সন্দীপ্তা সেন।
লকডাউনের দ্বিতীয় দিন। কাজের ব্যস্ততা, চারপাশের কোলাহল , সব ফিকে হয়ে গিয়েছে এক মারণ ভাইরাসের সন্ত্রাসে। এ বার করোনা মারমুখী। ঘরবন্দি হয়েও মনে জাঁকিয়ে বসেছে সংক্রমণের চিন্তা। এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে রাতের ঘুম।
এই কঠিন সময়ে নিজেকে ভাল রাখবেন কী ভাবে? করোনার প্রকোপ থেকে মানসিক স্বাস্থ্যকে রক্ষা করার উপায় জানতে আনন্দবাজার ডিজিটালের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল অভিনেত্রী-মনোবিদ সন্দীপ্তা সেনকে।
লকডাউনে নিজেকে ভাল রাখার উপায় বাতলে দিলেন তিনি।
রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে মনোবিদ্যা নিয়ে স্নাতকোত্তর করা সন্দীপ্তা বললেন, “২০২০ কেটে যাওয়ার পর অনেক মানুষ ভেবেছিলেন ২০২১-এ আস্তে আস্তে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। এই ভাবনা থেকেই অনেকে করোনাকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না। কিন্তু পরিস্থিতি আরও খারাপ হতেই তাঁরা একটা বড় ধাক্কা পেয়েছেন।”
তা হলে ঠিক কী করণীয়? সন্দীপ্তার উপদেশ, “খারাপ খবর হলে মন খারাপ হবে। প্রয়োজন হলে কাঁদবেন। কিন্তু নিজেকে বুঝিয়ে মন ভাল রাখতে হবে। না হলে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমবে।” নেতিবাচক খবর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে নিজেদের ভাল রাখার জিনিসগুলো ঝালিয়ে নিতে বলছেন সন্দীপ্তা। সকলের সঙ্গে সেগুলো ভাগ করার কথাও বলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “ আপনার যদি ডালগোনা কফি তৈরি করতে ইচ্ছা হয় তা হলে তাই করুন। ফেসবুকে সকলের সঙ্গে সেটা ভাগ করে নিন। এই মুহূর্তে নেটমাধ্যমে চারদিকে আমরা অক্সিজেন, ওষুধ, হাসপাতালে শয্যার সাহায্য চেয়ে নানা পোস্ট দেখি। সেটা নিশ্চয়ই একটা ভাল দিক। তবে একটু অন্য ধরণের পোস্টও মানুষের মন ভাল রাখতে সাহায্য করবে।”
মানসিক অবসাদ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে আর কী কী করা যেতে পারে? তালিকা তৈরি করলেন সন্দীপ্তা
১। যাঁরা করোনায় আক্রান্ত নন, তাঁরা অযথা ভয় পাবেন না। স্বাদ, গন্ধ পাচ্ছেন কি না, নিশ্বাস নিতে পারছেন কি না জাতীয় চিন্তাভাবনা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। এই ভয়গুলি সুস্থ শরীরকেও ব্যস্ত করে তোলে।
২। সাবধানতা অবলম্বন করুন। কিন্তু অকারণে ঘাবড়ে যাবেন না। এতে প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও কমে যাবে।
৩। খবরের চ্যালেন কম দেখুন। নেতিবাচক খবর, পোস্ট এড়িয়ে চলুন। ভাল ভাল ছবি দেখুন, ওয়েব সিরিজ দেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৪। পুরনো অভ্যাসগুলি ঝালিয়ে নিন। নাচ, গান, ছবি আঁকা, রান্না — যা-ই করতে ভালবাসেন, এই অবসরকে কাজের লাগিয়ে সেগুলি আবার শুরু করুন।
৫। প্রত্যেকদিন শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করতে পারেন।
৬। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে একটু আরামদায়ক গান শুনে নিতে পারেন। তাতে ঘুম ভাল আসে।
৭। পরিবারের মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান। গল্প করুন।
৮। বাড়িতে থাকলেও ডায়েট ঠিক রাখতে হবে।
৯। ফাঁকা সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে ফোন বা ভিডিয়ো কল করে কথা বলুন। তাতে মন সতেজ থাকবে।
১০। দিনে কিছুটা সময় নিজেকে দিন। নিজের যত্ন নিন। নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলুন। নিজেকে বোঝান যদি কখনও খারাপ পরিস্থিতি আসে, তা হলে আপনি সেটাও আপনি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
লকডাউনে সন্দীপ্তা রয়েছেন তাঁর মা-বাবার সঙ্গে। তবে সারাদিন একসঙ্গে সময় কাটালেও দিনের একটা নির্দিষ্ট অংশ তাঁরা নিজেদের মতো করে সম্পূর্ণ একা কাটান। অভিনেত্রীর মতে, পারস্পারিক বোঝাপড়া ঠিক রাখতে নিজেদের আলাদা করে সময় দেওয়াটা খুব জরুরি। নিজের উপদেশ মেনেই অবসরে নিজের শখগুলি ঝালিয়ে নিচ্ছেন অভিনেত্রী। পড়াশোনা করে অনেকটা সময় কাটছে তাঁর। একই সঙ্গে চলছে নাচের চর্চা। সন্দীপ্তার ইনস্টাগ্রামের দেওয়ালে চোখে পড়ে তাঁর একাধিক নাচের ভিডিয়ো। এই সময় মানুষের মন ভাল রাখতেই এমনটা করছেন অভিনেত্রী। তিনি বললেন, “অনেকেই বলবেন এই সময় কেন নাচছি? কিন্তু এ সব কথায় কান দিলে হবে না। মানুষের মন ভাল রাখতে এ ধরনের জিনিসও নেটমাধ্যমে পোস্ট করা দরকার।”
মানসিক স্থিতিশীলতা এবং সাহস দিয়ে করোনার সঙ্গে লড়াই করার উপদেশ দিচ্ছেন সন্দীপ্তা। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, অতিমারির অন্ধকার কাটিয়ে সুদিন আসবেই।