পুষ্পা জোশীকে মনে আছে? বলিউডে ডেবিউ করা প্রবীণতম অভিনেতা তিনি। ২৬ নভেম্বর বয়সজনিত কারণে মৃত্যু হল ৮৬ বছরের এই অভিনেতার।
২০১৮ সালের অজয় দেবগণের থ্রিলার ড্রামা ‘রেড’। রামেশ্বর রামজি সিংহ ওরফে তাউজির বাড়িতে হানা দিয়েছেন আয়কর অফিসারেরা। সেই সিনেমাতেই প্রথম বলি পর্দায় দেখা যায় পুষ্পা জোশীকে।
ফিল্মে আম্মাজি হয়েছিলেন তিনি। তাউজির বৃদ্ধা মা। চোখে ভাল দেখতে পান না। চলাফেরাও খুব একটা করতে পারেন না। সারাদিন হয় নিজের ঘরে, নয় তো দোলায় বসে থাকতেন।
সেই আম্মাজির সরল কথাতেই আয়কর অফিসার অময় পট্টনায়েক (অজয় দেবগণ) বুঝতে পেরেছিলেন, তাউজির ঘরে কোথায় কোথায় লুকনো রয়েছে অবৈধ সম্পদ। কখনও উঠানের সিঁড়ি ভেঙে, বাগানে গর্ত ঘুঁড়ে, ঘরের সিলিং ফুঁড়ে, পিলার ভেঙে সেই সব সম্পদ উদ্ধার করেছিলেন অফিসাররা।
এই ফিল্মেই আম্মাজি পুপ্পা জোশী ৮৫ বছর বয়সে প্রথম অভিনয় করেন। তাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন দর্শকরা।
তার আগে অবশ্য একটি শর্ট ফিল্ম ‘জায়কা’-তেও তিনি অভিনয় করেছিলেন। জীবনে এই দুটো ফিল্মই তিনি করেছেন।
সম্প্রতি ফেভিকুইকের একটি বিজ্ঞাপন নিশ্চয় চোখে পড়েছে। সেই ‘কাবারিবালি দাদি’, যিনি ফেলে দেওয়া ভাঙা সানগ্লাস, কানের দুল সব কুড়িয়ে নিয়ে জুড়ে হাজির হন বাড়িতে। আর তাঁকে দেখে বিস্মিত হয়ে যায় একটি মেয়ে!
সেই ‘কাবারিবালি দাদি’ই পুষ্পা জোশী। জব্বলপুরে জন্ম তাঁর। মাত্র ১৪ বছর বয়সে মধ্যপ্রদেশের হরদা জেলার এক তহশিলদারের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। তারপর পুরোপুরি সংসারেই মনোনিবেশ করেন তিনি।
তবে ছোটবেলা থেকেই তাঁর অভিনয়ের প্রতি তীব্র আগ্রহ ছিল। নাটক এবং সঙ্গীত জোশী পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল।
তাঁর ছেলে রবীন্দ্র একজন থিয়েটার অভিনেতা আর নাতি আভাস গান-বাজনা নিয়ে থাকেন। তাঁর একটি গানের ব্যান্ডও রয়েছে।
পরিবারের সাহায্যেই পুষ্পা দেবী যৌবনে থিয়েটারে টুকটাক অভিনয় করেছেন। সেই সূত্রেই তিনি ‘জায়কা’ নামে ওই শর্ট ফিল্মে অভিনয়ের সুযোগ পান। আর ‘জায়কা’তে তাঁর অভিনয় দেখেই তাঁকে পরিচালক রাজকুমার গুপ্ত ‘রেড’ ছবিতে সুযোগ দেন।
যে বয়সে সবাই অভিনয় থেকে অবসর নিয়ে নেন, সেই বয়সে নিজের বলি জার্নি শুরু করেছিলেন তিনি।
ফোকলা মুখে অনাবিল হাসি আর অফুরন্ত এনার্জিতে মাতিয়ে রাখতেন পুরো শুটিং ফ্লোর। তাঁকে ওই ফিল্মে দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন দর্শক যে, রাতারাতি তিনি ইন্টারনেট সেনসেশন হয়ে গিয়েছিলেন। কাজল তাঁকে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
‘রেড’ ফিল্মে অভিনয়ের সময় থেকেই তিনি মধ্যপ্রদেশের হরদা থেকে মুম্বইয়ে নিজের ছেলে কাছে রয়েছেন। অস্টিওপোরোসিসের সমস্যা ছিল তাঁর। তাই বাড়িতেও খুব বেশি হাঁটাচলা করতে পারতেন না।
তাঁর মৃত্যুর খবরে শোকপ্রকাশ করেছেন পরিচালক রাজকুমার গুপ্ত। টুইটারে দুঃখপ্রকাশ করেছেন তাঁর অনেক ভক্তেরা।