Debshankar Halder

প্রেমিক যুবকের ভূমিকায় আমায় কি আর মানায়, প্রশ্ন দেবশঙ্করের! ‘বিল্ব’-এর পরিচালকের কী মত?

৫০তম শো হতে চলেছে ‘চাকদহ নাট্যজন’-এর ঐতিহ্যবাহী নাটক ‘বিল্বমঙ্গল কাব্য’-এর। নায়ক দেবশঙ্কর হালদার প্রেমিক যুবকের চরিত্রে দোলা দিয়ে যান দর্শকের হৃদয়ে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২৩ ১৮:৩৭
Share:

চরিত্রটির সঙ্গে মিলেমিশে গেলেও খুব বেশি দিন আর এই চরিত্রে অভিনয় করতে চান না দেবশঙ্কর। ছবি: সংগৃহীত।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নাটকও কি বৃদ্ধ হয়? চরিত্রের বয়স বাড়ে? ঐতিহ্যবাহী এবং জনপ্রিয় নাটক ‘বিল্বমঙ্গল কাব্য’-র ৫০তম শো উপলক্ষে সে কথাই মনে করিয়ে দিলেন দেবশঙ্কর হালদার। শিল্পীর মনে হয় অনেক বার তিনি অভিনয় করে ফেলেছেন যুবক বিল্ব-র চরিত্রে। তবে আরও অজস্র বার তাঁকে প্রেমিক হিসাবে দেখতে চান নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

গিরিশচন্দ্র ঘোষের ১৭৫ তম জন্মবর্ষে উজ্জ্বল নবনির্মাণ করেছিলেন গিরিশ-নাট্য ‘বিল্বমঙ্গল’-এর। ‘চাকদহ নাট্যজন’-এর প্রযোজনায় নাটকটির মঞ্চ রূপায়ণ ‘বিল্বমঙ্গল কাব্য’-এর প্রথম অভিনয় হয়েছিল গিরিশ মঞ্চে, ২০১৯ সালের ২৩ অগস্ট। অনেকটা পথ পেরিয়ে আগামী ২৭ মে এই নাটকের পঞ্চাশতম অভিনয়ও হতে চলেছে গিরিশ নামাঙ্কিত সেই মঞ্চেই। যেন সম্পূর্ণ হচ্ছে একটি বৃত্ত।

এই নাটক হয়ে উঠেছে আধুনিক ভাবনার অনুসারী, সমকালীনতার চিহ্নবাহী। ছবি: সংগৃহীত।

মূলত নাট্যকার হলেও এই নাটকের পরিচালনাও করেছেন উজ্জ্বল। মুখ্য ভূমিকায় দেবশঙ্কর হালদার। ভক্তিরসাশ্রিত মূল নাটকে ঈশ্বর অনুরাগের পথে বিল্বর সমর্পণের ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে অবশ্য বিল্ব আর দেহপসারিণী চিন্তামণির মিলন-আখ্যান লিখেছেন উজ্জ্বল। ঈশ্বরপ্রেমকে ছাপিয়ে যেখানে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে মানবপ্রেম। সেখানেই এই নাটক হয়ে উঠেছে আধুনিক ভাবনার অনুসারী, সমকালীনতার চিহ্নবাহী। ঐতিহ্য বাঁক নিয়েছে আধুনিকতায়।

Advertisement

বিশুদ্ধবাদীরা যে এই জীবনমুখিনতা নিয়ে ‘রে-রে’ করে ওঠেননি খুব একটা, তার প্রমাণ মিলল নাট্যকার-পরিচালক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের কথায়। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, ‘‘পরিচালক এবং নাট্যকার হিসাবে এই এই কাজটা করতে পেরে অত্যন্ত আহ্লাদিত। নাটকটা সর্বত্র খুবই আদৃত হয়েছে। ৫০তম পর্বে পৌঁছনো একটা খুব বড় ব্যাপার। আমরা যে আমাদের ঐতিহ্যশালী নাটককার গিরিশ ঘোষকে পুনঃনির্মাণ করতে পারলাম, মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারলাম এবং মানুষ যে সেই আধুনিক রূপটাকে গ্রহণ করলেন, এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কিছু নেই।’’

অনেকটা পথ পেরিয়ে আগামী ২৭ মে এই নাটকের পঞ্চাশতম অভিনয়  হতে চলেছে গিরিশ মঞ্চেই। ছবি: সংগৃহীত।

৫০তম শোয়ের আগে কী অনুভূতি ‘বিল্বমঙ্গল কাব্য’-এর নায়ক দেবশঙ্কর হালদারের?

অভিনেতা বললেন, ‘‘চাকদহ নাট্যজন কলকাতা-কেন্দ্রিক দল নয়, তবু কলকাতাতেও বিপুল জনপ্রিয়। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন প্রযোজনায় এত দিন ধরে অভিনয় করছি। মিলেমিশে গিয়েছি চরিত্রটির সঙ্গে। ‘বিল্বমঙ্গল কাব্য’ নাটকের ৫০-এ আমারও ভাল লাগছে। ৫০ মানেই যে জানান দেওয়া, ৭৫ কিংবা ১০০ হতে চলেছি!’’

তবে খুব বেশি দিন আর এই চরিত্রে অভিনয় করতে চান না দেবশঙ্কর। স্পষ্ট বললেন,‘‘৫০ মানেই রোগব্যাধির কথা মনে পড়ে। নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা এই বয়সের ক্ষেত্রে যেমন জীবনের অঙ্গ হয়ে ওঠে, তেমনই বিল্বমঙ্গল নাটকেরও হয়তো প্রয়োজন পড়বে। আমি বুড়ো হচ্ছি। প্রেমিক যুবকের চরিত্রে আমায় কি আর মানায়? নতুন কোনও যুবা এই জায়গা নিলে ভাল হয়। তাদের অভিনয়ের মধ্যে দিয়েই আমি অভিনয় করে যাব।’’

পাগলিনীর ভূমিকায় সঞ্জিতা মুখোপাধ্যায়ের পরিবর্তে অন্য কাউকে দেখতে চান না নাট্যকার-পরিচালক। ছবি: সংগৃহীত।

তবে তাঁর সরে যাওয়ার ইচ্ছের সঙ্গে একেবারেই সহমত নন পরিচালক উজ্জ্বল। তিনি বললেন, ‘‘ব্যক্তি দেবশঙ্করের বয়স নাটকের চরিত্রের বয়সের তুলনায় বেশি হলেও অভিনয় দক্ষতা দিয়ে যুবকের আবেগ যে ভাবে তিনি স্পর্শ করেছেন, তাতে দর্শকদের কাছে কোথাও বিষয়টা অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে না। চরিত্রের সত্যের মধ্যে ঢুকে পড়তে পারার ক্ষমতা দিয়েই তিনি তা সম্ভব করেছেন।’’ উজ্জ্বলের আশা, একশো শো হবে এই নাটকের। দেবশঙ্করই করবেন, অন্য কেউ নন। পাগলিনীর ভূমিকায় সঞ্জিতা মুখোপাধ্যায়ের পরিবর্তেও অন্য কাউকে দেখতে চান না নাট্যকার-পরিচালক।

গিরিশ-ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাবশত আরও কিছু নাটকের নবনির্মাণেও হাত দিতে চান উজ্জ্বল। নাটকটির সামগ্রিক পরিকল্পনায় আছেন চাকদহ নাট্যজনের কর্ণধার সুমন পাল। তাঁর কথায়, ‘‘এই নাটকটি ভালবাসার নাটক। কোভিড অতিমারির জন্য মাঝেমধ্যে ছেদ পড়লেও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এই নাটকের অভিনয় হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই। অতিমারি না থাকলে অনেক আগেই ৫০তম অভিনয় হতে পারত।’’

উজ্জ্বল এবং সুমন দু’জনেই জানালেন, নিজের অভিনীত চরিত্রটির বাইরেও দেবশঙ্কর অন্যান্য চরিত্রের নির্মাণে সৃজনশীল পরামর্শ দিয়েছেন, অভিনয় করেও দেখিয়েছেন। এই নাটকের শুরু থেকে অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে আছেন অভিনেতা। অতএব, তাঁর এখন কোথাও যাওয়া চলবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement