ব্রাত্য বসু। ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন: আপনি জানতেন আপনাকে জীবনানন্দের মতো দেখতে?
ব্রাত্য: (প্রশ্ন শুনে অবাক) নাহ! একেবারেই না। জীবনানন্দ বহু বার পড়েছি। কিন্তু আমায় কোনও দিন তাঁর চরিত্রে অভিনয় করতে হবে ভাবিনি। খুব শক্ত কাজ।
প্রশ্ন: কেন?
ব্রাত্য: জীবনানন্দের ব্যক্তিজীবন বেশির ভাগটাই অধরা। যা তথ্য পাই, তা শুধু বাইরের। কিন্তু মানুষটার ভিতরে যাওয়া, সমুদ্রের গভীরে যাওয়া খুব কঠিন ছিল। সেটা আমি আমার মতো করে করার চেষ্টা করেছি। জীবনী পাঠ করলাম। কিন্তু আমাকে খুব সাহায্য করল শাহাদুজ্জামানের লেখা ‘একজন কমলালেবু’ বইটি। বিশেষত তাঁর বোনের সঙ্গে যে সম্পর্ক; স্ত্রী লাবণ্যের সঙ্গে অবনিবনা; সমসাময়িক লেখকদের কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখা; একটা অবরোধের মধ্যে বাস করা— এগুলো বিশদে জানতে পেরেছি। যা চরিত্রায়ণের ক্ষেত্রে খুব কাজে লেগেছে।
প্রশ্ন: ‘ঝরা পালক’ ছবিতে কি আপনার সামনে নতুন জীবনানন্দ এল?
ব্রাত্য: বলতে পারেন। ওঁর স্ত্রী লাবণ্যকে আরও জানলাম। সে অর্থে আমি তাঁকে বাহবাই দেব। পৃথিবী থেকে প্রত্যাখাত, অসফল এক জন মানুষকে আগলে রেখেছেন তিনি। তাঁর চাকরি চলে গিয়েছে। ছাত্রমহলেও তিনি জনপ্রিয় নন। মুখচোরা এমন এক জনের সঙ্গে থাকা, মাঝে মাঝে থাকতে না পেরেও সহ্য করা— এটা কম কথা নয়। মাঝে মাঝে স্ত্রী পেরেও উঠতেন না।এই জায়গাটা দেখলাম। আর বুঝলাম, জীবনানন্দ আত্মহত্যা করেছিলেন। তাঁর মৃত্যু কোনও দুর্ঘটনা নয়। সমস্ত সমাজ তাঁকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল।যেহেতু তিনি অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণ, তাই সমাজের স্থূলতা, ক্রূরতা, অসাড় নিষ্ঠুরতা এই সংবেদনশীলতাকে বোঝার উপযোগী ছিল না। সমাজের বয়েই গিয়েছে। এইটা ছবি করতে গিয়ে বোঝা গেল।
প্রশ্ন: আর আজকের জীবনানন্দ?
ব্রাত্য: এই সময় তো আরও খারাপ অবস্থা। আজ যে জীবনানন্দ, তাঁর পক্ষে মানিয়ে নেওয়াই অসম্ভব ব্যাপার।
প্রশ্ন: বাঙালির কাছে কবি মানেই মুখচোরা, নরম, কিছু কবিতা নিয়ে চলা জীবন…
ব্রাত্য: আরও আছে। বাঙালির কাছে তিনিই কবি, যিনি তাঁর জীবৎকালে কবিতা প্রকাশ করবেন না। পরে তাঁর কবিতার পাণ্ডুলিপি প্রকাশ পাবে। বাঙালি আসলে গড় অর্থে কোনও সাহিত্য বোঝে না। মাঝখানে একটা লোক চলে এসেছিলেন-- রবীন্দ্রনাথ! তিনি এই সাহিত্যের বাতাবরণ তৈরি করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ আমার মতে ‘কিংবদন্তি’, তবে প্রভাবসঞ্চারী নয়।
প্রশ্ন: মনে হয় না রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন…
ব্রাত্য: একেবারেই নয়। রবীন্দ্রনাথ জ্যান্ত। তবে তিনি নিজে এই বাঙালি জাতির মতো সংখ্যালঘু তৈরি করেছেন। তিনি নিজেও অবশ্য লড়াই করে সংখ্যালঘু হয়েছেন। এই সংখ্যালঘুদের অবস্থা ভাল নয়। কারণ, সংখ্যাগুরু মাত্রেই ভোঁতা।
প্রশ্ন: ‘ঝরা পালক’ কাদের ছবি?
ব্রাত্য: এই ছবি সংখ্যালঘুদের দেখার ছবি। যারা ধ্বস্ত, সাহিত্যপ্রেমী। এই সমাজের মূল স্রোতে চলতে না পারা লোক এই ছবি দেখবে। এই ছবি মার-খাওয়া মানুষের কথাই বলে।
প্রশ্ন: জয়ার সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?
ব্রাত্য: ভাল লাগল। আমার ওঁর সঙ্গে প্রথম কাজ।
প্রশ্ন: এই ছবি কি নতুন জুটির জন্ম দেবে?
ব্রাত্য: না। আমি জুটিতে বিশ্বাস করি না। আবার কবে জয়ার সঙ্গে কাজ করব জানি না। পরের ছবি সৃজিতের। সেখানে আমি গিরীশ ঘোষ। আর বিনোদিনী প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত। জুটি একটা ‘ঝুটি’ শব্দ।
প্রশ্ন: বাংলা ছবি আর বাংলা নাটক নিয়ে কী ভাবনা?
ব্রাত্য: ‘অপরাজিত’ সফল ছবি। আর বাংলা নাটকের খবর আমি রাখি না।আমি বছরে একটা ছবি করব। আর একটা ছবিতে অভিনয় করব। এর চেয়ে ভাল কিছু হচ্ছেও না যে, তার জন্য সময় দিতে হবে।
প্রশ্ন: ব্রাত্য বসু নাটক নিয়ে কিছুই বলবেন না?
ব্রাত্য: না।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।