স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এবং অর্জুন দত্ত।
কপালে লাল টিপ, সিঁথিতে চওড়া করে সিঁদুর, হাতে শাঁখা-পলা, লাল শাড়ির উপর অ্যাপ্রন। মুখে লেগে একরাশ হাসি। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এখন ‘শ্রীমতী’। ‘শাহজাহান রিজেন্সি’র কমলিনী গুহর মতো আধুনিকা বা ‘তাসের ঘর’-এর সুজাতার মতো একাকিত্বের আড়ালে নয়, স্বস্তিকা এ বার ধরা দেবেন আটপৌরে চেনা ছন্দে।
চেনার মধ্যে অচেনার খোঁজ করলেন পরিচালক অর্জুন দত্ত। বেশির ভাগ সময়েই ‘সাহসী’ চরিত্রে অভিনয় করা স্বস্তিকাকে মিলিয়ে দিলেন ঘরে ঘরে থাকা মহিলাদের সঙ্গে। আপাতদৃষ্টিতে যাঁদের খুব ছাপোষা, সাধারণ মনে হয়, তাঁদের জীবনের গল্পগুলোই বলবে অর্জুনের নতুন ছবি ‘শ্রীমতী’। নিজেকে খুঁজে পাওয়ার গল্প বুনেছেন তিনি। অর্জুন বললেন, "আমরা সকলেই লোক দেখাতে গিয়ে বা কোনও কিছু প্রমাণ করার তাগিদে অনেক সময় নিজেদের হারিয়ে ফেলি। ইদানিং এটা খুব বেশি করে হয়। আমার ছবি এ সব কিছুকে কাটিয়ে নিজেকে খুঁজে নেওয়ার গল্প বলবে।"
নারী চরিত্রদের কেন্দ্র করেই যে আবর্তিত হবে গল্প, তা ছবির নাম থেকেই স্পষ্ট। নারীকেন্দ্রিক ছবি মানেই ভারী ভারী সংলাপ থাকবে, চরিত্ররা গম্ভীর হয়ে কথা বলবে, এমনটা মোটেই মনে করেন না পরিচালক। তাই প্রধান চরিত্র ‘শ্রীমতী’ অর্থাৎ স্বস্তিকাকেও দেখা যাবে হালকা মেজাজে। সে বুদ্ধিমতী, তারও নিজস্ব মতামত আছে। কিন্তু জোর করে তা ফলাতে চায় না শ্রীমতী। নিজের মতো করেই নিজের কথা বলবে সে।
স্বস্তিকা ছাড়াও এই ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে তৃণা সাহা, বরখা বিস্ত সেনগুপ্ত এবং খেয়া চট্টোপাধ্যায়কে।
বাংলার সিংহভাগ মানুষের কাছে তৃণা এখন ‘গুনগুন’। ‘শ্রীমতী’তেও সে রকমই হাসিখুশি, স্বাধীনচেতা একটি মেয়ের চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। চরিত্রের নাম বৃষ্টি। তা হলে কি অর্জুনের ভাবনায় ‘গুনগুন’-এর ছায়া হয়ে উঠেছে বৃষ্টি? পরিচালক বললেন, “ধারাবাহিকে গুনগুন যেমন খুব বেশি হাসিখুশি, দিলখোলা স্বভাবের, আমার ছবির বৃষ্টি কিন্তু ততটাও সে রকম নয়। ও প্রাণোচ্ছ্বল, মিষ্টি।”
‘শ্রীমতী’র পোস্টার।
দীর্ঘ ৮ বছর ফের বাংলা ছবিতে অভিনয় করবেন বরখা বিস্ত সেনগুপ্ত। ২০১৩ সালে ‘ভিলেন’ ছবিতে শেষ দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তার আগে ‘দুই পৃথিবী’এবং ‘আমি সুভাষ বলছি’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এক বুদ্ধিমতী, আত্মবিশ্বাসী উদ্যোক্তা হিসেবে দেখা যাবে তাঁকে। বাংলা ছবিতে এ ধরনের চরিত্রে তাঁকে আগে দেখা না গেলেও, এই চরিত্রের জন্য সর্বপ্রথম তাঁর নামটাই মাথায় আসে পরিচালকের। অন্য দিকে, খেয়া চট্টোপাধ্যায়কে দেখা যাবে শ্রীমতীর বাড়ির কাজের মেয়ের চরিত্রে। তাঁর চরিত্রের সঙ্গে দর্শকরা ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘বাড়িওয়ালি’তে সুদীপ্তা চক্রবর্তীর ‘মালতী’র চরিত্রের মিল খুঁজে পেতে পারেন বলে মনে করেন পরিচালক।
নারীকেন্দ্রিক এই ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে থাকবেন সোহম চক্রবর্তীও। স্বস্তিকা অর্থাৎ শ্রীমতীর স্বামী অনিন্দ্যর চরিত্রে অভিনয় করবেন সোহম। ছবিতে শ্রীমতীর স্বামী, তাঁর চেয়ে বয়সে ছোট। মূলত সেই কারণেই সোহমকে বেছে নিয়েছিলেন অর্জুন। তাঁর কথায়, “অনেকেই স্বস্তিকা-সোহমের জুটি নিয়ে অবাক। কিন্তু সোহম খুবই ভাল একজন অভিনেতা। প্রথম বার দর্শক ওকে একদম অন্য রকম একটা চরিত্রে দেখবেন। গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে ওকে এই চরিত্রে কাস্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।”
টলিউডে একেবারেই নতুন অর্জুন। ৩টি ছবি তৈরি করেছেন পরিচালক। তার মধ্যে ২টি ছবিতেই মুখ্য ভূমিকায় স্বস্তিকা। নিন্দুকেরা বলেন, স্বস্তিকার সঙ্গে কাজ করা নাকি বেশ কঠিন। কিন্তু নবাগত অর্জুন কী বলছেন? তাঁর উত্তর, “এ রকম অনেকেই বলে থাকতে পারেন। তবে যাঁরা বলেন, একেবারেই ভুল বলেন। ভাল অভিনেতা হওয়ার সঙ্গেই স্বস্তিকাদি ভীষণ ভাল একজন মানুষ। স্বস্তিকাদির বাবা মারা যাওয়ার পর নিয়মভঙ্গের দিনও সন্ধে ৭টা অবধি শ্যুট করেছেন, যাতে প্রোডাকশনের কোনও অসুবিধা না হয়। কে এ রকম করতে পারে বলুন তো!”
অর্জুন জানান, শ্রীমতী আর স্বস্তিকা স্ক্রিনে মিলেমিলে একাকার। কারণ নিজের জীবনের সঙ্গে রিলের চরিত্রকে মিলিয়ে নিতে পেরেছেন স্বস্তিকা। ‘গুলদস্তা’র ডলির মতোই ‘ভারী জ্ঞান’ না দিয়েও অনেক কথা বলে যাবেন এই ছবিতেও। আপাতত ছবির পোস্টারে দেখা মিলেছে ‘শ্রীমতী’র। খুব শীঘ্রই বড় পর্দাতেও ধরা দেবে সে। ছবির সংগীতের দায়িত্বে আছেন সৌম্য রিত এবং প্রযোজক কান সিংহ সোধা।