সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
‘দাদাগিরি’র সঙ্গে শুরু থেকে যুক্ত। এখনও প্রথম শটের কথা মনে পড়ে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এখনকার মতো ততটাও চৌখস নন। সংলাপ বলতে গিয়ে আটকে যাচ্ছেন। কোথায়, কতটা আবেগ প্রকাশ করতে হবে— ধরতে গিয়ে সামান্য সমস্যা হচ্ছে। সেই ‘দাদা’ এখন সেটে আক্ষরিক অর্থে ‘দাদাগিরি’ চালান। না, আচরণে নয়, কাজে। কেবল একটা জিনিস এক রয়ে গিয়েছে। ‘দাদা’ এখনও শট দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘পারছি তো? হচ্ছে তো?”...
শুরুর সে দিন
সাল ২০০৯। ‘দাদাগিরি’ শুরু। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম সঞ্চালনা করতে এলেন। সেটে যখন পা দিলেন তখন যাবতীয় জনপ্রিয়তা পিছনে রেখে এলেন। প্রথমে ‘দাদাগিরি’র দলের সঙ্গে আলাপ সারলেন। তার পর প্রতিযোগীদের সঙ্গে। প্রত্যেকের পোডিয়ামে গিয়ে বড়দের হাতজোড় করে নমস্কার জানালেন। সমবয়সিদের সঙ্গে হাত মেলালেন, যাতে অনুষ্ঠানে যাঁরা এসেছেন তাঁরা মন খুলে ওঁর সঙ্গে মিশে যেতে পারেন। সেই ধারা এখনও অব্যাহত। আর প্রতি দিন নিজেকে ঘষেমেজে তৈরি করে চলেছেন। ১০ নম্বর সিজ়নের পর তিনি এতটাই সহজ যে, এখন আর চিত্রনাট্য দেখে সংলাপ বলেন না। ওঁর কাছে প্রত্যেক প্রতিযোগী সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য থাকে। সেই অনুযায়ী, প্রথম প্রতিযোগীর সঙ্গে তৃতীয় প্রতিযোগীর মিল পেলে তিনি নিজেই দু’জনকে মিলিয়ে দেন।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে পরিবার শেষ কথা। ছবি: সংগৃহীত।
রূপটান করা বনাম রূপটান না করতে চাওয়া সৌরভ
‘দাদা’কে দুই অবস্থাতেই দেখেছি। অনেকেই জানতে চান, রূপটানহীন ‘দাদা’কে দেখার পর কি ওঁর প্রতি আকর্ষণ একটুও কমেছে? আমার মতে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের চেহারায় একটা আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। আমরা সেটে রূপটান দিয়ে কেবল সেটুকুই উজ্জ্বল করে দিই। আর উনি চুলটা সেট করেন। রূপটান নেওয়া আর রূপটান ছাড়া সৌরভের মধ্যে তাই খুব বেশি পার্থক্য নেই। ‘দাদা’ নিজেও খুব বেশি রূপটান নিতে ভালবাসেন না। তবে পরিপাটি থাকতে পছন্দ করেন। আর যে কোনও রং ওঁকে মানায় ভাল। ‘দাদাগিরি’র রং নীল। দাদা নিজেও ওই রং পছন্দ করেন। এ ছাড়া, সাদা থেকে লাল হয়ে নরম গোলাপি— যা পরেন তাতেই যেন ‘মহারাজ’।
রাজপ্রাসাদ নয়, জাদুঘর
বিশাল জায়গা জুড়ে গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের বাড়ি। পেশার কারণে প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়কের বাড়িতে গিয়েছি বলে সেটের অনেকে জানতে চেয়েছিলেন, ছোটখাটো রাজপ্রাসাদ? বাড়ি দেখে মনে হয়েছে, ওটা রাজপ্রাসাদ নয়, আস্ত জাদুঘর। জার্সি থেকে পুরস্কার হয়ে ছবি তো আছেই। কী নেই সেখানে! ‘দাদা’ যখন যা গাড়ি পেয়েছেন। সব সেখানে সযত্নে রেখে দিয়েছেন, এবং প্রত্যেকটা প্রতি দিন পরিষ্কার করা হয়।
সেটে ‘দাদা’ বাড়ির ‘মহারাজ’
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কখনও আমাদের থেকে বাড়তি সুযোগ নেন না। মেকআপ রুম, সেট— সব শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সেট ছাড়া উনি এসি চালাতে দেন না! মেকআপ রুমে তো নয়ই। ওঁর পছন্দ কালো কফি আর ডার্ক চকোলেট। চিনি খান না বলে। টানা শুটিং করতে করতে এক এক বার খুব নরম গলায় আমায় বলেন, “অভিজিৎ, একটু কালো কফি খাওয়াতে পার?” ওঁর বাড়িতে সত্যিই রাজকীয় অভ্যর্থনা জোটে। তিন-চার রকমের মিষ্টি থাকবেই। আর চেনা প্রশ্ন, “চা, কফি না শরবত?” সেটে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কেতাদুরস্ত। বাড়িতে তিনিই সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবিতে ধোপদুরস্ত।
‘দাদাগিরি’র সেটে (বাঁ দিক থেকে) অভিজিৎ সেন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সংহিতা ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।
আংটি দিয়ে প্রপোজ়!
এক বার চেন্নাই থেকে ওঁর এক অনুরাগিনী হিরের আংটি নিয়ে উপস্থিত! ওঁর স্বপ্ন ছিল, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে বিয়ে করবেন। নিজেকে নাকি প্রস্তুতও করেছিলেন সে ভাবে। তার পর জানতে পারেন, প্রাক্তন অধিনায়ক বিবাহিত। মন ভেঙে গিয়েছিল তাঁর। কিন্তু ভালবাসা কমেনি। নির্দিষ্ট সময়ে তাঁর জন্য বাড়ি থেকে পাত্র দেখা হচ্ছে। এক পাত্র জানিয়েছিলেন, তিনিও ‘দাদা’র অন্ধ ভক্ত। সেই অনুরাগিনী আর কোনও দিকে না তাকিয়ে বিয়ে করেছিলেন তাঁকে। সেই মহিলার বাড়ির প্রত্যেক আনাচকানাচে ‘দাদা’র ছবি। প্রত্যেক সিজ়নে খেলায় অংশ নেবেন বলে চেন্নাই থেকে কলকাতায় এসে অডিশন দিয়ে গিয়েছেন। ন’বার ফেল করার পরেও দমেননি। ১০ নম্বর সিজ়নে অডিশনে পাশ করে যোগ দিয়েছিলেন খেলায়। শুধু সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে সামনে থেকে দেখবেন বলে। ওঁর সঙ্গে কিছু ক্ষণ সময় থাকতে পারবেন বলে। স্বপ্নের পুরুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঠিক হতেই দারুণ উত্তেজিত তিনি। আনন্দের চোটে হিরের আংটি কিনেছেন। আর রক্তগোলাপ। সে সব নিয়ে সোজা সেটে। সবার সামনে আংটি বাড়িয়ে দিতেই ‘দাদা’ লজ্জায় লাল! ‘ধরণী, দ্বিধা হও’ দশা। লজ্জা ঢাকতে ‘দাদা’ মাথা নীচু করে সেই উপহার নিয়েছিলেন। অনুরাগিনীর মুখের হাসি তখন দেখার মতো।
রূপবতী নয় গুণবতীতে মুগ্ধ...
তাঁর প্রচুর অনুরাগিনী। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কোনও দিন রূপসী প্রতিযোগিনীর দিকে মুখ ফিরিয়ে দেখেননি? উনিও তো পুরুষ! এই নিয়েও আগ্রহ কম নয়। ‘দাদা’কে দেখে বুঝেছি, রূপের কদর দু’দিনের, গুণের আদর চিরকাল— এই প্রবাদে বিশ্বাসী। হ্যাঁ, সুন্দরী প্রতিযোগিনীর দিকে হয়তো দু’বার দেখেছেন। ওঁর কাছে গুণের কদর আগে। প্রতিযোগিনীর মধ্যে বুদ্ধিদীপ্ত সৌন্দর্য আর গুণ থাকলে তিনি স্বতঃস্ফূর্ত প্রশংসা করেন।
‘না’ কোন বিষয়ে
আগেই লিখলাম, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকেন না। ভাত, রুটি, বিরিয়ানি, ঠান্ডা পানীয়, মিষ্টি— কিচ্ছু খান না। কোনও দিন ধূমপান করতে দেখিনি। রাগতে দেখিনি। উঁচু গলায় কথা বলতে শুনিনি। কোনও ঔদ্ধত্য নেই। প্রশংসা শুনলেই ‘দাদা’র মাথা নীচু। এ ভাবে বিনয়ের সঙ্গে সবার প্রশংসা গ্রহণ করেন।
সৌরভ যদি রাজনীতিতে আসেন
এই নিয়ে প্রচুর জল্পনা। ‘দাদা’ যদিও কোনও দিন আসবেন না। অনেক বার বলেছেন, তিনি রাজনীতি পছন্দ করেন না। তাই কোনও দিন এই ময়দানে আসবেন না। সকলের সঙ্গে সদ্ভাব আছে, এই মাত্র। বদলে তিনি খেলায় ডুবে থাকেন। ক্রিকেটের পাশাপাশি যত রকমের খেলা আছে, সব দেখেন তিনি। এমনকি, মহিলাদের ক্রিকেটেও তাঁর সমান আগ্রহ।