তার পরেই গম্ভীর গলায় দাবি, “আজীবন বিনোদন দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত। সিনেমার বাইরে আমার কোনও জগৎ নেই। তাই একটার পর একটা প্রেক্ষাগৃহ যখন বন্ধ হয়েছে মন ভেঙেছে। গ্লোব যাতে কালের গহ্বরে হারিয়ে না যায় তার জন্যই নিজে দায়িত্ব নিলাম।” শতদীপ কিন্তু শুধুই গ্লোবকে নতুন জন্ম দিয়ে থেমে যাচ্ছেন না। আমতলা-সহ শহর ও শহরতলিতে একাধিক নতুন প্রেক্ষাগৃহ খুলতে চলেছেন।