পুনু সেন। ছবি সৌজন্য: সৌরদীপ রায়
প্রবীণ সহকারী পরিচালক ও সম্পাদক রমেশ সেন ওরফে পুনু সেনের জীবনাবসান হল। দীর্ঘ সময় ধরে সত্যজিৎ রায়ের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। গত বছর তাঁর স্ত্রীর প্রয়াণের পর থেকেই অবসাদে ভুগছিলেন শিল্পী। মঙ্গলবার ভোরে বার্ধক্যজনিত অসুখে মৃত্যু হয় তাঁর।
টালিগঞ্জে সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করা পুনু সেনের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের পরিচয় ‘পথের পাঁচালী’র সময়ে, সম্পাদক দুলাল দত্তের মাধ্যমে। সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু ‘নায়ক’ থেকে। ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’, মৃণাল সেনের ‘রাত-ভোর’, তরুণ মজুমদারের ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’-সহ অসংখ্য কালজয়ী বাংলা ছবিতে কাজ করেছেন। সত্যজিতের পরে অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন সন্দীপ রায়ের ইউনিটেও, হয়ে উঠেছিলেন রায় পরিবারেরই একজন। সন্দীপ রায়ের কথায়, ‘‘পুনুকাকু ছাড়া আমাদের ইউনিট অসম্পূর্ণ। ওঁর মতো এনার্জি, শত অসুবিধে অতিক্রম করেও কাজ করার অদম্য ডেডিকেশন বড় একটা দেখা যায় না।’’
পূর্ববঙ্গ থেকে আসা সুচিত্রা সেনের (তখন রমা সেন) অভিনয়ে জগতে পা রাখার নেপথ্যে গাইডেন্স ছিল তাঁর। সুচিত্রা তাঁকে ‘পুনুবাবু’ বলে সম্বোধন করতেন। বলেছিলেন, ‘আপনি ছবি করলে আমি তার নায়িকা হব’। ‘নায়ক’-এর সময়ে উত্তমকুমার তাঁকে ডেকে বলেছিলেন, ‘তোরা অ্যাসিসট্যান্টরা মিলে একটা ছবি কর। আমি যা নিই, তার অর্ধেক নিয়ে কাজ করব’। নানা আর্থিক কারণে শেষ পর্যন্ত অবশ্য সত্যজিৎকেই ‘চিড়িয়াখানা’ পরিচালনার ভার নিতে হয়েছিল। সেখানে ব্যোমকেশের হাতে পাইথনের বিখ্যাত দৃশ্যের শুটিং চলাকালীন সাপটি থাকত পুনু সেনেরই পকেটে! লোকেশন কিংবা কাস্টিংয়ের সন্ধানে সত্যজিতের অগাধ ভরসা ছিলেন পুনু। ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর আউটডোরে বারাণসীর ট্রেনের টিকিট কনফার্মড হয়ে যাওয়ার পরেও পাওয়া যাচ্ছিল না রুকুকে। শেষে রাস্তায় জিৎ বসুকে দেখে, তার পিছু নিয়ে সত্যজিতের সামনে হাজির করেছিলেন পুনু। দীর্ঘ সময় পরে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত তথ্যচিত্র ‘ফেলুদা: ফিফটি ইয়ার্স অব রে’জ় ডিটেকটিভ’-এ বারাণসীর অলিগলিতে ফের স্মৃতিচারণ করতে দেখা গিয়েছিল পুনু সেনকে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়া সত্ত্বেও কাজ করে গিয়েছেন। শেষ ছবি ‘প্রোফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো’। তাঁর জীবনাবসানে শোকের ছায়া রায় পরিবারে।