মেয়েরা নারী চরিত্রে অভিনয়ে আসার পর থেকেই ক্রমশ অভিনয় দুনিয়ায় ফিকে হচ্ছিলেন মঞ্চ-কাঁপানো ‘চপল রানি’। নিজেকেও আর বদলে নিতে পারেননি। বহু বছর বাদে সেই চপল ভাদুড়িই আবার ফিরতে চলেছেন মঞ্চে। ২২ এপ্রিল রাজীব বর্ধনের ‘অর্ধেক আকাশ’ নাটকে ফের নারীর বেশে তিনি।
মঞ্চে ফিরছেন চপল ভাদুড়ি।
রূপ নয়, গুণই তাঁর সঙ্গে শত্রুতা করেছে। পুরুষ হয়েও তিনি বহিরাঙ্গে নারী। একের পর এক নাটক, যাত্রা সহস্র রজনী পার হয়েছে তাঁর এই বিশেষ গুণের জোরে। তখন তিনি ‘চপল রানি’। মেয়েরা নারী চরিত্রে অভিনয়ে আসার পর থেকেই ক্রমশ অভিনয় দুনিয়ায় ফিকে হচ্ছিলেন। নিজেকেও আর বদলে নিতে পারেননি। বহু বছর বাদে সেই চপল ভাদুড়িই আবার ফিরতে চলেছেন মঞ্চে। ২২ এপ্রিল রাজীব বর্ধনের ‘অর্ধেক আকাশ’ নাটকে ফের নারীর বেশে তিনি। থাকছেন পৌলমী বসুও। তাঁকে দেখেও তাক লাগবে নাট্যপ্রেমীদের। এই প্রথম তিনি শাস্ত্রীয় নাচের সাজপোশাকে! নৃত্যগুরুর ভূমিকায়।
কী ভাবে দুই অসম্ভবকে সম্ভব করলেন রাজীব? কয়েক যুগ পরে আবার চপলরানি কী রূপে আসছেন দর্শকদের সামনে? পরিচালকের কথায়, ‘‘নাটক ‘অর্ধেক আকাশ’-এর ভিতরে আরও একটি নাটক রয়েছে। যাকে বলে ত্রাভেস্তি। নাটকে নারীর ভূমিকায় পুরুষ এবং পুরুষের ভূমিকায় নারীরা অভিনয় করবেন। যেটা চপল ভাদুড়ি করতেন। ধীরে ধীরে সেই জায়গায় আসতে থাকেন নারীরা। ফলে, কাজ হারান চপল এবং তাঁর মতো অন্য অভিনেতারা। তাঁদের পরিণতি কী? এটিই আমার নাটকের মূল বিষয়।’’ এই নাটকে চপল রানি নিজের ভূমিকাতেই অভিনয় করবেন। তাঁর বিখ্যাত যাত্রাপালা ‘মনসামঙ্গল’-এর একটি দৃশ্য নাটকে থাকবে। সেখানে তিনি ‘সনকা’।
মাত্র একটি দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য রাজি হলেন চপল রানি? রাজীবের কথায়, বৃদ্ধ চপল রানি অসুস্থও। শুরুতে একটি দৃশ্য অভিনয় করতেও রাজি হচ্ছিলেন না। দীর্ঘদিনের জানাশোনা। তাই পরে নিজের চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হন অভিনেতা। প্রতি দিন মহড়ায় আসার সামর্থ্য নেই। বৃদ্ধাবাসে থেকেই নিজের অংশের মহড়া দিয়েছেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে মহড়ায় অংশ নিয়েছেন যাত্রাপালা দৃশ্যের ‘বেহুলা’ চরিত্রাভিনেতা। তবে নাটকের দিন সকাল থেকে সবার সঙ্গে মহড়া দেবেন চপল। সন্ধে ৬টায় অভিনয়।
পোস্টারে ‘চপল রানি’ ও পৌলমী বসু।
এই প্রথম কোনও নাটকে পৌলমী নৃত্যশিল্পী। বিষয়টি জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল তাঁর সঙ্গে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কন্যার কথায়, ‘‘আমার নাটক নয়। আমার পরিচালনাও নয়। রাজীব বর্ধনের পরিচালনায় এক জন নৃত্যগুরুর ভূমিকায় অভিনয় করছি। তাই এই বিশেষ সাজ।’’ এই ধরনের চরিত্রে অভিনয়ে রাজি হওয়ার কারণও জানিয়েছেন তিনি। পৌলমীর কথায়, ‘‘রাজীব এবং যাদবপুর মন্থন প্রযোজনা আমায় এই বিশেষ চরিত্রে অভিনয়ের অনুরোধ জানায়। এর আগে এই ধরনের ভূমিকায় অভিনয় করা হয়নি। তাই রাজি হয়েছি।’’
নৃত্যগুরু হয়ে উঠতে আলাদা কোনও অভ্যাস করেননি পৌলমী। রাজীবের কথায়, ‘‘২০১৬-এ আমাদের নাটক ‘আগুন পাখি’তে দিদির প্রথম অভিনয়। খুব ভাল ভরতনাট্যম জানেন। ওঁকে ভেবেই এই বিশেষ চরিত্র তৈরি। আমি নিজে ওঁর কাছে নাচের তালিম নিয়েছি। আজ পর্যন্ত কেউ পৌলমীদিকে নাচের পোশাকে এবং নৃত্যগুরুর ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখেননি। আশা করি, চপল ভাদুড়ি এবং পৌলমী বসুর অভিনয় নাটকে বিশেষ মাত্রা যোগ করবে।’’