‘ওর স্টারডম টেলিভিশনের দৌলতে অনেক বেশি’
কলেজের সেই ছেলেটি যখন ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখল, প্রথম স্পেশাল ফিচার হয়েছিল আনন্দবাজারে। মনে আছে?
খুব মনে আছে। দেখুন আমার বাবা-কাকারা কোনও দিন সিনেমা জগতের ছিলেন না। আমাদের পরিবারে রোজ কাগজে ছবি বেরয়, এ রকম কেউ ছিলেন না। স্বভাবতই আমার যখন অত বড় করে ছবি ছাপা হল খুব ভাল লেগেছিল। মা তো ওই পাতাটা আজও যত্ন করে রেখে দিয়েছে।
আজ ফিরে তাকালে অভিনেতা অঙ্কুশের কী মনে হয়?
এখন মনে হয় অভিনেতা অঙ্কুশের দায়িত্ব অনেক বেড়েছে। নতুন যখন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে এসেছি তখন ছবির কাজ পেলেই করতাম। খুব ভাবনা-চিন্তার অবকাশ ছিল না। ঠিক-ভুলের সিদ্ধান্ত বোধ এখন যে ভাবে আমাকে চালনা করে তখন করত না।
সেই কারণেই কি ছবি ফ্লপ হয়েছে, অথচ আপনি ভাল কাজ করেছেন— এমন শোনা যায়?
দেখুন, কাজ সবাই ভাল করার চেষ্টা করে। তবে অভিনয় ভাল করলে এটা অন্তত বলা যেতে পারে যে অমুকে কাজটা ভাল করে। ওই জন্যই অভিনেতা টিকে যায়। ছবি হিট হল অথচ অভিনেতার ট্যালেন্ট নেই, সেই অভিনেতা বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না।
আরও পড়ুন: মিমির বাড়িতে নুসরতের আইবুড়ো ভাত
প্রসেনজিৎ, জিৎ, দেব, অঙ্কুশ। এক সময় বাংলা কমার্শিয়াল ছবির নায়কদের এ ভাবে ভাবা হত। এখন সেটা হয় না। কেন?
এখন কনটেন্ট বেস ছবি হচ্ছে। খুব ভাল লাগে, তার জন্য এমন অভিনেতারা এগিয়ে আসছেন যাঁদের নিয়ে আগে কথা হত না। এখন মুম্বইয়ের খান থেকে এখানকার হিরো— কনটেন্ট ভাল না হলে পাবলিক কাউকেই নেবে না। তবে এখনও মনে করি, কমার্শিয়াল হিরোদের ধারেকাছে কেউ যায় না। অমিতাভ বচ্চনের ‘জঞ্জির’ দেখে আমরা বড় হয়েছি।
রুদ্রনীলের সঙ্গে অঙ্কুশ।
‘পিঙ্ক’ নয়। শাহরুখের ‘ডিডিএলজি’ দেখে আমরা শাহরুখ বলে হইহই করি, ‘স্বদেশ’ নয়। আর একটা ব্যাপার কি জানেন? কমার্শিয়াল হিরোদের যাঁরা পছন্দ করেন, সেই দর্শকেরা জামা ছিঁড়ে চিৎকার করে বলে, আমি ওর ফ্যান। এরা মাসের হিরো। আর শহুরে ছবির নায়কদের ভাল লাগা লোকে ড্রয়িংরুমে আড্ডা মারতে মারতে বলে, ওই দর্শক কিন্তু জামা খুলতে লজ্জা পায়।
আরও পড়ুন: মুগ্ধ হয়ে দেখতে হয় ‘ফেলুদা: ফিফটি ইয়ার্স অব রে’জ ডিটেকটিভ’
শুধু ফ্যান ফলোয়ার দিয়ে তো ব্যবসা চলে না। নয় তো কমার্শিয়াল ছবির বাজার এ রকম খারাপ কেন?
ওই যে বললাম, কনটেন্ট। ধরুন, টাইগার শ্রফকে ‘বাঘী’-তে আর্মি অফিসারের চরিত্রে ও রকম ম্যাচো লুক দর্শক যে ভাবে নিয়েছিল। ‘স্টুডেন্টস অব দ্য ইয়ার’-এ সে ভাবে তো নেয়নি।
এই ছবিতে টাইগার শ্রফ স্টুডেন্ট হিসেবে সারা ক্ষণ জিমন্যাস্টিকস করবে এটা দর্শকের পছন্দ হয়নি। আমি গাড়ি থেকে বেরবো, স্লো মোশনে দেখানো হবে, ধোঁয়া উড়বে আর দর্শক তালি দেবে, সিটি মারবে। না, এ আর হবে না! ওই দিন গেছে। লজিক চাই এখন। কমার্শিয়াল ছবির মেকারদের এটা বুঝতে হবে। স্ট্রং ইমোশনাল কনটেন্ট চাই।
যেমন?
‘কণ্ঠ’ ভাবুন। ‘বেলাশেষে’ ভাবুন। তাতে পঞ্চাশ-ষাট লাখ টাকা খরচ হলেও সেটা যথার্থ। কমার্শিয়াল হিরোরা যদি ভাবে কেবল লার্জার দ্যান লাইফ ছবির নায়ক হয়ে থাকবে, সারা জীবন পর্দায় এলেই দর্শক সিটি দেবে, এটা চলবে না আর। সে দিক থেকে দেবকে কুর্ণিশ। ও যে ভাবে নিজেকে ভাঙছে! ‘কবীর’-এর মতো ছবি আবার ‘ধূমকেতু’-তে বয়স্ক চরিত্রে। আবার ‘হইচই আনলিমিটেড’ করেছে।
আপনিও কি ভাঙছেন?
হ্যাঁ। সেই কারণেই ‘ভিলেন’-এর মতো ছবি করার পর ‘বিবাহ অভিযান’ করছি। পাশের বাড়িতে দেখা যায় এমন ছেলে। বউয়ের অতিরিক্ত ওম্যান পাওয়ারে বিপর্যস্ত।
পূজার সঙ্গে অঙ্কুশ। ‘বিবাহ অভিযান’ ছবিতে
দেব কি আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী?
বাংলা ইন্ডাস্ট্রির যা অবস্থা তাতে দেবকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবলে আমাদের বাটি হাতে বসতে হবে। এত ছোট জায়গা। প্রতিদ্বন্দ্বী তখনই ভাবব যখন বাংলা ছবি একশো কোটির ব্যবসা দেবে আমাদের সবাইকে। সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এখন। আমি চাইব এমন ছবি করতে যেখানে জিৎ, দেব, আমি প্রযোজনা করব। আমাদের তিন জনের নাম থাকবে। দশ কোটি বাজেট হবে।
‘বিবাহ অভিযান’-এর পরিচালক বিরসা দাশগুপ্তের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?
মাটির মানুষ। ওকে যদি চিমটিও কাটি ও চেঁচাবে না। জোরে কথা বলবে না। অভিনয়ের ক্ষেত্রেও বিরসা স্বাধীনতা দেয়।
আপনার বিবাহ অভিযান নিয়ে তো রোজ গল্প হয়। বিয়েটা কবে?
হ্যাঁ, গল্পই বটে! কোথাও তো আমার বয়ানে অন্য মেয়ের নাম বসিয়ে গসিপ হয়। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, আমি এ রকম কথা বলিনি। এই সব মিথ্যে ছেপে আমার আর ঐন্দ্রিলার সম্পর্ক নষ্ট করা যাবে না।
এ বার বিক্রমের জন্মদিনে হঠাৎ সেটে পৌঁছে গিয়েছিলেন। লোকে বলে ঐন্দ্রিলা-বিক্রমের বন্ডিং নিয়ে আপনি ইনসিকিওরড?
এটা পুরোটাই তৈরি করা। বলা হল, আমিই নাকি বলেছি যে আমি সঞ্জনা বলে একটি মেয়েকে মেসেঞ্জারে টেক্সট করেছি! ভাবুন। এত বড় মিথ্যে?
আপনি আর ঐন্দ্রিলা ছবি করবেন না জুটি বেঁধে?
ও তো ভীষণ ভাল অভিনেত্রী।আমি শো করি ওর সঙ্গে, জানি। ওর স্টারডম টেলিভিশনের দৌলতে অনেক বেশি। সে রকম অফার এলে নিশ্চয়ই করব।