ব্রাত্য বসু।
ডায়েরি লেখায় মন দিলেন লকডাউনে গৃহবন্দি ব্রাত্য বসু
সকাল ৯টা
ঘুম থেকে উঠে চা খেলাম। আমি গৃহবন্দি। সকলের এখন সাবধানে থাকা ভাল। কারণ মনুষ্য প্রজাতিতে একশো-দেড়শো বছর পরে এমন সময় আসে। মনে পড়ছে ‘স্যাপিয়েন্স’-এর লেখক হারারির কথা। আমাদের পূর্বপুরুষদের বর্তমান অবস্থায় আসার বিভিন্ন ঘটনাকে যিনি চমৎকার ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর বিশ্লেষণ অন্যান্য বিবর্তনবাদের বইয়ের থেকে একেবারেই আলাদা। তিনিও বলেছেন, সাবধানতা ছাড়া এ রকম সময়ে আর কোনও পথ থাকে না। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষকে বেরতেও হবে। তাই বলে এমনি বেরনোর প্রশ্ন ওঠে না আর।
এখন তো বাড়িতে খবরের কাগজ আসছে না। অনলাইনে খবর পড়লাম। করোনার সময়ে এই নতুন অভ্যেস তৈরি হয়েছে। রাত জেগে অনেক লেখার কাজ চলছে, তাই দেরি করে উঠছি। আজ যেমন সকাল ৯টায় ঘুম থেকে উঠলাম। ছ’দিনে তিনটে বড় লেখা শেষ হল। এ বার বই পড়ব। মারিও পুজো-র ‘দ্য লাস্ট ডন’ পড়ছি এখন... এ বার টানা দু’ঘণ্টা পড়া।
দুপুর ১২টা
বেশি ক্ষণ বই পড়তেও পারছি না। লেখার চাপ আছে এখন। তার মধ্যেই আমার অঞ্চলের অবস্থা, কার কোথায় এই মুহূর্তে কী দরকার? সেই বুঝে খাবার পৌঁছনো হল কি না, এই পুরো কাজটাও ফোনে ফোনে সারতে হচ্ছে। আমার এলাকায় এখনও কোনও সংক্রমণের খবর নেই। এ বার যাই, লিখতে বসতে হবে।
দুপুর ১টা
দেখছি পৌলমী সারাক্ষণ টিভি দেখছে। খবর শুনছে আর প্যানিক করছে। আমি ওর মতো করছি না। মাঝেমধ্যে আমার সঙ্গে সিনেমাও দেখছে।
দুপুর ২টো
এ বার মধ্যাহ্নভোজ। মাঝখানে বেশ কিছু দিন ভাত খাচ্ছিলাম না। নানা রকম নিয়মের মধ্যে ছিলাম। এখন ও সব বন্ধ। ভাত ডাল মাছের ঝোল খাচ্ছি। খাওয়ার পর সিনেমা। দুপুরবেলা সিনেমার জন্য রাখছি। বেশ অনেকগুলো কাজ দেখা হল। সুজান বিয়ারের ‘সেরিনা’ দেখলাম, ‘ম্যানচেস্টার বাই সি’ দেখলাম। ‘শুটার’ বলে সিরিজ দেখলাম। নেটফ্লিকস-এ ‘দ্য অকুপেন্ট’ দেখলাম। সিনেমা দেখতে দেখতেই ৮টা বেজে গেল। উফ! এখনও অনেক লেখা বাকি।
রাত ৯টা
এ বার লিখতে বসব। লিখতে লিখতে মাঝরাত। মাঝে হাল্কা খাওয়া। চারদিক নিঝুম। চারপাশ দেখে মনে হচ্ছে মানুষ ভয় পেয়েছে। এই ভয় মৃত্যুকে ঘিরে। মৃত্যু এক দিকে ভয়ের, অন্য দিকে স্বাভাবিক! যাঁরা মৃত্যুর কথা ভাবছে না, ভয় পাচ্ছে না, রাস্তায় বেরচ্ছে, তাদের দেখে আমার মহাভারতের যুধিষ্ঠিরের কথা মনে হচ্ছে। ধর্মকে বলেছিল যুধিষ্ঠির। কী বলেছিল? প্রতি মুহূর্তে মানুষ দেখছে মানুষ মরছে, তাও তারা নিজেদের অমর ভাবছে। আশ্চর্য!