সুঠাম দেহ, সুদর্শন যুবা। এক ঝলক দেখলে বিদেশি পর্যটক বলে ধন্দ হতে পারে। তবে তিনি আসলে বলিউডের ভিলেন। কখনও বা ভিলেনের ডান হাত। হিরোর কাছে বেদম পিটুনি খেয়ে কোনও ফিল্মে কুপোকাত হচ্ছেন। তো কখনও গুলির ঘায়ে পরপারে পাড়ি দিচ্ছেন। ৬০টিরও বেশি বলিউড ফিল্ম। দোস্তি বলিউডের সুপারস্টারদের সঙ্গে। তবে তাঁর শেষযাত্রায় দেখা পাওয়া যায়নি বলিউডের কোনও প্রতিনিধিকেই। কে তিনি?
গত শতকের নয়ের দশকে অসংখ্য ফিল্মে দেখা গিয়েছে গেভিন প্যাকার্ডকে। নয় নয় করে সংখ্যাটা ৬০টিরও বেশি। বলিউডের ভিলেন গেভিন আদতে আইরিশ-আমেরিকান ব্যক্তির সন্তান। মা মহারাষ্ট্রীয় হলেও তাঁর চেহারায় বিদেশি ছাপটা বেশি স্পষ্ট।
১৯৬৪-এর ৮ জুন মহারাষ্ট্রের কল্যাণে জন্ম গেভিনের। বাবা আর্ল প্যাকার্ড ছিলেন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ। মা বারবারা ছিলেন গৃহবধূ। মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্য হিসাবে ঠাকুরদা জন প্যাকার্ড ভারতে আসেন। তবে নিজের দেশে আর ফিরে যাননি তিনি। বরং তৎকালীন ব্যাঙ্গালোরে বসবাস শুরু করেন জন প্যাকার্ড।
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় গেভিনের ছোটবেলা থেকেই বডিবিল্ডিংয়ের শখ। রাজ্য তথা জাতীয় স্তরে বডিবিল্ডিংও করেছেন। সেই শখকে পেশা হিসাবে না নিলেও বরাবরই দেহচর্চা করে গিয়েছেন।
শুধুমাত্র বলিউডি নয়, গেভিন কাজ করেছেন দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও। তবে ১৯৮৪-এ ‘জওয়ানি’-তে একটি ছোট রোল করলেও তেমন কাজ ছিল না তাঁর কাছে। ’৮৯-এ ‘ইলাকা’-র মতো মাল্টিস্টারার ফিল্মে চোখে পড়ে যান সঞ্জয় দত্তের। সেই শুরু।
সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে ‘ইলাকা’-র সেটেই দোস্তি হয়ে গিয়েছিল গেভিন প্যাকার্ডের। গেভিনের ফিটনেসের বহর দেখে সঞ্জুবাবা এতটাই মুগ্ধ হন যে তাঁকে পার্সোনাল ট্রেনার করে নেন।
এর পর একে একে বহু ফিল্মেই দেখা গিয়েছিল গেভিনকে। ‘সড়ক’, মোহরা’, ‘তাড়িপার’, ‘করণ অর্জুন’, ‘খিলাড়িয়োঁ কা খিলাড়ি’, ‘চমৎকার’, ‘বাগি’, গেভিনের ঝুলিতে সে সময় বিগ বাজেটের ফিল্ম।
ফিল্মের পাশাপাশি তাঁর হিরোদের সঙ্গে জমিয়ে দোস্তিও চলছিল গেভিনের। মূলত গেভিনের দেহচর্চা দেখে মুগ্ধ সুনীল শেট্টি, সলমন খান থেকে শুরু করে বহু নামী হিরো।
সঞ্জয় দত্ত ছাড়াও তাঁর বডিগার্ড শেরা বা সুনীল শেট্টি, সলমন খানের পার্সোনাল ট্রেনার হিসাবেও দেখা গিয়েছে গেভিনকে।
তবে এক সময় হঠাৎই যেন বড় পর্দা থেকে গায়েব হয়ে গেলেন গেভিন প্যাকার্ড। বডিউড পর্দায় ২০০২-এ তাঁকে শেষ বার দেখা গিয়েছিল। ডেভিড ধওয়নের ছবি ‘ইয়ে হ্যায় জলবা’-তে। যদিও সে সময় হিন্দি, মালয়ালম মিলিয়ে ষাটের বেশি ফিল্ম করা হয়ে গিয়েছিল গেভিনের।
এর পর গেভিন প্যাকার্ডের কোনও খবর তেমন ভাবে পাওয়া যায়নি। তত দিনে বিয়ে করে ফেলেছেন। তবে শোনা যেত, স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা নেই। আলাদা থাকেন দু’জনে। এক সময় কল্যাণে ভাইয়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন গেভিন।
২০১০-এ এক ভয়ানক দুর্ঘটনা একেবারে বিছানায় ফেলে দেয় গেভিনকে। সে সময় দীর্ঘ দিন অসুস্থ ছিলেন তিনি। তবে ওইটুকুই। পেজ থ্রি-তে এর বেশি গেভিনের সম্পর্কে আর কিছুই শোনা যায়নি সে সময়।
২০১২-তে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে মারা যান গেভিন প্যাকার্ড। ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। বান্দ্রায় কবর দেওয়া হয়েছিল গেভিনকে।
তবে শেষযাত্রায় দেখা যায়নি বলিউডের কোনও রথীমহারথীদের। বলিউডের প্রথম সারির নায়কদের সঙ্গে এক সময় দোস্তি থাকলেও গেভিন শেষকৃত্যে যোগ দেননি তাঁরা। যদিও সে সময় সঞ্জয় দত্ত শোকপ্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, গেভিনের শেষকৃত্যে যেতে পারলাম না বটে। তবে শুনেছি, মৃত্যুর আগে অত্যন্ত অর্থকষ্টে দিন কেটেছে গেভিনের।