কী কী সতর্কতা নিচ্ছেন টলি-পাড়ার বহুতলের বাসিন্দারা
কলকাতার টলি-পাড়ার বহুতলের বাসিন্দারা আজও ভোলেননি আমপানের (প্রকৃত উচ্চারণে ‘উমপুন’) ভয়াবহ ধ্বংসলীলা। এ বারে ইয়াসের প্রবেশ। সেই ঘূর্ণিঝড়ের আস্ফালন এখনও শুরু হয়নি। কিন্তু শহরজুড়ে থেকে থেকে বৃষ্টি এবং ইয়াসের গতিবৃদ্ধি ভাবিয়ে তুলেছে তাঁদের। এ বারে বিশেষ কী কী সতর্কতা নিচ্ছেন তাঁরা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার ডিজিটাল।
আনন্দপুরের ৪৪ তলার এক আবাসনে থাকেন পরিচালক অরিন্দম শীল। তাঁর প্রতিবেশী অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পায়েল সরকার। শিল্পীরা জানালেন, ইতিমধ্যেই বহুতলের কার্যকরী সমিতির তরফে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। ঘরের সমস্ত জানলা, দরজা বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। বৈদ্যুতিক যন্ত্রগুলি নিষ্ক্রিয় করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে হাঁটাচলা করায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সমস্ত গাড়ি যেন মাটির তলার গাড়িবারান্দায় রাখা হয়, সে দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে। সেগুলোই মেনে চলবেন বলে জানালেন টলি-পাড়ার বহুতলবাসী শিল্পীরা।
অরিন্দম শীলের কথায়, ‘‘ঝড় দেখতে বাইরে বেরিয়ে গেলাম, এ সব করলে আর চলবে না। গত বার আমপানের সময়ে অনেক ভুল করেছেন মানুষ। সেগুলো আর চলবে না।’’ তবে তিনি নিশ্চিত, তাঁদের আবাসন যে ভাবে বানানো হয়েছে, তাতে তা ঝড়ে খুব ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। গত বছরও হাওয়ায় ঘর দুলছিল তাঁদের। সেই অভিজ্ঞতা জানালেন পরিচালক। তবে তাঁর চিন্তা গরিব মানুষদের নিয়ে। যাঁদের টিনের চালের বাড়ি, তাঁরা যেন এই সময়ে নিরাপদ থাকেন, সেই প্রার্থনাই করছেন তিনি।
অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে তাঁর সমস্ত গাছপালা ঘরের ভিতরে নিয়ে এসেছেন। এতে বারান্দা বা জানলা থেকে গাছের টব উড়ে গিয়ে কারও মাথায় পড়ার ভয় কম। এই সময়গুলোতে তাঁর মনে হয়, বহুতলে না থেকে কোনও দোতলা বাড়িতে থাকলে ভয় কম লাগত। তবে তাঁর আমতলার দোতলা বাগানবাড়ি গত বছর রীতিমতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। রচনা বললেন, ‘‘জানলা বন্ধ রাখব। কিন্তু ভাগ্য খারাপ থাকলে কাচ ভেঙে পড়তে পারে। কেউ জানে না, কী হতে পারে। আমার বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা রয়েছেন বলে সব দিকে খেয়াল রাখছি।’’ কিন্তু তাঁর মাথাতেও দুশ্চিন্তা চলছে রাজ্যের দরিদ্র মানুষের জন্য।
সেই বহুতলেই থাকেন, অভিনেত্রী পায়েল সরকার। তিনি বললেন, “জানলা-দরজা বন্ধ করে রাখুন। কোনও কাচের জিনিস যাতে সামনে না থাকে, সেই দিকে নজর রাখুন। ঝড়ের সময় কোনও ভাবেই বাড়ির বাইরে যাবেন না। পারলে খাবার মজুত করে রাখুন।”
গত বছর আমপানের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল অভিনেতা অঙ্কুশ হাজরার বাড়ি। ঘরের মেঝে ভরে গিয়েছিল জলে। ঝড়ের দাপটে জানলার কাচ ভেঙে পড়েছিল। এমনকি, বাথরুমের ফলস সিলিংটুকুও রক্ষা পায়নি। হুড়মুড় করে খসে পড়েছিল চোখের সামনে। অঙ্কুশ যদিও তখন বহুতলে থাকতেন না। এখন মুকুন্দপুরের একটি আবাসনের ২০ তলায় থাকেন তিনি। ঝড় নিয়ে বেশ চিন্তিত অভিনেতা বললেন, ‘’২০ তলায় থাকার জন্য এ বারে বেশ দুশ্চিন্তা হচ্ছে। ঝড় কী করে বসবে, জানি না। চেষ্টা করব সাবধানে থাকার।’’ লকডাউন হয়ে যাওয়ায় ঝড় আটকানোর প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও তাঁর কাছে নেই।
কলকাতার আর এক বহুতলের ১৪ তলার বাসিন্দা অভিনেত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তী। ঝড়ের কথা উঠতেই শিউরে উঠলেন। তনুশ্রী বললেন, ‘‘গত বছর আমপানে আমার গল্ফগ্রিনের বাড়ি ৩ দিন জলবন্দি ছিল। সেই অভিজ্ঞতা মনে পড়লে এখনও কেঁপে উঠি।’’ অভিনেত্রী জানালেন, আবাসনের সবাই কম বেশি আতঙ্কিত। ইয়াস আসার আগেই সবাই গাড়ি ভিতরে ঢুকিয়ে রাখছেন।
ইতিমধ্যেই নিউ আলিপুরের বহুতলের ৩৬টি লিফ্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেই আবাসনের ৪ তলায় থাকেন অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। ঝড়ের প্রসঙ্গ উঠতেই ভাস্বর বললেন, ‘‘এই আবাসনের বাসিন্দারা একটু হলেও ইয়াস নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত। আমপান যে ভাবে এই বহুতলের গাছ, বাড়ি, গাড়ির ক্ষতি করেছিল, সেই আতঙ্কের স্মৃতি এখন সকলের মনে।’’
গত বছর আমপানে বহুতলে কেঁপে উঠেছিলেন টলি-পাড়ার তারকারা। সেই আতঙ্কের স্মৃতি নিয়ে ইয়াসের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তাঁরা।