Anwesa Chakraborty

ভারী চেহারার জন্য ভেস্তে গিয়েছিল একাধিক সম্বন্ধ, এখন সেই মেয়েই ধারাবাহিকের প্রধান মুখ

লোকের চোখে তিনি ‘মোটা’! জীবনের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলা ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্র। আনন্দবাজার অনলাইনকে তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প শোনালেন অন্বেষা চক্রবর্তী।

Advertisement

অভিনন্দন দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২২ ১৭:৩৩
Share:

‘সোহাগ চাঁদ’ ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্রে অন্বেষা চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত

রুপোলি পর্দায় নায়িকাদের সঙ্গে অলিখিত নিয়মের মতোই জুড়ে যায় ‘ছিপছিপে’, ‘তন্বী’র মতো বিশেষণগুলি। সেখানে সোহাগ বলছে, ‘‘আমায় ৩৪জন পাত্র পক্ষ বাতিল করেছে...আমার ওজনের জন্য!’’ সোহাগকে কালার্স বাংলার নতুন ধারাবাহিক ‘সোহাগ চাঁদ’-এ দেখবেন দর্শক। আর পাঁচটা ধারাবাহিকের নায়িকাদের মতো নয় সোহাগ। সহজ কথায়, চরিত্রটি স্থূলকায়। আর স্রোতের বিপরীতে হেঁটে এই চরিত্রে অভিনয় করছেন অন্বেষা চক্রবর্তী।

Advertisement

কথা হচ্ছিল অন্বেষার সঙ্গে। ২০১৯ সালে ‘মিস প্লাস সাইজ ইন্ডিয়া’ সুন্দরী প্রতিযোগিতা জেতার পর নেট দুনিয়ায় কনটেন্ট তৈরি করতে শুরু করেন অন্বেষা। বিষয় নারী ক্ষমতায়ন। পাশাপাশি চলছিল সাংবাদিকতা। তার মাঝে হঠাৎ অভিনয়ের সুযোগ এল কী ভাবে? টলিপাড়ার নতুন এই অভিনেত্রী বললেন, ‘‘অনলাইনে আমার ভিডিওগুলো দেখার পরেই নির্মাতাদের তরফে অফার আসে। তার পর বেশ কয়েকটা অডিশন এবং লুক সেটের পর নির্বাচিত হই।’’

শুরু থেকেই অন্বেষার সফরটা সহজ ছিল না। তাঁর প্রথম স্বামী গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রয়াত হন। তার পর জীবনে আসে নতুন মোড়। আরও এক বার বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন অন্বেষা। বলছিলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমি যেখানে রয়েছি সেটা সন্দীপন (অন্বেষার স্বামী) পাশে না থাকলে সম্ভব হত না। এই সুযোগটা আসার পর ও আমার চেয়েও বেশি খুশি। ও আমাকে বলেছে, লোকের স্বপ্ন থাকে। কেউ সুন্দরী প্রতিযোগিতা বিজেতা বা কেউ হয়তো কোনও অভিনেত্রীকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখে। আমি নাকি ওর দুটো স্বপ্নই পূরণ করেছি।’’ কোথাও যেন ধারাবাহিকের প্রোমোর বার্তা মিশে যায় অন্বেষার ব্যক্তিজীবনে।

Advertisement

ছক ভাঙতেই অন্বেষার ধারাবাহিকে আসা। ছবি: সংগৃহীত

সোহাগ চরিত্রটার জন্য নিজেকে আলাদা ভাবে প্রস্তুত করতে হয়নি অন্বেষাকে। বলছিলেন, ‘‘আসলে সোহাগ ও আমার মধ্যে অনেকটাই মিল। তাই সংলাপগুলো নিজের মতো করে বলেছি মাত্র।’’ প্রসঙ্গত, জানালেন তাঁকেও নাকি জীবনে একাধিক বার ‘বডি শেমিং’-এর শিকার হতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে ‘কটু মন্তব্য’ও। আবার চেহারার জন্যই একাধিক বার বিয়ের সম্বন্ধও ভেঙেছে। সমাজে অগণিত মহিলা পথ চলতে অন্বেষার মতো অভিজ্ঞতার শিকার হন। তাঁদের প্রতি অন্বেষার পরামর্শ, ‘‘আমি নিজে মফস্‌সলের মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। তাই সেখানকার মহিলাদের লড়াইটা খুব কাছ থেকে দেখেছি। পরামর্শ নয়, শুধু বলব মন খারাপ করবেন না, স্বপ্ন দেখা বন্ধ করবেন না।’’

অন্বেষা কিন্তু ইদানীং সে ভাবে বাংলা ধারাবাহিক দেখেন না। তাঁর মতে, বাংলা ধারাবাহিকের প্রথাগত ‘শাশুড়ি-বউমার ঝগড়া’ তাঁর খুব একটা পছন্দ নয়। অন্বেষার কথায়, ‘‘কিন্তু আমি ‘ওগো বধূ সুন্দরী’, ‘তিথির অতিথি’র মতো ধারাবাহিক দেখেছি।’’ আসলে বাংলা ধারাবাহিকের ছক ভাঙতেই অন্বেষার ধারাবাহিকে আসা। বলছিলেন, ‘‘আমাদের আশপাশের সাধারণ মহিলাদের শরীর তো পর্দার ‘নায়িকা’সুলভ হয় না। আমরা প্রত্যেকেই আমাদের জীবনে নায়িকা। তাই আমার মনে হয় আজকে ধারাবাহিক বা সিনেমার মতো মাধ্যমে মহিলাদের, তাঁরা যেমন সে ভাবে তুলে ধরতে পারলে ভাল হয়। তা হলেই দর্শক চরিত্রটার সঙ্গে অনেক বেশি মিল খুঁজে পাবেন।’’

বিষয়ভাবনার সঙ্গে সাযুজ্যকে মাথায় রেখে জীবনের প্রথম ধারাবাহিকে সুযোগ। আগামী দিনে অভিনয়ের ক্ষেত্রে ‘সাইজ জ়িরো’র নিদান এলে? ‘‘ভবিষ্যতের কথা এখনই বলতে পারব না। তবে ওজন কমলেও আমার ব্যক্তিত্ব এতটুকু বদলাবে না। ওজনটা আমার কাছে একটা সংখ্যা মাত্র,’’ আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ে বারাকপুরের কন্যের কণ্ঠে। সুরিন্দর ফিল্মস প্রযোজিত ‘সোহাগ চাঁদ’-এর সম্প্রচার খুব শীঘ্রই শুরু হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement