বসন্ত এসে গেছে

এই গানটাই তাঁর গায়িকা জীবনে বসন্তের আমেজ এনেছে। লগ্নজিতা চক্রবর্তী অবশ্য একমত নন। বললেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়-কেএই গানটাই তাঁর গায়িকা জীবনে বসন্তের আমেজ এনেছে। লগ্নজিতা চক্রবর্তী অবশ্য একমত নন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০১
Share:

পিঙ্ক জ্যাকেট, স্কুটি থেকে নেমে এলেন তেইশের মেয়ে। বসন্ত তা হলে স্কুটিতে আসে?

Advertisement

চুল ছোট করে কাটা। এই শীতেই দু’-দু’টো জ্যাকেট চড়িয়েছেন কলকাতার বসন্তকন্যা। এখন তো গলার দিকে বিশেষ নজর দিতে হচ্ছে!

লগ্নজিতা চক্রবর্তী। বসন্তের দরজা এখন তাঁর গান দিয়েই খুলছে।

Advertisement

বাবার উৎসাহে কলকাতার রাস্তায় স্কুটি বা গাড়ি চালানো তাঁর ছোটবেলার অভ্যেস। থেকে থেকেই মিষ্টি হাসেন লগ্নজিতা। হাসলে গালে টোল পড়ে সেন্ট জেভিয়ার্সের মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পাশ করা তরুণীর। অনুপমও তো ‘বসন্ত এসে গেছে’ গেয়েছেন! লগ্নজিতার প্রিয় কোনটা?

প্রশ্নটা আসতেই বেশ খানিকক্ষণ চুপ করে রইলেন লগ্নজিতা। তার পর বললেন, “অনুপমদার গানটা তো ছবিতে নেই। তাই ওটার সঙ্গে কোনও তুলনা চলে না। তবে জনপ্রিয়তার নিরিখে তুলনা করতে হলে ‘বোবা টানেল’ আর আমার ‘বসন্ত এসে গেছে’-র নাম করতে হয়, আর সেখানে অবশ্যই ‘বোবা টানেল’ হিট”।

টলি ইন্ডাস্ট্রি আর ব্যান্ডেমোনিয়া

লগ্নজিতা যাই বলুন না কেন, এই আলতো ‘নাকি’ সুরের গায়কিই এখন সকলের মুখে মুখে। তিনি কিন্তু বলছেন অন্য কথা, “একটা গানে জনপ্রিয়তা এলেও আবার অন্য একটা গানে খুব সহজেই ফুরিয়েও যাওয়া যায়”। গড়িয়াহাটের মোড়ে লোপামুদ্রা মিত্র দাঁড়ালে লোকে ওঁকে ঘিরে ধরে, আর আজও অনেক মানুষই তাঁকে চেনেন না। এই ফারাকটা খুব ভাল করেই জানেন লগ্নজিতা, বললেন, “আমার বাবা-মা আজও তো রাত দশটার মধ্যে বাড়ি ঢুকতে বলেন। কিছুই বদলায়নি। তবে বাবা আজকাল ওই একঘেয়ে সুরে রেওয়াজের জন্য সকালে ঘুম থেকে তুলে দেন না, এটাই যা রক্ষে!”

বসন্তগান গাওয়ার পর থেকেই একরাশ বিপদের মেঘ কেটে গিয়ে লগ্নজিতার হাতে এখন অনেক কাজ। বড় ব্যানারের ছবি (যার নাম প্রকাশের অনুমতি তিনি পাননি) ছাড়াও ব্যান্ড তৈরির কথা ভাবছেন তিনি। ইচ্ছে আছে বন্ধুদের নিয়েই ব্যান্ড তৈরি করার। জীবনটাকে প্ল্যানমাফিক এগিয়ে নিয়ে চলায় বিশ্বাসী তিনি। কোনও রকম সারপ্রাইজ পছন্দ করেন না। এমনকী সেটা বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে এলেও না।

‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র গানকে ফিরিয়ে আনতে চান তিনি। “কলেজ ফেস্টে মহীনকে সকলেই শুনতে চাইবে, আর তার মাঝে আমি শুভা মুদগল বা রেখা ভরদ্বাজও গাইব,” কফিতে চুমুক দিয়ে বলে উঠলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আর অমিতাভ ঘোষ নিয়ে পাগল এই গায়িকা। সদ্য সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাজার মৃত্যু’ নাটকের জন্য ফারসি গান রেকর্ড করেছেন। বললেন, ভাষাটা শিখে বেশ আনন্দ পেয়েছেন।

ইন্ডাস্ট্রি নিয়েও উচ্ছ্বসিত তিনি। বেশ আবেগ মাখা গলায় বললেন, “অনেকগুলো হাতই কিন্তু আমার মাথার ওপরে এসেছে। ঋজুদা (সৃজিত মুখোপাধ্যায়) আর অনুপমদা তো আছেনই। সঙ্গীত পরিচালক প্রবুদ্ধদা (বন্দ্যোপাধ্যায়) ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, ‘চন্দ্রবিন্দু’র অনিন্দ্যদা (চট্টোপাধ্যায়) এঁদের উত্‌সাহর কথা জীবনেও ভুলব না। ‘চতুষ্কোণ’-এ ‘বসন্ত এসে গেছে’ শোনার পরে এঁরা প্রত্যেকে আমায় অভিনন্দন জানিয়েছিলেন”।

অন্য গায়িকারা তাঁর গান নিয়ে কী বলেছেন জানতে চাওয়ায় আবারও চুপ তিনি।

“নাহ! আসলে ইন্ডাস্ট্রির সব গায়িকার সঙ্গে আমার আলাপ নেই। সে ক্ষেত্রে অভিনন্দনের তো প্রশ্নই ওঠে না। হ্যাঁ, সাহানাদি (বাজপেয়ী) টেক্সট করেছিলেন গানটা শুনে”। আসলে ইন্ডাস্ট্রি মানেই খারাপ এটা কখনওই মানেন না লগ্নজিতা। উল্টে বেশ কড়া সুরে বললেন, “টুকটাক মন কষাকষি তো বাড়িতেও হয়”। কিন্তু নিজের পছন্দের গায়িকার কথা বলতেই হেসে বললেন, “যতই লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলের গান শুনি না কেন, আমি সুনিধি চহ্বন, শুভা মুদগল-এর ভক্ত। আহা! ওই মেজাজ। ভাবুন তো ওই গানটা ‘পুছো না ন্যায়নো কি ভাষা পিয়া’। ‘মন জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে’-এর চেয়ে লগ্নজিতা ‘মোরা সাঁইয়া মোসে বোলে না’ গাইতে বেশি উত্‌সাহী।

গান লেখার কোনও প্ল্যান নেই তাঁর। “আমি অন্যের গানই গাইব। কোনও ইগো নেই এ সব নিয়ে। আর আমার গলায় যে নায়িকার গান হবে না, সেটাও জানি আমি।” বিসমিল্লা-প্রিয় এই গায়িকার সাফ জবাব। তবে সমসাময়িকদের মধ্যে অন্বেষা আর মধুরার গান লগ্নজিতার বিশেষ পছন্দের। টেকনিকালি ওঁরা যে খুব শক্তিশালী সেটা জানেন তিনি।

বসন্তের বয়ফ্রেন্ড

ফেসবুকে তো জাকির হুসেনকে নিয়ে লিখছেন ‘আমার বসন্ত’। আসল বসন্তটা কে বলুন তো? স্টার হওয়ার পরে কোনও কি বদল হল?

কিছুতেই নাম বলতে চাইলেন না। বয়ফ্রেন্ডের কথা উঠতেই ভুরু কুঁচকে বললেন, “আপনি জানেন বয়ফ্রেন্ডের কথা? ওহ! না! বদল কিছু হয়নি। আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করি। ও কোনও বিষয়ে মাথা ঘামায় না।”

গডফাদার সৃজিত -অনুপম

সৃজিত মুখোপাধ্যায় আর অনুপম রায় এখন লগ্নজিতার গডফাদার। কথায় কথায় বললেন, স্টেজ শো করতে কখনওই চাননি তিনি। অনুপমই তাঁকে স্টেজ শো করার কথা বলেছিলেন। সদ্য একটা স্টেজ শো করেও ফেলেছেন। রাখঢাক না করেই বললেন, ‘‘তবে আপনি যাই জিজ্ঞেস করুন না কেন, আমার কথায় অনেকবারই ঋজুদা (সৃজিত মুখোপাধ্যায়) আর অনুপমদা-র নাম আসবে।”

এত পরিচিতির পরও একটা চাকরি খুঁজছেন তিনি, যাতে গান আর চাকরি পাশাপাশি চলে।

আসলে পেশাদারি ভাবে গান গাওয়ার কথা কোনও দিন ভাবেননি লগ্নজিতা। ছোটবেলা থেকেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত চর্চা করেছেন দুলাল চক্রবর্তী আর জয়ন্ত সরকারের কাছে। যৌথ পরিবারে মানুষ হয়েছেন। বললেন, “আমার অন্য ভাইবোনেরা যখন ইচ্ছে মতো খেলে বেড়াত, তখন আমার বাবা সেই কোন ছোটবেলা থেকেই সকালে জোর করে ঘুম থেকে তুলে গান গাইতে বসাতেন। উফফফ! সেই একঘেয়ে ডাক আজও ভুলতে পারি না।” পাঠভবন স্কুলের পরিবেশটাও তাঁর জীবনে সুর ভরে দিয়েছিল। এ ভাবে গান চলতে চলতেই ‘পেন্ডুলাম’ ছবিতে পারিবারিক বন্ধু সৌকর্য ঘোষাল লগ্নজিতাকে হঠাত্‌ গান গাইতে বলেন। সেই গান ফেসবুকে শুনে বসন্তের ডাক আসে।

লোকে কিন্তু বলছে ‘বসন্ত এসে গেছে’-র গায়কিতে সঙ্গীতশিল্পী সাহানা বাজেপেয়ীর প্রভাব আছে।

ঝটপট বলে উঠলেন, “দেখুন আমার কথা বলাটাই এমন। আমিও জানি, আমার ‘চ’, ‘ছ’গুলো পূর্ববঙ্গীয়। কিন্তু কী করব আমি? এই উচ্চারণ যাঁদের ভাল লাগবে তাঁরা আমার গান শুনবেন, আর যাঁদের ভাল লাগবে না তাঁরা শুনবেন না’’।

ক্রমাগত ফোন আসছে লগ্নজিতার, টেলিভিশনের জন্য একটা বড় কাজ নিয়ে নাকি খুব টেনশনে আছেন তিনি। ফোনেই রেকর্ডিং-এর কথা বলতে বলতে গোলাপি রঙের স্কুটি চেপে ফুরফুরে শীত-রোদে ভিড়ের মাঝে হারিয়ে গেলেন লগ্লজিতা... নাহ রেকর্ডিং নয়, হয়তো নিজের বসন্তের খোঁজেই।

ছবি: কৌশিক সরকার

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement