নেহা কক্করের জীবনে এখন বসন্ত। প্রেমে পড়ার কথা জানিয়েছিলেন আগেই। এ বার অতিমারির মাঝেই গুরুদ্বারে সেরে ফেললেন বিয়েটাও।
গত শনিবারই পাঞ্জাবি মতে আনন্দ কর্জ অনুষ্ঠান হল নেহার। কখনও হলুদ শাড়ি, কখনও পিচ রঙের লেহঙ্গায় সেজে উঠলেন তিনি। কাকে বিয়ে করলেন বলিউডের জনপ্রিয় গায়িকা?
নেহার স্বামী রোহনপ্রীত সিংহ পঞ্জাবি গায়ক। ‘সা রে গা মা পা লিটল চ্যাম্পস’-এ অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। ডিজাইনার পাগড়ি ও কুর্তা-শেরওয়ানিতে রোহনকে ‘হ্যান্ডসাম ডিউড’ বলছেন নেটাগরিকরা।
নেহা উঠে এসেছিলেন ‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এর মঞ্চ থেকে। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই রিয়্যালিটি শো মারফত জার্নি শুরু করেন।
প্রেমটা হল কী করে? সে বিষয়ে এখনও যদিও মুখ খোলেননি এই ‘লাভ বার্ডস’। তবে খুনসুটি, কপালে চুমু, খানিকটা দুষ্টুমি এমন নানা ছবিতেই বোঝা যাচ্ছে, তাঁদের প্রেম এখন মাখো মাখো।
ইনস্টাগ্রামে নেহার পোস্টে শুভেচ্ছার জোয়ার। কোরিওগ্রাফার টেরেন্স লুইস থেকে অভিনেতা অর্জুন বিজলানি— প্রত্যেকেই উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন নেহার বিয়ের খবর শুনে।
অক্টোবরের শুরুতেই দুধে আলতা সালোয়ারে ‘দেশি গার্ল’ অবতারে নেহা হাসিমুখে ছবি পোস্ট করেন। ক্যাপশনের শেষে হ্যাশট্যাগ ছিল #নেহাদ্যবিহা। যার বাংলা অনুবাদ ‘নেহার বিয়ে’। কেউ ভেবেছিলেন নির্ঘাত প্রচারে আসার চেষ্টা। বিয়ে নিয়ে বিতর্ক তৈরি করতে চান নেহা।
তবে বলি মহলে জল্পনা শুরু হয়েছিল যে নেহা সাত পাকে বাঁধা পড়তে চলেছেন। কখনও প্রেমিক রোহনপ্রীত সিংহের সঙ্গে ছবি দিয়ে ভালবেসে বলেছেন, ‘তুমি আমার’। আদর করে নিজেদের নাম রেখেছেন ‘নেহুপ্রীত’।
করোনা পরিস্থিতিতে ইন্ডাস্ট্রির তেমন কাউকে আমন্ত্রণ না জানালেও বিয়ের অনুষ্ঠানে কোনও খামতি রাখেননি নেহা। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছে রোকা ও গায়ে হলুদের ভিডিয়ো এবং ছবি।
পোস্ট হতেই নেহার বিয়ের সব ছবি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং ‘নেহু দা বিহা’।
তবে অনুষ্কার সঙ্গে তাঁর বিয়ের লেহঙ্গাটি প্রায় একই রকমের গোলাপি ঘেঁষা, নেটাগরিকদের কেউ কেউ এমন প্রশ্ন তুলে বলেছেন নেহার তো নিজস্বতা রয়েছে, তা হলে একই ধরনের পোশাক কেন। যদিও কোহালি পরেছিলেন সাদা শেরওয়ানি, রোহনের পরনে গোলাপি।
বিয়েতে একটি লাল লেহঙ্গাতেও দেখা গিয়েছে নেহাকে। সেটি নাকি রিসেপশনের দিন প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার সব্যসাচীর লেহঙ্গার মতোই, অনেকে এমনই লিখেছেন।
ডিজাইনার ফাল্গুনি শ্যেন পিকক ক্রিয়েশনের পোশাক নেহার। প্রিয়ঙ্কা ও নেহা দু’জনেই লম্বা ভারী মাঙ্গ টিক্কা ও ভারী নেকলেস পরেছেন। তাই হয়ত দেখতে একইরকম লাগছে, এমনটাও বলছেন অনেকে।
কিছু দিন আগেই একটি মিউজিক অ্যালবাম লঞ্চ করেন নেহা। সেখানে রোহনপ্রীত গান করেন তাঁর সঙ্গে। তখনই আঁচ করা গিয়েছিল তাঁদের প্রেমের।
২৪ অক্টোবরই সাত পাকে বাঁধা পড়েছেন নেহা-রোহন । দিল্লির এক পাঁচতারা হোটেলে বসেছিল তাঁদের বিয়ের আসর। অনিতা ডোঙ্গরে, শিল্পা আহুজার ডিজাইনার পোশাকে এ যেন এক অন্য নেহা।
ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে বউয়ের সাজে বিয়ের মণ্ডপের দিকে রওনা হন নেহা। কিন্তু যাওয়ার সময় বার বার পিছন ফিরে বাড়ির লোককে খুঁজছেন তিনি। আর পাঁচ জনের মতোই যেন কান্না আটকে বিয়ের মণ্ডপে পৌঁছন।
হলদি থেকে মেহন্দি, সঙ্গীত থেকে জয়মালা, সাত ফেরে... সব কিছুর একাধিক নজরকাড়া ছবি আর ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেয়ে গিয়েছে। ‘মেহেন্দি লাগাউঙ্গি সজনা’ লিখেছেন নেহা নিজেই।
নেহা এবং রোহন নিজেরাই সঙ্গীতশিল্পী। সেখানে জমজমাট সঙ্গীতের আসর বসবে না তা আবার হয় নাকি। রিসেপশন হয়েছে পঞ্জাবে।
কখনও বিয়ের অনুষ্ঠানে, কখনও রিং সেরিমনিতে, কখনও রিসেপশনে, কখনও ঘনিষ্ঠ জনদের মাঝে জলসায়... .দু’জনেই গান করেছেন চুটিয়ে। ভারী লেহঙ্গা পরে নেহা কিন্তু দুর্দান্ত নাচও করেছেন।
নেহার ভাই টনি কক্করকেও বোনের বিয়েতে নাচতে দেখা যায়। দারুণ মজার সেই ভিডিও। নেহার নিজের গানও বেজেছে বিয়ের মণ্ডপে।
মাত্র ৪ বছর বয়স থেকে গান গাইতে শুরু করেন নেহা। বাবা ছিলেন শিঙাড়া বিক্রেতা। বন্ধুদের টিপ্পনীও শুনেছেন অভাবের কারণে।
ঋষিকেশে ছোট এক কামরার ভাড়া বাড়িতে ছোটবেলা কাটিয়েছেন, আজ সেখানেই নিজের বিলাসবহুল বাংলো কিনেছেন নেহা। জীবনকে নতুন করে দেখছেন সদ্য বিবাহিতা গায়িকা।
অভিনেতা হিমাংশু কোহালির সঙ্গে দীর্ঘ দিন সম্পর্কে ছিলেন নেহা। পরিণতি পায়নি সেই প্রেম। হতাশায় ডুবেছিলেন তিনি।
পরবর্তীতে নাম জড়ায় উদিত নারায়ণের ছেলে আদিত্যর সঙ্গে। দু’জনের বিয়ের গুঞ্জনও শোনা গিয়েছিল বি-টাউনে। শোনা যায় উদিত-দীপারও পছন্দ ছিল নেহাকে। আদিত্য তো বলেছিলেন রোহনের সঙ্গে এত কমদিনের পরিচয়ে কী ভাবে নেহা বিয়ে করলেন!
শেষমেশ সব বিতর্ক, গুঞ্জন পেরিয়ে মনের মানুষ খুঁজে পেয়েছেন নেহা। বিয়েতে উপহার পেয়েছেন প্রিয় গায়ক কুমার শানুর থেকেও। ভালবাসায়, ভাল লাগায় দিন আজীবন এক সঙ্গে কাটান দুই সঙ্গীতপ্রেমী।