অনুরাগ কাশ্যপ। ছবি: সংগৃহীত।
শনিবার কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে আগত সিনেপ্রেমীদের মুখে একটাই প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছিল, অনুরাগ কাশ্যপ কখন আসবেন? প্রত্যাশা মতো তিনি এলেন এবং সকলের মন জয় করে নিলেন। শনিবার সন্ধ্যায় নন্দন ১-এ দেখানো হল পরিচালকের সাম্প্রতিক ছবি ‘কেনেডি’। সানি লিওন এবং রাহুল ভট্ট অভিনীত এই ছবিটি তাঁর কাছে ‘ব্যক্তিগত থ্রিলার’ বলেই উল্লেখ করলেন অনুরাগ। ছবিটি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে উপচে পড়া ভিড়। অনুরাগ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ছবির অভিনেতা রাহুল ভট্ট এবং প্রযোজক রঞ্জন সিংহ। ছবির প্রদর্শনের আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ‘দেব ডি’ খ্যাত এই পরিচালক। তাঁকে সঙ্গে দেন বলিউডের আর এক চর্চিত পরিচালক সুধীর মিশ্র।
প্রায় ২০ বছর আগে সুধীরের জন্য একটি চিত্রনাট্য লিখেছিলেন অনুরাগ। বললেন, ‘‘ছবিটা আর হয়নি। কিন্তু সুধীরের থেকে চরিত্রগুলো আমি চুরি করে নিয়েছিলাম। অবশেষে ছবিটা তৈরি করতে পেরে ভাল লাগছে।’’ এই ছবিটি চলতি বছরে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু অনুরাগ জানালেন, তার তুলনায় মুম্বইয়ে ছবির প্রদর্শনের পর তিনি দর্শকের যে প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন, তা অনেক বেশি আন্তরিক। কারণ অনুরাগের কথায়, ‘‘এখানে তো সাবটাইটেল নেই। নিজের ভাষায় ছবি দেখে দর্শকের মনে কোনও প্রশ্ন জাগেনি। এ থেকে বুঝেছি যে, ছবি ভাল হয়েছে।’’
শুরু থেকেই অনুরাগ কম বাজেটে এবং প্রকৃত অভিনেতাদের নিয়ে ছবি করতে উৎসাহী। কিন্তু পর্দায় এখন মধ্যমেধার বাড়বাড়ন্ত। এই প্রসঙ্গে পরিচালক বললেন, ‘‘জাফর পানাহির মতো পরিচালককেও ছবি তৈরি করে ছবির মুক্তির জন্য লড়াই করতে হয়। আমি তো সেখানে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। কারণ এমন একটা দেশে বাস করি, যেখানে বছরে হাজারটা ছবি তৈরি হয় এবং বছরে আমি একটা ছবি তৈরি করতে পারি।’’ এই মুহূর্তে দেশে ওটিটিতে সেন্সরশিপ প্রয়োগ করা উচিত কি না, তা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। অনুরাগ জানালেন, তিনি যে কোনও রকম সেন্সরশিপের বিরোধী। পরিচালক বললেন, ‘‘আমি তো ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’-র সময় থেকে সেন্সরশিপের সঙ্গে লড়াই করছি। ছবি যদি ঠিক থাকে, তবে আমি লড়াই করতে রাজি। ঠিক যেমন করেছিলাম ‘উড়তা পঞ্জাব’-এর সময়।’’
'কেনেডি' প্রদর্শনের উপস্থিত (বাঁ দিক থেকে) অনুরাগ কাশ্যপ, রাহুল ভট্ট, মেঘা বর্মন ও রঞ্জন সিংহ। ছবি: সংগৃহীত।
একই সঙ্গে অনুরাগ মনে করেন, সেন্সর বোর্ডের গুটিকতক কর্তার উপর দোষারোপ করা অনুচিত। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই একটা উভয়সঙ্কট কাজ করে। ওঁরা ভয়ে থাকেন, যে ছাড়পত্র দেওয়া হোক বা না হোক, তা নিয়ে কোনও রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দেবেই।’’ এর সঙ্গেই অনুরাগের ব্যাখ্যা, ‘‘কোনও ছবিকে ঘিরে কতটা প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তা দেখে সেন্সর বোর্ড পরবর্তী ছবিকে ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যাপারে নীতি নির্ধারণ করে!’’ অনুরাগ কি নিজে কখনও সেন্সর বোর্ডে থাকতে চাইবেন? পরিচালক হেসে বললেন, ‘‘থাকতেই চাই না। কারণ আমি সেন্সর বোর্ডে থাকলে সব ছবিকেই ছাড়পত্র দিয়ে দেব।’’
‘অ্যানিম্যাল’ ছবিটি নিয়ে বিতর্ক এখনও অব্যাহত। ছবির অভিনেতা রণবীর কপূরের প্রশংসা করলেও পরিচালক সম্প্রতি জানিয়েছিলেন যে, তিনি তারকাদের নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক নন। কারণ কী? অনুরাগ বলেন, ‘‘কারণটা এই যে, আমাকে তাঁদের অনুরাগীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। আমি নিজের ছবি তৈরি করতে চাই, অন্য কারও প্রত্যাশা পূরণ করতে চাই না।’’ যেখানে দর্শকদের একটা বড় অংশ ‘অ্যানিম্যাল’-এর বিরোধিতা করছেন, অনুরাগ কিন্তু অন্য কথা শোনালেন। বক্স অফিস ধরে রাখতেই যে ছবিতে হিংস্রতা দেখানো হয়েছে, সে বিষয়েও একমত নন পরিচালক। অনুরাগ বললেন, ‘‘বক্স অফিসে সফল ‘পাঠান’ বা ‘জওয়ান’-এর মতো ছবিতে তো হিংস্রতা বা যৌনতা ছিল না। একটা ছবি দিয়ে কিছু বিচার করা যায় না।’’ বড় প্রযোজনা সংস্থার মূল লক্ষ্য যে ব্যবসা, সে কথা বিশ্বাস করেন অনুরাগ। পাশাপাশি এটাও বললেন, ‘‘বাণিজ্যিক ছবি তৈরি হয় বলেই কিন্তু সেখান থেকে মুনাফার টাকায় একটা অন্য ধারার ছবিতে বিনিয়োগ করতে পারেন প্রযোজক।’’ একই সঙ্গে অনুরাগ জানান, বক্স অফিস সাফল্য নয়, বরং তাঁর প্রযোজকের টাকা ফেরাতে পারলেই তিনি খুশি।
শহরে এসে কলকাতা নিয়ে তাঁর শৈশবের স্মৃতিও ভাগ করে নিলেন অনুরাগ। বললেন, "আমার দিদির শ্বশুরবাড়ি ছিল নবীনা সিনেমার কাছে। শুনেছিলাম, উৎপল দত্ত খুব কাছেই থাকেন। আমি গিয়ে ওঁর বাড়ির বাইরের গাছটায় পাথর ছুড়তাম।" এরই সঙ্গে অনুরাগ বললেন, ‘‘কলকাতায় প্রচুর বন্ধু রয়েছেন। আমি মাঝে মধ্যেই কলকাতায় আসি, তবে লুকিয়ে। যাতে ওঁদের সঙ্গে একটু সময় কাটাতে পারি।’’