সঙ্গী গিটার পরমব্রতের
দেশে লকডাউন জারির এক মাস অতিক্রান্ত। গিটারমুখর হয়ে যে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের দিন কাটছে, তার ঝলক সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখতে পাচ্ছেন অভিনেতার অনুরাগীরা। তবে কোয়রান্টিন পর্ব তিনি একাই কাটাচ্ছেন। তাঁর বান্ধবী ইকা গত ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর পুরনো হাসপাতালে কাজের সূত্রে ফিরে গিয়েছেন নেদারল্যান্ডসে। জুনের গোড়াতেই তাঁর এ দেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, ইকার দেশে ফেরা অনিশ্চিত। ‘‘মার্চের শেষে আমার নেদারল্যান্ডস যাওয়ার কথা ছিল। একটি হিন্দি ছবির শুটিং ছিল লন্ডনে। সেটা করেই নেদারল্যান্ডস যেতাম। কিন্তু সবটাই ভেস্তে গেল।’’ প্রেমিকার বিরহেই কি গিটারে প্রাণ ঢালছেন অভিনেতা? ‘‘সকাল-বিকেল দু’বেলাই কথা হয়। ও ঠিক আছে,’’ এটুকুই জবাব তাঁর।
লকডাউন শুরুর প্রথম দশ-পনেরো দিন পরমব্রতের রুটিন এক রকম ছিল। নিজেই তার বর্ণনা দিলেন। ‘‘সকালে উঠে কোনও সিনেমা বা সিরিজ় দেখতাম। তার পরে আমার ওয়র্কআউট। লাঞ্চের পরে গিটার নিয়ে বসতাম। তার পরে কিছুটা সময় লেখালিখি। সেটার পরে আবার কিছু একটা দেখতাম।’’ তবে এখন আবার রোজনামচার ধারা গিয়েছে পাল্টে।
‘‘আমার বাড়ি যিনি আক্ষরিক অর্থে চালান, সেই রিঙ্কুদির চোদ্দো বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। ওর স্কুল-টিউশন এখন বন্ধ। আর ওর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতাও রয়েছে। তাই এখন আমার সকালের প্রথম কাজ, ওকে পড়ানো। মূলত ল্যাঙ্গোয়েজ, হিস্ট্রি পড়াই ওকে। অঙ্ক আমার কাছে না শেখাই ভাল। সর্বনাশ হয়ে যাবে,’’ অভিনেতার অকপট স্বীকারোক্তি।
আরও পড়ুন: ‘শামুক’ আর ঘরবন্দি মানুষের মধ্যে মিল খুঁজে দিলেন অপরাজিতা
এর পরে পরমব্রত নিজে পড়াশোনা করেন। ওয়র্কআউটের সময় অপরিবর্তিত রেখেছেন। এখন সিরিজ়-সিনেমা দেখার সময় হয়েছে দুপুরবেলা। তার পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত চলে তাঁর স্ক্রিপ্ট লেখালিখির সেশন। লকডাউনের অফুরান সময়ে এই স্কিলটিতে যথাসাধ্য শান দিচ্ছেন তিনি। ‘‘আমার কাছে স্ক্রিপ্ট লেখা খুব অস্বস্তিকর একটি প্রসেস ছিল। চা খাওয়া, সিগারেট খেতে ওঠা, এক বার পায়চারি করা... এই অস্থিরতা কাটিয়ে সুস্থির ভাবনাচিন্তা করার স্কিলটা শিখছি।’’ লেখালিখি শেষ হলে অভিনেতা কী করেন, সেটা তাঁর মর্জির উপরে। কখনও ফোনে ভিডিয়ো চ্যাট, কখনও বা আবার নতুন সিরিজ় দেখা। না হলে নিতান্ত অবসরে গা এলিয়ে দেওয়া।
কাজের ব্যস্ততায় যে সিনেমা-সিরিজ় দেখা হয়ে ওঠেনি, তা লকডাউনে পুষিয়ে নিয়েছেন পরমব্রত। প্রথমেই তিনি দেখে নিয়েছেন অস্কারে মনোনীত ‘প্যারাসাইট’, ‘জোজো র্যাবিট’, ‘ফোর্ড ভার্সাস ফেরারি’-এর মতো বিদেশি ছবিগুলি। সিরিজ়ের মধ্যে প্রথমে তিনি শুরু করেছিলেন ‘দ্য টেস্ট’ নামে একটি স্পোর্টস ডকুমেন্টারি দিয়ে। এটি ছিল ক্রিকেটের। তবে ফুটবলও পিছিয়ে নেই। ‘বিকামিং চ্যাম্পিয়নস’, ‘বার্সা ড্রিম’ নামে আরও দু’টি স্পোর্টস ডকু দেখেছেন। তার পরে লিস্টে রয়েছে ‘আউটল্যান্ডার’, ‘অসুর’, ‘আংরেজ়ি মিডিয়াম’-এর মতো সিরিজ় ও সিনেমা। এই সব দেখতে দেখতেই নেটফ্লিক্সে চলে এসেছিল ‘মানি হাইস্ট’-এর সিজ়ন ফোর। ‘‘আমি ‘মানি হাইস্ট’ অ্যাডিক্টেড। সিজ়ন ফোরের এক-একটা এপিসোড দু’বার করে দেখেছি,’’ বললেন অভিনেতা। ‘মানি হাইস্ট’-এর পাশাপাশি এই লকডাউনে দেখা তাঁর আরও একটি পছন্দের ছবি ‘সের্জিও’। ‘‘যতগুলো দেখলাম এর মধ্যে, এটা সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে,’’ বললেন অভিনেতা-পরিচালক।
সিনেমা-সিরিজ়ের পাশাপাশি পরমব্রত বেশ কিছু বইও পড়ে ফেলেছেন এই সুযোগে। যার মধ্যে রয়েছে, সেবাস্টিয়ান অর্টিজ়ের ‘গোস্টস অব ক্যালকাটা’, তহমিমা আনমের ‘আ গোল্ডেন এজ’, ‘বাংলার লৌকিক দেবদেবী’, ব্রাত্য বসুর ‘বেরিন তরঙ্গের নিটোল মুক্তাপ্রবাল’। নতুন পড়ার মাঝে আবার পুরনো বইয়ের পাতাও উল্টে দেখছেন তিনি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘প্রথম আলো’ও পড়তে শুরু করেছেন আবার নতুন করে।
রোজের বাজার, রান্নাবান্নার দায়িত্ব নেই পরমব্রতের। তবে এই সময়ে যাতে কোনও ভাবেই খাবার নষ্ট না হয় বা খাবারে বিলাসিতা না করা হয়, সে দিকে নজর রয়েছে অভিনেতার। বান্ধবী বিনা কোয়রান্টিন তিনি বেশ নিজের মতো করেই সাজিয়ে নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: পিতামহ ভীষ্মর পিছনে কুলার, মহাভারতের ছবি ভাইরাল হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)