গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
ইনস্টাগ্রামে শেষ পোস্ট করেছিলেন ঠিক দু’দিন আগে। টুইটারে শেষ পোস্ট ১৯ জুলাই। শকুন বাত্রার ছবির শুটের জন্য তিনি রয়েছেন গোয়ায়। অথচ তাঁকে নিয়েই সোমবার রাত থেকে উত্তাল গোটা দেশ।
দীপিকা পাড়ুকোন। বলিউডের মাদক যোগে যাঁর নাম জড়িয়ে গিয়েছে হঠাৎই। এর আগে বিভিন্ন সূত্র থেকে বারেবারেই জানা যাচ্ছিল জিজ্ঞাসাবাদের সময় মাদক যোগে ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির কিছু অভিনেতার নাম ‘ফাঁস’ করেছেন রিয়া। এনসিবি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে ওই সংস্থার পক্ষ থেকেই জানান হয় মাদক যোগে সারা আলি খান, শ্রদ্ধা কপূর এবং রাকুল প্রীতকে খুব শীঘ্রই সমন পাঠাবে তারা। কিন্তু তাই বলে বর্তমানে বলিউডের সবচেয়ে ‘মুল্যবান’ নায়িকার নামও যে জড়িয়ে যাবে, তা বোধহয় আন্দাজ করতে পারেনি ইন্ডাস্ট্রি।
ইতিমধ্যেই দীপিকার ম্যানেজার করিশ্মা প্রকাশকে সমন পাঠিয়ে দিয়েছে এনসিবি। করিশ্মা কাজ করেন ‘কওয়ান ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’তে। সেই সংস্থার সিইও ধ্রুব চিৎগোপেকরকেও আজই ডেকে পাঠিয়েছে এনসিবি। সূত্রের খবর, আজই এনসিবির দফতরে হাজিরা দিয়েছেন ধ্রুব। তবে করিশ্মা এনসিবি’র কাছে কিছু সময় চেয়েছেন।
আরও পড়ুন- ‘সুপার ড্রাগ’, রণবীরকে বলেছিলেন দীপিকা, ভাইরাল ছবি
কিন্তু যাকে নিয়ে এত হইচই, সেই দীপিকা কিন্তু এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি। মুখ খোলেননি তাঁর স্বামী রণবীর সিংহও। তবে তাঁর নাম জড়াতেই তেড়েফুড়ে টুইট বৃষ্টি শুরু করেছেন কঙ্গনা। কঙ্গনা এবং দীপিকার তরজা ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন নয়। দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনে সমর্থনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন দীপিকা। কেন্দ্রীয় সরকার তথা শাসকদল বিজেপি কিন্তু বিষয়টি ভাল ভাবে নেয়নি। তার কয়েক দিন পরেই দীপিকার ছবি ‘ছপক’ মুক্তির কথা ছিল। বিজেপির একাংশ বলেছিল, ছবির প্রমোশন করতেই দীপিকা ওখানে গিয়েছিলেন। দীপিকার জেএনইউ যাওয়ার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন 'বিজেপি ঘনিষ্ঠ' কঙ্গনাও।
এ ছাড়াও সুশান্তের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর নিজের অবসাদের কথা ইনস্টাগ্রামে লিখেছিলেন দীপিকা। তখনও তাঁকে কটাক্ষ করেছিলেন কঙ্গনা। ‘অবসাদের নামে ব্যবসা চালাচ্ছে’ এমন মন্তব্যও করতে শোনা গিয়েছিল তাঁকে।জেএনইউ থেকে বলিউডের ‘ডিপ্রেশন ইসু’... রাজনৈতিক থেকে ব্যক্তিগত...বারেবারেই এই দু’জনের বিরোধ নজরে এসেছে।
তাই মাদক কাণ্ডে দীপিকার নাম জড়াতেই তাঁকে একহাত নিয়েছেন কঙ্গনা। পাশপাশি আজ ‘কওয়ান ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’কে উদ্দেশ্য করে কঙ্গনা লেখেন, “ওই সংস্থার সহ প্রতিষ্ঠাতা অনির্বাণ এর আগেও অনেক মহিলাকে ধর্ষণ করেছে। অনেক দিন আগে একটি মেয়ে তাঁর মায়ের সঙ্গে ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে যায়। বাইরে মা’কে বসিয়ে রেখে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে অনির্বাণ। মা পুলিশে অভিযোগও জানিয়েছিলেন। মিডিয়া তা কভারও করেছিল। কিন্তু আচমকাই সব চুপ হয়ে যায়।’’
আরও পড়ুন- সুশান্ত-মাদক মামলায় এ বার কি দীপিকাকে ডাকছে এনসিবি?
শুধু কঙ্গনাই নন, অকালি দলের নেতা মনজিন্দর সিংহও আজ বলিউডের মাদকাসক্তি নিয়ে একের পর এক টুইট করতে থাকেন। ‘কওয়ান ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’র প্রতিষ্ঠাতা মধু মন্তেনার প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি লেখেন, “উড়তা পঞ্জাব বলে একটি ছবির প্রযোজক ছিলেন মধু। ওই ছবিতে দেখান হয়েছে পঞ্জাবে সবাই মাদকাসক্ত। পঞ্জাবকে বদনাম করার জন্যই এ সব করা হয়েছে। ছবির নাম ‘উড়তা পঞ্জাব’ না, হওয়া উচিত ছিল ‘উড়তা বলিউড’।’’
দীপিকার পাশপাশি কর্ণ জোহর, ভিকি কৌশল, শাহিদ কপূর, অর্জুন কপূরকে মাদক যোগে গ্রেফতারের জন্য সুর চড়ান তিনি।
শুধু কঙ্গনা বা অকালি দলের নেতাই নন, দীপিকার উপর নেমে আসা এই বজ্রাঘাতে নেটাগরিকদের বেশিরভাগই অভিনেত্রীর উপর ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই নেটাগরিকদের কাঠগড়ায় দীপিকা কার্যত ‘দোষী’।
এ বার প্রশ্ন হল মাদক যোগে দীপিকার নাম এল কী করে? ধারণা করা হচ্ছে প্রাক্তন ট্যালেন্ট ম্যানেজার জয়া সাহার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দীপিকার দিকে সন্দেহের নজর পড়ে এনসিবি’র। জয়া-রিয়ার মাদক যোগের কথা আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল। এই জয়াই আবার দীপিকার ম্যানেজার করিশ্মার খুব কাছের বন্ধু। ‘ডি’ এবং ‘কে’-র মাদক সংক্রান্ত যে চ্যাট সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে তা থেকে বলিউডের একাংশের অনুমান ওই ‘ডি’হলেন দীপিকা এবং ‘কে’ করিশ্মা। যদিও ওই অনুমানের সাপেক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ মেলেনি এখনও।
এখনও পর্যন্ত দীপিকার হয়ে মুখ খুলতে দেখা যায়নি ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর সহকর্মীদেরও। এনসিবি কর্তারা নিশ্চিত, জট খুলবে করিশ্মাকে জিজ্ঞাসাবাদের পরেই। সত্যিই কি তিনি দীপিকাকে গাঁজা এবং অন্যান্য মাদক সরবরাহ করতেন তা জানা যেতে পারে তার পরেই? আর দীপিকা? কী বা তাঁর প্রতিক্রিয়া? এনসিবি ডাকলে তিনি কি শুট ছেড়ে আসবেন মুম্বই? সহযোগিতা করবেন অনুসন্ধানে? কর্ণ-ভিকিরাও কি জড়িয়ে যাবেন মাদক কাণ্ডে? জানতে মুখিয়ে গোটা দেশ।