আরজি কর-কাণ্ডে সরব পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। গ্রাফিক : সনৎ সিংহ।
আরজি কর হাসপাতালের অন্দরে মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যু ঘিরে ফুঁসছে নেটপাড়া। সোমবার সকালেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ দু’টি পদ থেকেই ইস্তফা দিয়েছেন সন্দীপ ঘোষ। এ দিনই নিহত চিকিৎসকের বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘কী ভাবে মেরেছে! দ্রুত এর বিচার করতে হবে। আমরা ফাঁসি চাইব। তাই ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে তোলার কথা বলেছি। যাতে দ্রুত বিচার হয়।’’
মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় সমাজমাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। টলিপাড়ার অভিনেত্রীরা ইতিমধ্যেই পথে নামার বার্তা দিয়েছেন। পিছিয়ে নেই টলিউডের পুরুষরাও। পরিচালক থেকে অভিনেতা, অনেকেই শামিল এই প্রতিবাদে। কলকাতা শহরের বুকে এমন ঘটনায় তিনি রীতিমতো ক্ষুব্ধ বলেই জানান অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। এই শহরের নাগরিক হিসেবে কী ভাবছেন অভিনেতা, জানালেন আনন্দবাজার অনলাইনকে।
আরজি কর-কাণ্ডের বিচার এবং উপযুক্ত নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সোমবার থেকে জরুরি পরিষেবাও বন্ধ রাখছেন বলেই জানান তাঁরা। যদিও এখনও পর্যন্ত এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যদিও এই ঘটনার নেপথ্যে কেউ কেউ আবার রাজনীতির রংও দেখছেন। তবে রাজনীতির কথা শুনতে নারাজ পরমব্রত। যদিও তিনি মানছেন, এমন ঘটনা এর আগে কলকাতা শহরে তিনি কখনও দেখেননি। পরমব্রতের কথায়, “কলকাতা বরাবরই মহিলাদের জন্য সুরক্ষিত শহর, অন্তত আমার তাই মনে হয়। এই ধরনের ঘটনা দিল্লি, গুরুগ্রাম কিংবা মুম্বইয়ের মতো শহরে ঘটতে দেখেছি। কলকাতা সব সময় সব থেকে সুরক্ষিত শহর বলেই চিহ্নিত হয়েছে। তাই এই ঘটনার পর আমার শহরকে নিয়ে যে ধারণা বা ভাবনা ছিল, তা ভীষণ ভাবে আঘাত পেয়েছে। সেটা আমি মেনে নিতে পারছি না।’’ আরজি করের অন্দরে মহিলা চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধারের পর ৭২ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও মেলেনি অনেক প্রশ্নের উত্তর। সেই উত্তরগুলিই খুঁজছেন অভিনেতা। আবার এ কথাও সত্যি যে, তিনি দাবি করেছেন, প্রশাসনের পদক্ষেপে তিনি এখনও পর্যন্ত সন্তুষ্ট।
পরমব্রত বলেন, “প্রশাসন খুব তৎপরতার সঙ্গে ঘটনার সমাধান করার চেষ্টা করছে। আমি বিচার চাই। যে বা যারা অপরাধী, তারা যাতে আইনসম্মত ভাবে শাস্তি পায়। আসলে যখন এই ধরনের ঘটনা ঘটে, তখন মনে হয়, আমরা অপরাধীকে মেরে ফেলি। কিন্তু, সেটা ঠিক নয়। বিচারসম্মত উপায়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োজন। যাতে মানুষের আইন ব্যবস্থার উপর আস্থা থাকে।’’ গত শুক্রবার সকালে আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চার তলার সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয়েছিল পিজিটি চিকিৎসকের দেহ। তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই প্রসঙ্গে অভিনেতা বলেন, “আমি শুনেছি, বেশ কিছু মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন, কেন রাতে মেয়েটি ওই ঘরে গিয়েছিলেন। যাঁরা এ সব বলছেন, আমি অপরাধীর সঙ্গে তাঁদেরও শাস্তি চাই। তাঁরা কেন বলেছিলেন এই কথা? যদি বলেও থাকেন, তবে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে থাকার অধিকার তাঁদের আছে কি না, সেই বিচার হওয়া দরকার।”তবে পরমব্রত যখন এ কথা বলছেন, তত ক্ষণে ইস্তফা দিয়ে ফেলেছেন আরজি করের অধ্যক্ষ। সেই প্রসঙ্গে পরম বলেন, “উনি তো ইস্তফা দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। এত কিছুর পর ইস্তফা না দিলে বুঝতাম, মানুষই নন। তবে ওঁর করা মন্তব্যেরও বিচার প্রয়োজন।” রাতের রাস্তা এবং মহিলাদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গ উঠতেই খানিকটা মেজাজ হারালেন পরমব্রত। তিনি মনে করেন, আসলে নারীদের রাতে বেরোনোর সঙ্গে আরও বৃহৎ রাজনীতি জড়িত। সেই রাজনীতি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের রাজনীতি। পরমব্রতের কথায়, “একটি পুরুষ এক জন মেয়েকে যৌনলাঞ্ছনা করতে পারে। সেই জন্যই মেয়েরা রাতে যাতে বাইরে না বেরায়, তার উপর নজরদারি। রাতে যদি এক জন পুরুষ বাইরে বেরোতে পারেন, তবে এক জন মহিলাও পারেন। তাঁর সুরক্ষার দায়িত্ব শুধু প্রশাসন নয়, পুরুষ সমাজের উপর বর্তায়।’’
এই প্রসঙ্গে গণমাধ্যমের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন পরমব্রত। তিনি যেমন পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তেমনই গণমাধ্যমে কী ভাবে নারী-পুরুষের সম্পর্ককে দেখানো হচ্ছে, কোন ধরনের শব্দ গানে ব্যবহার করা হচ্ছে, সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। অভিনেতা বলেন, “আমি কোনও বিশেষ ছবি বা গানের নাম উল্লেখ করতে চাই না। তবে কী ধরনের গানে মহিলাদের কী ভাবে দেখানো হচ্ছে সেখান থেকে কিন্তু, এক ধরনের মনোবৃত্তি তৈরি হয়। সেখানেই আরও খারাপ লাগা তৈরি হচ্ছে। অন্য শহরে এই ধরনের ঘটনা ঘটলেও কলকাতা শহরে তেমন কিছু ঘটতে দেখিনি এর আগে। তাই কলকাতার নাগরিক হিসেবে আমি হতাশ।’’