danny denzongpa

বাড়ির দারোয়ান করতে চাওয়া প্রযোজকের বাড়ির পাশেই বিলাসবহুল বাংলো বানান খলনায়ক ড্যানি

মোহনকুমার নামে এক প্রযোজক তো মুখের উপর বলেই বসেন, ড্যানি কোনওদিন নায়ক হতে পারবেন না। এমনকি, অপমানের মাত্রা আরও বাড়িয়ে সেই প্রযোজক আরও বলেন, ড্যানি যদি কোথাও কাজ না পান, তাঁর বাড়িতে দারোয়ানের চাকরি আছে!

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২০ ১৫:৩১
Share:
০১ ২২

শুরুতে প্রত্যাখ্যানই ছিল সঙ্গী। অভিনয়ের সুযোগ চাইলে শুনতে হত পরিচারক বা দারোয়ানের ভূমিকা ছাড়া অন্য কিছুতে তাঁকে মানাবে না। প্রত্যাখ্যাত সেই যুবকই পরে বদলে দিয়েছিলেন হিন্দি ছবির খলনায়কের চেনা সংজ্ঞা। তিনি ড্যানি ডেনজোংপা।

০২ ২২

সিকিমের ছেলে ড্যানির ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার। তাঁর পরিবারের কেউ আগে সেনাবাহিনীতে ছিলেন না। তাঁদের পারিবারিক ব্যবসা ছিল ঘোড়াপালনের।

Advertisement
০৩ ২২

সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল কলেজে ড্যানি ভর্তিও হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মায়ের আপত্তি ছিল ছেলের সিদ্ধান্তের। তিনি চাননি ছেলে যুদ্ধে অংশ নিক। মায়ের কথায় ড্যানি শৈল্পিক কিছু করার প্রতি আগ্রহী হন।

০৪ ২২

ড্যানি কিন্তু প্রথমে পুণের এফটিআইআই-তে সঙ্গীতশিক্ষার জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে ভর্তি করা হয় অভিনয়ের কোর্সে। যেখানে সঙ্গীতও একটি অংশ। কিন্তু সেখানকার দিনগুলোর স্মৃতি খুব সুখের ছিল না। বরং, প্রতি মুহূর্তে তাঁকে পড়তে হত বিদ্রূপের মুখে।

০৫ ২২

গ্যাংটকের বৌদ্ধ পরিবারের ছেলে ড্যানির জন্ম ১৯৪৮-এর ২৫ ফেব্রুয়ারি। তাঁর জন্মগত নাম শেরিং ফিন্টসো ডেনজংপা। এত বড় নাম উচ্চারণে সমস্যা হত সহপাঠীদের। এই নিয়ে এফটিআইআইয়ের বন্ধুদের হাসিঠাট্টা লেগেই থাকত। শেষে সহপাঠী জয়া ভাদুড়ির পরামর্শে নিজের নাম ‘ড্যানি’ করে নেন তিনি।

০৬ ২২

সহপাঠীদের মধ্যে জনপ্রিয় না হলেও ড্যানি ছিলেন এফটিআইআই-এর স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ছাত্র। তখন তাঁর ধারণা ছিল, কলেজে যখন স্বর্ণপদক পেয়েছেন, তখন বলিউডে সুযোগ পাওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র। কিন্তু বাস্তবে দেখলেন সম্পূর্ণ তাঁর বিপরীত ছবি।

০৭ ২২

ড্যানির চেহারা এবং তাঁর মুখের আদল প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াল মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিতে নায়ক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে। তবু চেষ্টা জারি রাখেন ড্যানি। কিন্তু সব জায়গাতেই তাঁর জন্য অপেক্ষা করে ছিল প্রত্যাখ্যান। মোহনকুমার নামে এক প্রযোজক তো মুখের উপর বলেই বসেন, ড্যানি কোনওদিন নায়ক হতে পারবেন না।

০৮ ২২

এমনকি, অপমানের মাত্রা আরও বাড়িয়ে সেই প্রযোজক আরও বলেন, ড্যানি যদি কোথাও কাজ না পান, তাঁর বাড়িতে দারোয়ানের চাকরি আছে! নিয়মিত এই অপমানের পাশাপাশি ড্যানির হতাশা আরও বেড়ে যাচ্ছিল যখন তাঁর সহপাঠী জয়া বচ্চন, আসরানিরা ছবিতে কাজের সুযোগ পেয়ে গেলেন। অথচ তিনি গোল্ড মেডেলিস্ট হয়েও কর্মহীন বসে থাকলেন।

০৯ ২২

কাজ খুঁজতে খুঁজতে ড্যানির আলাপ হয় প্রয়োজক বি আর ইশারার সঙ্গে। তিনি তাঁকে ‘জরুরত’ ছবিতে সুযোগ দেন। জয়া বচ্চনের কথায় গুলজার ড্যানিকে নেন তাঁর ‘মেরে অপনে’ ছবিতে। ‘মেরে অপনে’ মুক্তি পেয়েছিল ‘জরুরত’-এর আগেই।

১০ ২২

এফটিআইআই-এর ফাইনাল কোর্সের সময় ড্যানিদের পরীক্ষক ছিলেন বি আর চোপড়া। তাঁর কাছেই ড্যানি এ বার সাহায্য চান। ‘ধুঁধ’ ছবিতে ড্যানিকে নিলেন বি আর চোপড়া। শোনা যায়, এই চরিত্রটি প্রথমে অমিতাভ বচ্চনের করার কথা ছিল।

১১ ২২

কিন্তু ‘আনন্দ’ ছবি এসে যাওয়ায় তিনি খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে চাননি। তারপর শত্রঘ্ন সিংহের কাছে যায় সুযোগ। কিন্তু বি আর চোপড়ার পছন্দ ছিল না শত্রঘ্নকে। তিনি খলনায়কের চরিত্রে নেন ড্যানিকেই।

১২ ২২

‘ঢুনঢ’ ছবিতে ড্যানি অভিনীত ঠাকুর রঞ্জিত সিংহ চরিত্রটি দর্শকদের পছন্দ হয়। এর পর হিন্দি ছবির মূলস্রোতে ধীরে ধীরে নিয়মিত হয়ে ওঠেন ড্যানি। ‘খোটে সিক্কে’, ‘৩৬ ঘণ্টে’, ‘দেবতা’, ‘লহু কে দো রং’, ‘দ্য বার্নিং ট্রেন’, ‘ধর্মাত্মা’-র ছবি তাঁর কেরিয়ারে উল্লেখযোগ্য।

১৩ ২২

‘ধর্মাত্মা’ ছবির জন্য তিনি ‘শোলে’-এর গব্বর সিংহের চরিত্রে অভিনয় করতে পারেননি। পরে আমজাদ খান এই চরিত্রটিকে আইকনিক করে তোলেন। আমজাদের মতোই ড্যানিও বলিউডে খলনায়কের চরিত্রে একচেটিয়া হয়ে পড়েছিলেন। দীর্ঘ দিন একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে ড্যানির একঘেয়ে লাগছিল।

১৪ ২২

তাই অভিনয় থেকে কিছু দিন বিরতি নিয়ে ড্যানি একটি গল্প লিখলেন। সেই গল্প থেকে ছবি পরিচালনা করলেন। সেই হরর মুভির নাম ছিল ‘ফির ওহি রাত’। ছবির নায়ক ছিলেন রাজেশ খন্না। নায়িকার ভূমিকায় ছিলেন ড্যানির বান্ধবী কিম। ছবিটি জনপ্রিয় হয়েছিল। অভিনেতার পর এ বার পরিচালক হিসেবেও বলিউডে পরিচিত হলেন ড্যানি।

১৫ ২২

১৯৯০ সালে মুক্তি পায় ‘অগ্নিপথ’। এই ছবিতে ড্যানিকে দেখা যায় অন্য রকম খলনায়ক হিসেবে। বিলাসী এবং অভিজাত খলনায়ক হিসেবে তিনি টক্কর দেন নায়কের সঙ্গে। এই ছবি থেকেই ড্যানির হাত ধরে বলিউডের খলনায়ক চরিত্রে পাশ্চাত্যের ছোঁয়া আসে।

১৬ ২২

এই ছবি থেকেই ড্যানির একটি পুরনো ধারণাও ভেঙে যায়। তাঁর মনে হত, অমিতাভের সঙ্গে অভিনয় করলে তাঁকে কেউ দেখবে না। তাই এর আগে যত বার অমিতাভের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ এসেছে, তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

১৭ ২২

নব্বইয়ের দশকে অমিতাভ-ড্যানির ‘হম’ জনপ্রিয় হয়। তা ছাড়া এই সময়ে ‘সনম বেওয়াফা’, ‘ঘাতক’, ‘খুদা গওয়াহ’, ‘আজনবী’, ‘১৯৪২ এ লভ স্টোরি’, ‘ক্রান্তিবীর’, ‘বিজয়পথ’, ‘বরসাত’, ‘চায়না গেট’, ‘কোহরম’, ‘পুকার’, ‘চায়নাগেট’-সহ বেশ কিছু ছবিতে খলনায়কের ভূমিকায় বাজিমাত করেন ড্যানি।

১৮ ২২

অভিনয়ের পাশাপাশি ড্যানি খুব ভাল গানও করেন। ‘কালা সোনা’ ছবিতে তিনি গান করেছেন। সুপারহিট নেপালি ছবি ‘সাইনো’-তেও ড্যানির গান বিখ্যাত। পরে ‘বন্ধু’ নামে এই ছবির হিন্দি সংস্করণও হয়। দূরদর্শনে এই গল্প ‘অজনবী’ ধারাবাহিকে রূপান্তরিত হয়েছিল।

১৯ ২২

অভিনয়ের পাশাপাশি বর্ণময় ড্যানির ব্যক্তিগত জীবনও। চার বছর পরভিন ববির সঙ্গে লিভ ইন করার পরে ড্যানির জীবনে এসেছিলেন কিম। কিন্তু বিচ্ছেদের পরেও ড্যানির জীবনে হস্তক্ষেপ করতেন পরভিন। সেটা মেনে নিতে পারেননি কিম। ফলে ড্যানির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভেঙ‌ে যায়।

২০ ২২

তবে বিয়ের সময় ড্য়ানির পছন্দ ছিল ইন্ডাস্ট্রির বাইরে। তিনি বিয়ে করেছিলেন সিকিমের রাজপরিবারের মেয়েকে। স্ত্রী, দুই সন্তানের ঘেরাটোপে ড্য়‌ানি একজন আদর্শ ফ্যামিলিম্যান। তাঁর ছেলেও বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেছেন।

২১ ২২

ছবিতে অভিনয় খুব কমিয়ে দিয়েছেন ড্যানি। তিনি এখন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। বেশির ভাগ সময় কাটান সিকিমে নিজের বিলাসবহুল খামারবাড়িতে। মুম্বইয়ে আসেন শুধু শীতকালে।

২২ ২২

মুম্বইয়ে এলে ড্যানি থাকেন জুহুতে তাঁর প্রাসাদের মতো বাংলোয়। এই বাংলো তিনি বনিয়েছিলেন সেই প্রযোজকের বাড়ির পাশে, যিনি কোনও এক সময় বলেছিলেন, ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ না পেলে ড্যানি যেন তাঁর কাছে আসেন। তিনি ড্যানিকে বাড়িতে দারায়োনের কাজে বহাল করবেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement