‘মুখার্জীদার বউ’-এ অভিনেত্রী।
‘মুখার্জীদার বউ’-এ আপনি তো টিপিক্যাল শাশুড়ি? ট্রেলারে তো তেমনই মনে হচ্ছে…
প্রথম দিকে দেখলে একটু টিপিক্যালই মনে হবে। একটু বিরক্তি প্রকাশ করেন। একটুতেই অসন্তুষ্ট। কিন্তু টিপিক্যালিটি ছাপিয়ে পরের দিকে খুব সুন্দর একটা সম্পর্কের সৃষ্টি হয় শাশুড়ি-বউমার। আসলে শোভারানি (এই ছবিতে অনসূয়ার চরিত্রের নাম) একটু ছেলেমানুষ। অনেক মেয়ে, মায়েরা বলব, বিশেষ করে বিধবা হয়ে গেলে একাকীত্বে ভোগেন। হঠাত্ করে ভীষণ ধাক্কা আসে। সেটা অনেক সময় হ্যান্ডল করতে পারেন না। ফলে চারপাশে যারা থাকে তাদের ওপর বহিঃপ্রকাশ হয়। তখনই টিপিক্যাল মনে হয়। কিন্তু সেই চিরাচরিত ধারণা থেকে বেরতে চেয়েছেন লেখিকা। শাশুড়ি-বউমা একে অন্যকে যদি বুঝতে চেষ্টা করেন তা হলেই পৃথিবীটা অনেক সুন্দর হতে পারে।
এমন উদাহরণ বাস্তবে পেয়েছেন নিশ্চয়ই?
এমন তো প্রচুর দেখেছি। শুনেছি।
সে সব উদাহরণের প্রভাব পড়েছে অভিনয়ে?
অভিনয়ের সময়ে একটু ইনফ্লুয়েন্স তো করেই। এগুলো খুব স্বাভাবিক। হিউম্যান নেচার। বাড়িতে নতুন কেউ এলে মনে হয় আমার সব কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। ছেলেকে আমার থেকে আলাদা করে দিল। নাতি-নাতনিকে আলাদা করে দিল। আমি একা। আমার কেউ নেই। নিজের জায়গা, নিজের অস্তিত্ব হারাবার একটা আশঙ্কা থাকে। এটা সব মানুষেরই থাকে। কিন্তু শাশুড়ি-বউমা সম্পর্ক নিয়ে আমাদের এত কৌতূহল…। কোনও মেয়ের বিয়ে হলেই বোধহয় প্রথমে প্রশ্ন করা হয়, শাশুড়ি আছে তোর? কেমন? ভাল তো? সেই জায়গা থেকে এই সম্পর্কের যে নতুন দিকটা এখানে এক্সপ্লোর করা হয়েছে সেটাই আমার ভাল লেগেছে।
স্ক্রিপ্ট পড়ে রাজি হয়েছিলেন?
শিবপ্রসাদ-নন্দিতা যখন অ্যাপ্রোচ করেছে, তখন স্ক্রিপ্ট না শুনেই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। পরে স্ক্রিপ্ট তো দেখলাম ওয়ান্ডারফুল। আমি নিজেকে আবার চ্যালেঞ্জ করতে পারব মনে হয়েছিল। সকলের কাছ থেকেই কোঅপারেশন পেয়েছি।
অনেকের সঙ্গেই তো আপনার আগে কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছে?
হ্যাঁ। বিশ্বনাথ, কনীনিকার সঙ্গে আগে কাজ করেছি। মজার সম্পর্ক। র্যাপো ভাল। ঋতুপর্ণা, অপরাজিতার সঙ্গে কাজ করেও ভাল লেগেছে। পুরো টিমটা খুব চার্জড ছিল।
পরিচালক পৃথা তো একেবারে নতুন…
ঠিকই। পৃথার বয়স কম। কিন্তু ম্যাচিওর। সব কিছু ওর মাথায় ছিল। ফলে এতটুকু সময় নষ্ট করেনি।
শিবপ্রসাদ-নন্দিতা যখন অ্যাপ্রোচ করেছে, তখন স্ক্রিপ্ট না শুনেই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম, বললেন অনসূয়া।
সিনিয়র হিসেবে সাজেশন দিয়েছিলেন?
হ্যাঁ, অনেক বার। সবাই সবাইকে সাজেশন দিয়েছে। আমাদের কোনও সমস্যা ছিল না। কারণ আমরা সবাই মিলে কাজটা ভাল হোক, সেটা চেয়েছি। আমার এই বয়সে আমি ইয়াংদের কাছ থেকে শিখেছি। অপা-ঋতুর সঙ্গে কাজ করে খুব ভাল লেগেছে।
আর প্রযোজক, অর্থাত্ শিবপ্রসাদ-নন্দিতা…, ইনপুট ছিল ওঁদের?
ওঁদের গাইডেন্স ছিল, সাপোর্ট ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা ছিল সম্পূর্ণ।
আপনি এবং কনীনিকা তো ‘অন্দরমহল’-এ শাশুড়ি-বউমা হিসেবে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন?
হুম…আমার খুব প্রিয় চরিত্র ছিল ওটা। ‘অন্দরমহল’-এ অন্য ডাইমেনশন ছিল। শাশুড়ির ইনসিকিওরিটি ছিল না। ভয় ছিল। সেটা বউমা এসে কাটিয়ে দেয়। এখানে আবার অন্য রকম। আমার আর কনীর আন্ডারস্ট্যান্ডিং বরাবরই ভাল।
আরও পড়ুন, মা, বউয়ের সমস্যা কী ভাবে সামলান? ‘মুখার্জীদার বউ’-এর গল্প বললেন বিশ্বনাথ
এত দিন ধরে টেলিভিশনে কাজ করছেন। কতটা পরিবর্তন হয়েছে মনে হয়?
টেলিভিশন নির্মাতাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। টেলিভিশন আমাকে বহু মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। প্রথম প্রথম যখন টেলিভিশন করতাম নির্দিষ্ট এপিসোড হত। ফলে মনে হত, ইস আর একটু হলে ভাল হত। আমার গুরুজি বলতেন, স্টেজ থেকে ঠিক সে সময় নেমে আসতে হবে, যখন দর্শকের মনে হবে আর একটু হলে ভাল হত। টেলিভিশনও তেমন ছিল তখন। এখন তো তিন বছর-সাড়ে তিন বছর ধরেও ধারাবাহিক করছি আমরা।
সেটা খারাপ বলছেন?
আসলে একটা পয়েন্টের পর থেকে মনে হয়, একটু কম হলে ভাল হত। এ সব দর্শকের থেকেই শুনেছি। গল্পটা কোথায় হারিয়ে যায় যেন। অভিনয়ের মধ্যেও খামতি থেকে যায়। কারণ আমার যদি মনে হয়, শেখার কিছু নেই। যা করছি দর্শক সেটাই তো নিচ্ছে। সেটা মুশকিল। নিজেকে ইমপ্রুভ করার মানসিকতা থাকতেই হবে। গল্পও টানটান হতে হবে।
টেলিভিশন নির্মাতাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, মত অভিনেত্রীর।
আর সিনেমায় কী পরিবর্তন চোখে পড়ল?
আমি তো কমার্শিয়াল ফিল্ম খুব একটা করিনি। আমি যে ধরনের ছবি করেছি সব সময়েই পরিচালক আমার ওপর ভরসা রেখেছেন। নিজের মতো করে চরিত্র করতে দিয়েছেন। তার মানে এটা নয় যে আমি সাজেশন নিইনি। সাজেশনও নিয়েছি। যাঁরা ঘন ঘন ছবি করেন তাঁরা হয়তো চেঞ্জটা বলতে পারবেন। আমি তো কম ছবি করেছি।
তবুও…
আগেকার গল্পে যাদের দেখানো হত, তারা একটা অরা-র মধ্যে থাকত। কিন্তু এখনকার গল্পে দর্শক নিজেকে আইডেন্টিফাই করতে পারে। এই ছবিটাতেই যেমন, হয়তো অনেকে আইডেন্টিফাই করতে পারবে। অনেকে বলতেই পারে, এমন খিটখিটে শাশুড়ি হয় নাকি? কিন্তু বাড়ি গিয়ে ভাববে। আমার নিজের শাশুড়ির সঙ্গে হয়েছিল…।
আরও পড়ুন, আর একটু বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সেক্সটাকে ব্যবহার করতে হবে, বলছেন রাহুল
তাই? কী হয়েছিল?
(হাসি) ওঁর ছেলে বোধহয় কিছু বলেছিল, তাতে অভিমান করেছিলেন। আমি বলেছিলাম, ছেলের ওপর অভিমান করে আমার সঙ্গে কথা বলছ না কেন? আমি তো বাপের বাড়ি ছেড়ে এসেছি তোমার কাছে। তোমাকে মা বলে ডাকি। আমার সঙ্গে ও সব কোরো না। আমাদের খুব ভাল রিলেশন ছিল।
সিনিয়র হিসেবে নতুন যাঁরা আসছেন, তাঁদের কোনও সাজেশন দিতে চান?
দেখুন, টেলিভিশনে এখন খুব সহজে সুযোগ পেয়ে যায় সকলে। কিন্তু একটা চরিত্র করার আগে সেটা নিয়ে একটু ভাবতে হবে। কাজটা ভালবাসতে হবে, শ্রদ্ধা করতে হবে। তা হলেই নিজে থেকেই ইচ্ছে হবে, একটু উচ্চারণ শিখি, অন্য রকম ডাইমেনশন বের করি।
সেটা কি আজকের প্রজন্ম করছে না?
কী ভাবে চরিত্র নিয়ে ভাববে, সেটা ওদের চয়েস…।
(সেলেব্রিটি ইন্টারভিউ, সেলেব্রিটিদের লাভস্টোরি, তারকাদের বিয়ে, তারকাদের জন্মদিন থেকে স্টার কিডসদের খবর - সমস্ত সেলেব্রিটি গসিপ পড়তে চোখ রাখুন আমাদের বিনোদন বিভাগে।)