সুন্দরী তরুণীর ছবি বাজিমাত করেছে ইন্টারনেটে। ইনি একজন ব্যবসায়ী ও ব্লগার। কিন্তু তার পাশাপাশি তাঁর আরও একটি পরিচয় আছে। একটি আইকনিক হিন্দি ছবির শিশুশিল্পী তিনি। হিন্দি ছায়াছবির ইতিহাসে মাইলফলক ছবি সেটি। একটুও কি আভাস পেলেন তরুণীর পরিচয় নিয়ে? আসুন, একবার ফিরে দেখি। খুঁজে দেখি তিনি কে।
ঝাঁকড়া চুলের ছোট্ট মিশেল ছিল একরোখা। অদম্য মনের জোরে এই মূক, বধির ও দৃষ্টিহীন বালিকা জয় করেছিল যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা। পর্দায় সেই চরিত্রের শৈশবকে জীবন্ত করে তুলেছিল এক খুদে, আয়েষা কপূর। ২০০৫ সালে সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ‘ব্ল্যাক’ ছবিতে। দেখে বোঝার উপায় ছিল না, ওটাই ছিল বড় পর্দায় তাঁর প্রথম অভিনয়।
আয়েষাকে বিস্ময়প্রতিভা আখ্যা দিয়েছিলেন চলচ্চিত্র সমালোচকরা। জন্ম ১৯৯৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। বড় হয়েছেন মিশ্র সাংস্কৃতিক পরিবেশে। বাবা দিলীপ কপূর পঞ্জাবি ব্যবসায়ী। চর্মজাত ব্যাগের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি ব্র্যান্ডের মালিক তিনি। মা জ্যাকলিন জার্মানির মেয়ে। ভাই মিলান এবং দুই দাদা আকাশ আর বিকাশের সঙ্গে বড় হয়েছেন আয়েষা। জ্যাকলিনের প্রথম বিয়ের সন্তান আকাশ ও বিকাশ।
ব্ল্যাক-এর পরে ২০০৯ সালে আরও একটি ছবি, ‘সিকন্দর’-এ অভিনয় করেছিলেন আয়েষা। এরপর বলিউডে বিশেষ দেখা যায়নি আয়েষাকে।
সে দিনের বালিকা আয়েষা আজ বছর পঁচিশের তরুণী। থাকেন পুদুচেরির অরোভিল-এ। তবে কাজের সূত্রে মাঝে মাঝেই উড়ে যেতে হয় নানা দেশে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে বহু দূরে তাঁর বিচরণক্ষেত্র। দেখভাল করেন নিজস্ব ব্যবসা, ‘আয়েষা অ্যাকসেসরিজ’। বড় বড় শহরের নামী বিপণিতে ঝলমল করে তাঁর ব্র্যান্ডের জিনিস।
মূলত মায়ের উৎসাহে শুরু ব্যবসা। তৈরি করেন পুরুষ, মহিলা এবং শিশু, সবার জন্য রকমারি অ্যাকসেসরিজ। পাশাপাশি লেখালেখিও করেন তিনি। তাঁর ব্লগে ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, লাইফস্টাইল এবং ভ্রমণ-সহ বিভিন্ন বিষয়ে লেখা থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় খুবই জনপ্রিয় তিনি।
আয়েষার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল বলছে তিনি সিঙ্গল নন। অনেক দিন ধরে ডেট করছেন অ্যাডাম ওবেরয়কে। শোনা যায়, এর আগে তাঁর সম্পর্ক ছিল শাহিদ কপূরের সৎ ভাই এবং ‘ধড়ক’ ছবির অভিনেতা ঈশান খট্টরের সঙ্গে।
স্কুলের ক্লাস ও পড়ার ফাঁকে ‘ব্ল্যাক’-এ অভিনয় করেছিলেন আয়েষা। সেরা সহ অভিনেত্রী বিভাগে ‘ফিল্মফেয়ার’-সহ নানা পুরস্কার এসেছে তাঁর ঝুলিতে। পরে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলাবিভাগে উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করেন তিনি।
‘ব্ল্যাক’-এ অভিনয়ের সময় আয়েষা বুঝতেও পারেননি তাঁর চারদিকে কী হয়ে চলেছে। তার আগে সে ভাবে হিন্দি সিনেমা তিনি দেখেনওনি। ছবির সেটে অমিতাভকে প্রশ্ন করেছিলেন, সেটা তাঁর প্রথম ছবি কি না। আয়েষার প্রশ্নে হেসে উঠেছিলেন বিগ বি এবং গোটা ইউনিট।
অমিতাভ বচ্চন, রানি মুখোপাধ্যায়ের মতো তারকার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছিলেন আয়েষা। জাতীয় পুরস্কার এবং মোট এগারোটা ফিল্মেফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল ‘ব্ল্যাক’। ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম আইকনিক ছবি ‘ব্ল্যাক’ প্রশংসিত হয়েছিল বিদেশের চলচ্চিত্র উৎসবেও।
ছোটবেলার মতো আবার খবরে বড়বেলার আয়েষা। ইনস্টাগ্রামে তাঁর সাম্প্রতিক ছবি ঝড় তুলেছে। যোগশিক্ষার উপযোগিতা নিয়ে বেশ কিছু ছবি দিয়েছেন তিনি। অনুরাগীদের লাইক, কমেন্টের বন্যায় ভেসে গিয়েছে তাঁর ছবি ও পোস্ট।
অভিনেত্রী পরিচয় এখনও ভালবাসেন আয়েষা। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর নামের পাশে লেখা থাকে ‘অভিনেত্রী ও শিক্ষার্থী’। জানিয়েছেন, সুযোগ পেলে ফের ফিরবেন বলিউডে। খুব ভাল লাগবে শেখর কপূরের পরিচালনায় অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কাজ করতে। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া