Coronavirus

এ গোল্ডেন জুবিলি উদ্‌যাপনের নয়

বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির লকডাউনের পঞ্চাশ দিন ফিরে দেখল আনন্দ প্লাস এই মুহূর্তে সিনেমা এবং সিরিয়াল দুই ইন্ডাস্ট্রিই দিশেহারা।

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২০ ০০:৩২
Share:

ছবি সংগৃহীত

সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির কাছে পঞ্চাশ দিনের মাহাত্ম্য অনেক। ছবির নামের আগে ‘জুবিলি’ ছাপ পড়ার ঘটনা এখন অতীত। কোনও ছবি নিজের দমে বক্স অফিসে ৫০ দিনের বৈতরণী পার করলে, তা তারিফযোগ্য। কিন্তু এ কেমন পঞ্চাশ দিন? সিঙ্গল স্ক্রিন হলের গেটে তালা, অন্ধকারে মুখ ঢেকেছে মাল্টিপ্লেক্স। স্টুডিয়োগুলোর গেটে নিশ্চিন্তে শুয়ে পাড়ার নেড়িগুলো, জানে এ পথে কোনও গাড়ি এখন ঢুকবে না। লকডাউন যখন সবে ঘোষণা হয়েছে, তখনও এর কাঠিন্য বোঝা যায়নি। সময় যত গড়িয়েছে, প্রযোজক-অভিনেতা-ডেলি ওয়র্কারদের কপালের ভাঁজ তত গভীর হয়েছে।

Advertisement

এই মুহূর্তে সিনেমা এবং সিরিয়াল দুই ইন্ডাস্ট্রিই দিশেহারা। প্রযোজকদের চিন্তা কবে সিনেমা হল খুলবে, দর্শক আসবেন এবং তাঁরা বিনিয়োগের টাকা ঘরে তুলতে পারবেন। অভিনেতা, টেকনিশিয়ানরা লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন শোনার অপেক্ষায়। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা আগাম ভাবা যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে দুর্গাপুজোর আগে সিনেমা হল খোলার সম্ভাবনা নেই। বলিউড তাকিয়ে দীপাবলির দিকে। শীতের মরসুমে স্ক্রিন দখলের জোরদার লড়াই চলবে টলি-বলি মিলিয়ে। রিলিজ়ের জন্য কেউ কাউকে এমনিই জমি ছাড়েন না। এই পরিস্থিতিতে তো ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’র লড়াইয়ে শামিল সকলে। কিন্তু পুজো বা শীতের রিলিজ়, সবটাই ভাবনায়। যা বাস্তবায়িত হবে কি না, কেউ জানে না। তত দিনে রাজ্যের ২৯৬টি সিঙ্গল স্ক্রিন হলের মধ্যে আরও কিছুতে যে তালা পড়বে, তা নিশ্চিত।

টলিউডে অভিনেতা মানেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব বা জিৎ নন। স্টুডিয়োপাড়ায় দিনভিত্তিক ৫০০-৬০০ টাকা পারিশ্রমিকে কাজ করেন এমন বহু শিল্পী আছেন। শুটিং বন্ধ মানে তাঁদের পেটে টান। ফান্ড জোগাড় করে তাঁদের টাকা দেওয়ার বন্দোবস্ত হলেও, সে আর কত দিন? আর্টিস্ট ফোরাম ৬০০ জন মতো শিল্পীকে ২০০০ টাকা করে দিয়েছে এপ্রিল মাসে। দু’হাজার টাকায় সংসার চলে? অভাবী শিল্পীর তালিকা ক্রমশ বাড়ছে। ফোরাম যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে। একই অবস্থা টেকনিশিয়ানদের। মেকআপ আর্টিস্ট, ড্রেসার, লাইট, ট্রলি সেটার... এঁরা একেবারে কোণঠাসা। কাজ ছাড়া কত দিন ফান্ডের ভরসায় থাকবেন এঁরা? তার উপরে শর্ট ফিল্ম, মিউজ়িক ভিডিয়োর ট্রেন্ড আতঙ্ক আরও বাড়াচ্ছে। মোবাইল ফোনে ঘরে বসে শুটিং, ল্যাপটপে এডিটিং... সিঁদুরে মেঘ দেখছেন টেকনিশিয়ানরা।

Advertisement

আরও পড়ুন: ভার্চুয়ালি শুটিংয়ের অভিজ্ঞতাও অন্য রকম

এর মধ্যে একটি আশার কথা শোনা গিয়েছে মঙ্গলবার। কনটেনমেন্ট এলাকার বাইরে পোস্ট প্রোডাকশন স্টুডিয়ো খোলার অনুমতি মিলেছে। যে সব ওয়েব ফিল্ম, সিরিজ় পোস্ট প্রোডাকশনের জন্য আটকে ছিল, সেগুলো এখন হবে। তবে সোজা ভাষায় বললে, এটা সাময়িক। শুটিং শুরু না হলে এবং সিনেমার মুক্তির দিন ঠিক না হলে, পোস্ট প্রোডাকশন স্টুডিয়ো খোলা রাখা অর্থহীন। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুটিং হবে না বলিউডে। টালিগঞ্জের ক্ষেত্রে তেমন নির্দেশিকা না থাকলেও সকলে ওই সেপ্টেম্বরকেই মাপকাঠি ধরছেন। ফ্লোর খুললে হয়তো শুধু সিরিয়ালের শুটিংই হবে। সিনেমার ক্ষেত্রে কোনও প্রযোজক এ বছর নতুন করে বিনিয়োগ করবেন বলে মনে হয় না। ভাঁড়ারে মজুত ছবি রিলিজ়ের দিকেই সকলের নজর। আর শুটিং বিধি নিয়ে নানা নির্দেশিকা ঘুরলেও কোনওটিই চিকিৎসক ও সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত নয়।

একমাত্র ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোই এই দুঃসময়ে লাভের মুখ দেখেছে। বাংলায় উল্লেখযোগ্য ওটিটি বলতে ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের হইচই। গত দু’মাসে তাদের সাবস্ক্রিপশন বেড়েছে। তবে সার্বিক ভাবে দর্শকের ওটিটি নির্ভরতা কিন্তু প্রযোজক-হল মালিকদের চাপেই রাখছে। চাপে চ্যানেলগুলোও। নতুন টেলিকাস্ট করতে না পারলে রেভিনিউ আসবে না। শোনা গিয়েছে, একটি চ্যানেল তাদের চারটি শো বন্ধ করছে। অন্যান্য চ্যানেলও ধারাবাহিকের বাজেট কমাতে বদ্ধপরিকর।

দুঃসময় আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়। আগামীর রূপরেখার দিশা দেখায়। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। লড়াইয়ে টিকে থাকলে হলে ঘুঁটি সাজাতে হবে পরিস্থিতি অনুযায়ী।

আরও পড়ুন: মোদীর ভাষণে বলিউডের ক্ষোভ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement