অপুর চরিত্রে অর্জুন এবং অপর্ণার চরিত্রে দিতিপ্রিয়া। নিজস্ব চিত্র।
সাদা-কালোতে ফিরছে অপু-অপর্ণা, ফিরছে বাঙালির নস্টালজিয়া, আরও একবার...‘অভিযাত্রিক’-এর হাত ধরে। পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র। অপর্ণার ভূমিকায় রয়েছেন দিতিপ্রিয়া রায় আর অপুর চরিত্রে অর্জুন চক্রবর্তী। অপু-অপর্ণার চরিত্রে অর্জুন-দিতিপ্রিয়াকে কেমন লাগবে, তা নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে কৌতূহলঅনেকদিন ধরেই দানা বাঁধছিল। অবশেষে শেষ হল প্রতীক্ষা। প্রকাশ পেল ছবির চরিত্রদের ফার্স্টলুক। প্রযোজনার গুরুভার তুলে নিয়েছেন গৌরাঙ্গ জালান।
সত্যজিতের পরিচালনায় ৬০ বছর আগে ইতিহাস রচনা করেছিলেন সৌমিত্র-শর্মিলা। তাঁদের সেই সম্পর্কের সমীকরণ আজও বাঙালি বিস্মৃত হতে পারেনি। সদ্য বিয়ে হয়ে আসা অপর্ণা স্বামীর সিগারেটের প্যাকেটে লিখে রেখেছে, ‘খাবার পরে, একটা করে। কথা দিয়েছ!’— বাঙালির মননে আজও টাটকা! আবার সেই ম্যাজিককে রি-ক্রিয়েট করতে গেলে তুলনা যে আসবে সেসম্পর্কে ওয়াকিবহাল শুভ্রজিৎ-অর্জুনরা। কিন্তু প্রথম থেকেই টিম ‘অভিযাত্রিক’ বলে আসছিল, অপু চরিত্রের স্রষ্টা বিভূতিভূষণ এবং অপু-দুর্গার আখ্যানকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার জনক সত্যজিতের প্রতি এই ছবি ‘সামান্য ট্রিবিউট’।
সম্প্রতি সমাপ্ত হয়েছে ওই ছবির শুটিং। পরিচালক আগেই জানিয়েছিলেন, ভারতের বিভিন্ন জায়গায় শুট হবে ‘অভিযাত্রিক’-এর। অপু-দুর্গাকে নিয়ে বাঙালির ইমোশন জড়িয়ে, তাই প্রথম থেকেই ছবিনিয়ে কোনওরকম আপোস করতে রাজি ছিলেন না পরিচালক। কথামতোই বারাণসী, বাংলার ডুয়ার্স, টাকি, বোলপুরে করা হয়েছে অভিযাত্রিকের শুটিং।
কিন্তু এই ছবির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার কি জানেন? পুরো ছবিটাই শুট করা হয়েছে সাদা-কালোতে। হ্যাঁ, এই চোখধাঁধানো গ্ল্যামার আর ডিজিটালের যুগে একটা গোটা ছবি সাদা-কালোতে! পরিচালককে সে কথা জিজ্ঞাসা করতেই শুভ্রজিৎ বলেছিলেন, “আন্তর্জাতিক স্তরে গিয়ে দেখলে এখনও অনেক ছবি সাদা-কালোতে শুট করা হচ্ছে। আর ‘অভিযাত্রিক’-এর আবেদন আন্তর্জাতিক মানের। সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত। ৬০ বছর আগে ফিরতে চলেছি আমরা। সেই ফিলটা, মুডটা তুলে ধরার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।”
আরও পড়ুন-‘দয়া করে শুনুন, আমার সঙ্গে কিন্তু জুনের বিয়ে হচ্ছে না!’
ছেলে কাজলের সঙ্গে অপু, সঙ্গী শঙ্কর (সব্যসাচী চক্রবর্তী)
একই সুর শোনা গেল সিনেমাটোগ্রাফার সুপ্রতিম ভোল-এর গলাতেও। এর আগে ‘সহজপাঠের গপ্পো’-তেও ডিওপি-র দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। সুপ্রতিমের ভাষায়:‘‘অনেকদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। আর সিনেমাটোগ্রাফারের কাছে সাদা-কালোতে শুট করা মানে কোহিনূর পাওয়ার সমান।তা ছাড়া যে সময়টাকে ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটে শুট করাটা দরকার ছিল। তা ছাড়া স্ক্রিপ্ট যেটা দাবি করবে সে ভাবেই তো করতে হবে। আর ওই সাদা-কালোকে এ যুগে ফিরিয়ে আনা কিন্তু কারও ব্যক্তিগত মতামত ছিল না। সবাই মিলেই ঠিক করা হয়েছে।”
পরিচালক শুভ্রজিতের তারিফও শোনা গেলসুপ্রতিমের গলায়। বললেন, “শুভ্রজিৎ স্ক্রিপ্টটা খুব ভাল লিখেছে। যে যে জিনিসগুলোকে ও স্ক্রিপ্টে ঢুকিয়েছে তা নিয়ে আগে হয়তো সেভাবে সত্যজিৎ রায়ও ছোঁননি। যেমন লীলার চরিত্র, শঙ্করের চরিত্র।”
আরও পড়ুন-একটা সুযোগ দিয়ে দেখুন, ভাল লাগলে হাততালি দেবেন, না হলে গালাগালি: টোটা
শুভ্রজিৎকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল,‘অপু’-র মতো স্পর্শকাতর, নস্টালজিক একটি চরিত্র নিয়ে কাজ করার কথা মাথায় এল কেন? আনন্দবাজার ডিজিটালের এই প্রশ্নে পরিচালক বলেছিলেন, “আমরা প্রায় প্রত্যেকেই অপু ট্রিলজি দেখেছি।অপরাজিত উপন্যাসটা পুরো পড়লে দেখা যাবে, এক তৃতীয়াংশ সিনেমাতে দেখানো হয়নি। মাঝে ষাটটা বছর চলে গিয়েছে। কিন্তু কাউকেই আর সেই না বলা গল্পটা বলতে শোনা যায়নি।” শুভ্রজিতের কথায়: ‘‘সিনেমার ছাত্র বা দর্শক হিসেবে অপুর জার্নি সব সময়ে ফ্যাসিনেট করেছে আমাকে।‘অপরাজিত’ উপন্যাসের ৬০ শতাংশ নিয়ে দু’টো ছবি হয়েছে। কিন্তু অপুর ছেলে, অর্থাত্ কাজলের সঙ্গে জার্নিটা বাকি। এটা আমাকে ভাবাত। অপরাজিত উপন্যাসের শেষ ৪০ শতাংশ নিয়ে আমার ছবি।’’
১৯৫৯-এর পটভূমিকায় ঠিক যেখানে ‘অপুর সংসার’শেষ হয়েছিল, সেখান থেকেই গল্প বলা শুরু করবে ‘অভিযাত্রিক’। খুব শীঘ্রই বড় পর্দায় মুক্তি পাবে ওই ছবি।