করিনা (বাঁ দিকে উপরে), দিল্লির বাড়িতে সোনম ও আনন্দ (বাঁ দিকে নীচে), দীপিকা (ডান দিকে)
গত তিন মাসে নিজের বাড়ির কোণের মতো যেন চেনা হয়ে গিয়েছে কর্ণ জোহরের ওয়ার্ড্রোব, অনুষ্কা শর্মার বাড়ির ‘সানশাইন স্পট’...
আশি-নব্বইয়ের দশকে বলিউড তারকাদের অন্দরকাহিনি জানার অন্যতম পথ ছিল ফিল্মি ম্যাগাজ়িন, ট্যাবলয়েড। যে তারকা যত বেশি আড়ালে থাকতেন, তাঁকে নিয়ে জানার আগ্রহ অনুরাগীদের ততটাই বেশি। সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষত, ইনস্টাগ্রাম আসার পরে সেই ধারণা ভেঙে গিয়েছে। ইনস্টাগ্রামে না থাকা মানে দর্শকের স্মৃতিতে সেই তারকার স্থান অনেক নীচে। কারণ হাতে ছবি না থাকলেও, সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতেই খবরে থাকা যায়।
গত তিন মাসে করোনাভাইরাস ও তার জেরে লকডাউনের কারণে বন্ধ শুটিং, মেলামেশা, প্রিমিয়ার, পার্টি। ‘হ্যাশট্যাগ থ্রোব্যাক’-এর (পুরনো ছবি) ভরসায় কি আর মাসের পর মাস কাটানো যায়? তবে উপায়? দর্শক ও সেলেবের মধ্যকার অদৃশ্য ব্যবধানটুকু ঘুচিয়ে দিয়েছেন বলিউডের প্রথম সারির তারকারা। হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট থেকে মুখে মাস্ক লাগানো ছবি, বাসন মাজা থেকে রান্নাবান্না... ঘরবন্দি অবস্থায় সাধারণ মানুষ যা যা করেছেন, সেলেবরাও সেই কাজের ফিরিস্তি দিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। অবশ্য অনুরাগীদের ফিডব্যাক ভাল বলেই, একটি ছবিতেই তাঁরা থেমে যাননি। ব্যক্তিজীবন দেখিয়ে ফলোয়ার বাড়লে লক্ষ্মীলাভের পথও সুগম। তাই ব্যবসায়িক কারণেও এই ট্রেন্ড বাড়ছে। গরমে রূপচর্চার জন্য করিনা কপূর খান বেছে নিয়েছেন অরেঞ্জ ফেস মাস্ক, দীপিকা পাড়ুকোন আবার সিলভার। নো মেকআপ লুকের ট্রেন্ড অনেক দিনের। তবে প্রথম সারির অভিনেত্রীরাও যখন ফেস মাস্ক লাগানো ছবি পোস্ট করেন, তা ঠাহর করতে হয় বইকি! পাশাপাশি চলেছে করিনার ‘কাফতান’ সিরিজ়।
আরও পড়ুন: চিনা অ্যাপ টিকটককে বিদায় দিয়ে দুই তারকা সাংসদ মিমি-নুসরত কী বললেন?
বাসন মাজা, ঘর ঝাঁট দিয়ে লকডাউনে আগেভাগেই স্লট বুক করে নিয়েছিলেন ক্যাটরিনা কাইফ। জায়গা ছাড়েননি দীপিকাকে। মজার ছলে সেই অভিযোগ পোস্ট করেছিলেন দীপিকা। এঁদের খুনসুটি যদি নজর কাড়ে, তবে অনুষ্কা শর্মা ও আলিয়া ভট্টের বন্ধুত্ব পিছিয়ে নেই। অনুষ্কার বাড়ির ‘সানশাইন স্পট’ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে আলিয়াও নিজের বাড়িতে ফোটোজেনিক কোণ খুঁজে পেয়েছিলেন।
আবার কর্ণ জোহর তো নিজেই লাইমলাইটের কেন্দ্রে। তাই ইনস্টা-ফলোয়ারদের তাঁর পছন্দের ওয়ার্ড্রোব দেখানোর জন্য রুহি-যশের বেশির ভাগ ভিডিয়ো ওই জায়গাতেই শুট করেছেন। বরুণ ধওয়ন, আলিয়া ভট্ট লকডাউনে কর্ণের কাছে নেই। তাতে অবশ্য গ্ল্যামারে ঘাটতি পড়েনি। একরত্তি রুহি-যশ আর বৃদ্ধা মা হিরু জোহরকে দিয়েই তিনি শুট করেছেন তাঁর ‘টুডলস’ (স্বল্প দৈর্ঘ্যের ইনস্টা-ভিডিয়ো)। দিল্লির শ্বশুরবাড়ির জমকালো বেডরুম, কিচেন, গার্ডেনের ছবি পোস্ট করেছিলেন সোনম কপূর আহুজা। তারকাদের বেডরুম এখন আর কল্পনা করতে হয় না। তারকারাই তা দেখিয়ে দেন!
তবে এত বৈচিত্রের মধ্যে মাস্টারস্ট্রোক কিন্তু দিয়েছেন দীপিকাই। হোয়াটসঅ্যাপে ফ্যামিলি গ্রুপ চ্যাটের একটি স্ক্রিনশট পোস্ট করেছিলেন তিনি। তা দেখেই অনুরাগীরা জানতে পারলেন, দীপিকার ফোনে তাঁর ‘হাজ়ব্যান্ড’-এর নম্বর সেভ করা ‘হ্যান্ডসাম’ নামে।
ভাল লাগা, জৌলুস যেমন আছে, আছে অভাব-অভিযোগও। তাপসী পান্নু সম্প্রতি পোস্ট করেছিলেন তাঁর বাড়ির ইলেকট্রিক বিল। অস্বাভাবিক বেশি বিল আসায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। লকডাউন ছাড়া এই পোস্ট কি দেখা যেত?
তবে বাঁধ ভাঙার খেসারতও দিতে হচ্ছে বলিউড সেলেবদের। একটি মৃত্যুর কারণে প্রশ্ন উঠেছে তাঁদের দৈনন্দিন সাধারণ পোস্ট নিয়েও। আসলে তারকারা ভুলে যান যে, বাঁধ ভাঙলে বান আসবেই...