কোয়েল ও রাইমা
সোশ্যাল মিডিয়া মানে তথ্যের বিস্ফোরণ! তথ্য পাওয়ার পাশাপাশি আমি কতটা জানি এবং কত দ্রুত বাকিদের তা জানাতে পারছি, সেটারও প্রতিযোগিতা চলে নেট দুনিয়ায়। তাই কারও মৃত্যুর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘আরআইপি’ (রেস্ট ইন পিস) লিখতে কয়েক মুহূর্ত মাত্র! খতিয়ে দেখতেও চান না খবরটি আসলে ঠিক কি না। ওই ব্যক্তিটির নিকটাত্মীয়ের উপরে কতটা মানসিক চাপ পড়ল, তা-ও খেয়াল থাকে না।
সেলেব্রিটিদের মৃত্যু সংক্রান্ত গুজবই সবচেয়ে বেশি ছড়ায়। আর সেই সেলেব যদি অভিনেতা হন, তখন গুজব সংক্রমণের আকার নেয়। কিছু দিন আগে রঞ্জিত মল্লিকের মৃত্যুর খবর ছেয়ে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়েও গুজব রটে।
অমিতাভ বচ্চন, দিলীপকুমারকে নিয়ে নিয়মিত হোক্স শোনা যায়। দিলীপকুমার যত বার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাঁর মৃত্যুর খবর রটেছে। অমিতাভ নিজে তাঁর মৃত্যুর খবর অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছেন। ফের কাজ শুরু করলেও গত কয়েক বছরে অসুস্থতা-সহ নানা কারণে বিনোদন দুনিয়া থেকে দূরে মিঠুন চক্রবর্তী। তখন একাধিক বার তাঁর মৃত্যুর খবর রটেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্তে এই ধরনের খবরের গতিবেগ আরও বেড়ে গিয়েছে। সুচিত্রা সেন হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময়ে এবং তার আগে নিয়মিত ভাবে তাঁর মৃত্যু সংক্রান্ত গুজব রটেছে।
এই রটনার জাঁতাকলে জেরবার হতে হয় পরিবারকে। অমিতাভের গুজবের সময়ে অভিষেক বচ্চন এক বার সংবাদমাধ্যমে কড়া বিবৃতি দিয়েছিলেন। সেখানে গুজবকারীদের বিরুদ্ধে তাঁর বিতৃষ্ণার সঙ্গে মিশে ছিল বাবার জন্য উৎকণ্ঠাও। এই ধরনের রটনার ফলে কাছের মানুষেরা জেরবার হয়ে যান। রাইমা সেন বলছিলেন, ‘‘বাইরে শুটিং করছি, এ দিকে কলকাতা থেকে পরপর ফোন। দিম্মাকে নিয়ে কিছু একটা রটেছে!’’ এগুলোয় খারাপ লাগে না? ‘‘খারাপ হয়তো লেগেছে কিন্তু আমি, রিয়া বা মা কেউই এই বাজে খবরগুলোয় গুরুত্ব দিইনি। গুজব নিয়ে নিজেদের উপরে চাপ তৈরি করার মানে হয় না,’’ বক্তব্য রাইমার।
গত রবিবারেরই ঘটনা, সকাল থেকেই শোনা যাচ্ছিল অভিনেতা ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় মারা গিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়া ভরে গেল ‘আরআইপি’ স্টেটাসে। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য অভিনেতাকে মেসেজ করা হলে তিনি লেখেন, ‘‘আই অ্যাম অ্যালাইভ। বিলিভ ইট অর নট।’’ তাঁর কানেও পৌঁছেছে রটনা। জানালেন, সোশ্যাল মিডিয়া যখন রটনায় ভরপুর, তিনি তখন নর্থ-ইস্ট ইন্ডিয়ায় ট্রাভেল করছেন। মাঝে মধ্যেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু সংবাদ ঘোরাফেরা করে। খবর যাচাইয়ের জন্য তাঁর বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ফোন করা হলে তিনি নিজেই বিভ্রান্তি কাটান। বুঝিয়ে দেন এ ধরনের খবরে তাঁর বিরক্তি।
রঞ্জিত মল্লিককে নিয়ে ছড়ানো গুজবের প্রসঙ্গে কোয়েল বলছিলেন, ‘‘বাবার ব্যাপারে ভুলভাল খবর বহু বার ছড়িয়েছে। প্রথম বার যখন গুজবটা রটেছিল, আমরা আমেরিকায় ছিলাম। আমি মা-বাবা, রানে, পাপা... সবাই। সমানে ফোন আসতে শুরু করে। গল্ফ ক্লাবের বাড়িতে তো অনেকে চলে এসেছিলেন বাবার খবর নিতে। ভয় লাগে, কষ্ট হয়, একটা খারাপ খবর শুনতে শুনতে, সেটা না সত্যি হয়ে যায়... এমনিতে কোনও গুজব নিয়েই আমি উচ্চবাচ্য করি না। এতে যারা রটায়, তারা গুরুত্ব পায়। বাবাকে নিয়ে ইউটিউবে তো ভিডিয়ো পর্যন্ত রয়েছে!’’
শুধু মাত্র প্রবীণদের নিয়েই গুজব রটে না। সোমবারই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর দিয়ে ইউটিউবে একটি ভিডিয়ো আপলোড হয়। এ দিকে অভিনেতা তখন লখনউয়ে শুটিং করছেন।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে, কে বা কারা এই ধরনের গুজব রটায়? অনেক সময়ে একটি ঘটনা লোকমুখে ছড়ানোর ফলে অন্য রং নেয়। আবার ইউটিউবে জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য কিছু সাইট ইচ্ছে করে ভুল খবর ছড়ায়। সেলেব্রিটির মৃত্যুর খবর স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণ মানুষকে ধাক্কা দেবে এবং তাঁরা ভিডিয়োটি খুলে দেখবেন। ভিউজ়, শেয়ার বাড়লে সাইটটির লাভ। যেমনটা রঞ্জিত বা প্রসেনজিতের ক্ষেত্রে হয়েছে। কোয়েলের কথায়, ‘‘এদের প্রতি রাগের চেয়ে করুণাই বেশি হয়। এরা মানসিক ভাবে অসুস্থ। আমি এদের স্পিডি রিকভারি কামনা করি।’’
চাইলে সেই তারকা বা তাঁর পরিবার কিন্তু সাইবার ক্রাইম শাখায় অভিযোগ করতে পারেন। তবে অধিকাংশ সেলেবই উপেক্ষার পথ বেছে নেন।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।