(বাঁ দিকে) পরিচালক ইন্দিরা ধর মুখোপাধ্যায়। ইমন চক্রবর্তী (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছে ইমন চক্রবর্তীর গাওয়া গান ‘ইতি মা’। এ খবর প্রচারিত হতেই আলাদা উৎসাহ তৈরি হয়েছে বাঙালির মধ্যে। কী ভাবে এই মঞ্চ পেল বাংলা ছবি, বিস্তারিত জানালেন ‘পুতুল’ ছবির পরিচালক ইন্দিরা ধর মুখোপাধ্যায়।
এই প্রথম অস্কার মনোনয়নে নাম তুলেছেন কোনও বাঙালি গায়িকা, বাংলা গানের জন্য। ২০২৫ সালের অ্যাকাডেমি পুরস্কারে সেরা মৌলিক গান বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে ‘পুতুল’-এর ‘ইতি মা’ গানটি। আগামী মার্চে ঘোষিত হবে পুরস্কার। এই মুহূর্তে চলছে ঝাড়াই-বাছাই। সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ৮৯টি গান ও ১৪৬টি আবহসঙ্গীতকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুরস্কার প্রাপ্তির লক্ষ্যে কতখানি লড়তে হবে ইমনকে? এই মূহূর্তে কোন ধাপে দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘ইতি মা’ গানটি?
জানা গিয়েছে, বিচারক দলের সদস্যেরা ১৫টি গান ও ২০টি আবহের জন্য ভোট দিতে পারেন। প্রাথমিক পর্বের ঝাড়াই-বাছাই শুরু হবে আগামী সপ্তাহে। ৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে প্রাথমিক ভোট পর্ব। সেখানে সফল হতে পারলে প্রাথমিক তালিকা প্রকাশিত হবে। সেই তালিকা প্রকাশ পাবে আগামী ১৭ ডিসেম্বর। তার পর মূল পর্বের নির্বাচন।
তবে শুধু ইমনের গাওয়া গানটিই নয়, আলাদা করে কোনও গান অস্কারে প্রবেশ করতে পারে না। বরং ‘পুতুল’ ছবিটিই রয়েছে অস্কারের দৌড়ে। পরিচালকের দাবি, অ্যাকাডেমি এই ছবিটি নির্বাচন করেছে। কী ভাবে? ইন্দিরা জানাচ্ছেন, ছবিটি অস্কারের সদস্যদের চোখে ঠিক কী ভাবে পড়ল সে সম্বন্ধে তাঁরও স্বচ্ছ ধারণা নেই এখনও। “আমার মনে হয় অস্কার কমিটির কাছে বিশ্বে কোথায় কোথায় ভাল কাজ হচ্ছে তার একটি তালিকা হয়তো থাকে। সেখান থেকেই ঝাড়াই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ওরা কিছু ছবিকে মনোনয়ন দেয়,” জানাচ্ছেন ইন্দিরা। সে ভাবেই হয়তো ‘পুতুল’ জায়গা করে নিয়েছে অস্কার দৌড়ে। ‘পুতুল’-এর নির্মাতারা অবশ্য এত বড় সুসংবাদটি অস্কার কমিটির তরফ থেকে এখনও সরকারি ভাবে জানেননি। তাঁদের এই দাবির ভিত্তি পুরোটাই একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যম। সেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবর জানাচ্ছে, কোন কোন গান ২০২৫ সালে অস্কার দৌড়ে থাকছে। সেই ৮৯টি গানের মধ্যে একটি ‘ইতি মা’। ইন্দিরার কথায়, “তেমন কোনও প্রস্তুতি ছিল না আমাদের। অ্যাকাডেমিই বেছে নিয়েছে আমাদের ছবিটি, অস্কার কেউ কিনতে পারে না।”
‘পুতুল’ ছবির শুটিংয়ের দৃশ্য। —নিজস্ব চিত্র।
২০২৫ সালে অস্কার মঞ্চে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবে কিরণ রাও পরিচালিত ছবি ‘লাপতা লেডিজ়’। সেখানে ইন্দিরার ‘পুতুল’ ছবিটি তবে কোন বিভাগে প্রতিনিধিত্ব করবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন পরিচালক নিজেও। তাঁর কথায়, “অ্যাকাডেমি সেরা ছবিগুলিকেই বাছাই করে। তাই এখানে অন্য কোনও প্রভাব খাটে না। ১৭ ডিসেম্বর অন্য বিভাগগুলি জানা যাবে, সেই অপেক্ষায় রয়েছি। সে দিন আরও স্পষ্ট হবে বিষয়টি। আমি শুধু একটি ভাল ছবি বানিয়েছি। যাঁরা কান-এ দেখেছেন, তাঁরা বলেছেন। এ বার দেখি, কী হয়! প্রথম কোনও বাংলা ছবির গান মূল বিভাগে প্রতিযোগিতায় রয়েছে। তাই আমি সেটি নিয়ে খুশি। এটা আমাদের সকল বাঙালির জয়।”
এ বার ইমনকে টক্কর দিতে হবে লেডি গাগা, এলটন জন, মাইলি সাইরাস, এড শিরানের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তারকাদের সঙ্গে। এই প্রসঙ্গে ইন্দিরা বলেন, “আমরা যখন গানটা বানিয়েছিলাম, তখন তো এ রকম কোনও প্রত্যাশা নিয়েই বানাইনি। ছবিটা তৈরি করতে পাঁচ বছর সময় লেগেছে আমার। এখন যখন শুনছি, আমাদের ছবির গান প্রতিযোগিতায় লড়ছে লেডি গাগা, এলটন জন, মাইলি সাইরাসদের সঙ্গে, কেমন যেন অবিশ্বাস্য লাগছে।”
তবে একটু আক্ষেপ রয়েছে পরিচালকের। যখন ছবিটি কান উৎসবে দেখানো হয়েছিল, সেই সময় তেমন প্রচার পায়নি। ইন্দিরার কথায়, “যে সব বাংলা ছবি আন্তর্জাতিক মঞ্চে যাচ্ছে, তাদের নিয়ে আর একটু বেশি করে কথা হোক। এটুকুই চাই। তা হলেই তো নতুন কাজ করার উৎসাহ বাড়বে।”
অস্কারে যাওয়ার আগে ছবিটি দেখানো হয় কান চলচ্চিত্র উৎসবে। সেখানে থেকে একটা আন্তর্জাতিক পরিচিত পেয়েছিল বলেই দাবি ইন্দিরার। এমনকি সেখানে এক দিন একটি বিশেষ প্রদর্শনীও হয় ‘পুতুল’ ছবিটির। আগামী ১৩ ডিসেম্বর আমেরিকায় ও ২৭ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পাবে এই ছবি।
ভারতীয় ছবি হিসাবে এর আগে ২০০৯ সালে সেরা শব্দমিশ্রণ, সেরা গান (‘জয় হো’), সেরা সুরের পুরস্কার পেয়েছিল ‘স্লামডগ মিলেয়নেয়ার’। ‘জয় হো’ গানের সুরকার এআর রহমান, গীতিকার গুলজ়ার। এ ছাড়াও, ওই ছবির ‘ও সায়া’ গানটি মনোনয়ন পেয়েছিল। ২০২৩ সালে ‘আরআরআর’ ছবির ‘নাটু নাটু’ গানটি সেরার পুরস্কার পায় অস্কার মঞ্চে। এ বার ইমনের গাওয়া ‘ইতি মা’ গানটি শেষ পর্যন্ত দেশের মুখরক্ষা করতে পারে কি না, সেটাই দেখার।