মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ও শ্রীলেখা মিত্র।
নন্দীগ্রাম আর নিউটাউনে তিনি শ্বেতশুভ্র। বাদবাকি দিন কট্টর ‘লাল’। ২১-এর ব্যালট বক্সে এই লাল রং ছাপ ফেলতে পারবে? নন্দীগ্রামের মতো চর্চিত কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে টক্কর দিতে পারবেন বাম প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়? দলের হয়ে প্রচারের পাশাপাশি রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক ছবি আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে তুলে ধরলেন শ্রীলেখা মিত্র
প্রশ্ন: প্রত্যক্ষ প্রচারে প্রথম বার। কেমন লাগছে?
শ্রীলেখা: ‘দুঃখিত বিজেমূল! তুমি বুঝবে না এটা কেমন লাগছে’। ঝান্ডা হাতে নেটমাধ্যমে ছবি পোস্ট করে এই ক্যাপশনই দিয়েছি। এটাই আমার অনুভূতি।
প্রশ্ন: প্রত্যেক দিন পোশাকে, রোদচশমায়, নাকছাবিতে, হেয়ার স্টাইলে বৈচিত্র। সচেতন ভাবেই সব কিছু?
শ্রীলেখা: আমার ভীষণ গরম বাতিক। তাই নন্দীগ্রামে সাদা, ঢিলেঢালা পোশাক পরেছিলাম। যাতে রোদে কষ্ট না হয়। প্রার্থী দেবদূত ঘোষের প্রচার কেন্দ্র তুলনায় কাছে। তাই সে দিন শাড়ি পরেছিলাম। ভেবেচিন্তে কিচ্ছু করছি না। সুতির পোশাক পরার চেষ্টা করছি আরাম পাব বলে। আর রোদচশমা নিয়ে আমার দুর্বলতা প্রচুর। আগের দিনের সানগ্লাস পরের দিন পরি না। তাই একেক দিন একেক রকমে চোখ ঢাকছি।
প্রশ্ন: প্রার্থী হননি। রাজনীতিতেও এক্ষুনি আসবেন না। কিসের টানে রোদে পুড়ে প্রচারে বেরচ্ছেন?
শ্রীলেখা: জানি, এই প্রশ্ন ঘুরছে অনেকের মনেই। অনেকে বলছেন, কিসের আশায় ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াচ্ছেন শ্রীলেখা মিত্র? কোনও কিচ্ছু পেতে নয়, ভিতরের আবেগ থেকে প্রচারে অংশ নিয়েছি। টাকার আশায় করলে অনেক আগেই শাসকদলে যোগ দিতে পারতাম। ডাক এসেছিল। দিইনি, বিক্রি হইনি বলে। যাঁরা বিক্রি হয়ে গিয়েছেন, তাঁরা এই অনুভূতি বুঝবেন না।
প্রশ্ন: আপনাদের কথা শুনছে জনগণ? বুঝছে?
শ্রীলেখা: যাঁরা শোনার, বোঝার ঠিকই শুনছেন, বুঝছেন। আর যাঁরা অল্পে সন্তুষ্ট, চাকরির বদলে স্বল্পমেয়াদের টাকায় খুশি তাঁরা কান বন্ধ করে আছেন।
প্রশ্ন: রাজ্য রাজনীতির সাম্প্রতিক ছবি কেমন দেখলেন?
শ্রীলেখা: মানুষের হারানো আবেগ দেখলাম। মীনাক্ষীর কেন্দ্র নন্দীগ্রামে গিয়ে দেখলাম, ওখানকার মানুষদের তিনি ভীষণ কাছে টেনে নিয়েছেন। এখনই কী জনপ্রিয়! অথচ কিছু দিন আগেও ওঁকে ঠিকমতো কেউ চিনতেন না। মীনাক্ষীর কথা, আচরণ, ওঁর মায়াময় মুখ... আমি কিন্তু ‘মমতা’ বলছি না-- সব মিলিয়ে তিনি সবাইকে জিতে নিয়েছেন। দূর থেকে ওঁকে দেখেই ছুটে আসছেন, আশীর্বাদ করছেন, আনন্দে কেঁদেও ফেলছেন গ্রামবাসী। অনেকে জানতে চাইছেন, গত ২ বার ভোট দিতে পারিনি। এ বারের ভোটটা দিতে পারব তো?
প্রশ্ন: নন্দীগ্রামের মতো হেভিওয়েট কেন্দ্র। বিপরীতে মুখ্যমন্ত্রী, শুভেন্দু অধিকারী। মীনাক্ষী জিততে পারবেন?
শ্রীলেখা: বিরোধী পক্ষের অনেক টাকা। ওঁরা কেউ হেলিকপ্টারে, কেউ দামি গাড়িতে চড়ে প্রচার সারছেন। টাকা দিয়ে প্রার্থী কিনছেন। সেই রকমই টাকা দিয়ে নন্দীগ্রামের অভাবী মানুষদের না কিনে মীনাক্ষী জিতবেন। শাসকদলের বিরুদ্ধে ওখানকার মানুষদের প্রচুর অভিযোগ। মীনাক্ষী সবাইকে কাজের কথা বলেছেন। চাকরির কথা বলেছেন। ভাতা দেওয়ার কথা বলছেন না। ফলে, মানুষও ওঁকে বিশ্বাস করছেন। আবারও বলছি, অবাধ ভোট হলে নন্দীগ্রামে ইতিহাস গড়বেন মীনাক্ষী।
প্রশ্ন: বাম দলের প্রার্থীদের কার, কেমন অবস্থান? তারকা প্রার্থী বলে কি দেবদূত ঘোষ এগিয়ে?
শ্রীলেখা: বাম দলে সবাই সমান। আর দেবদূত বহু বছর ধরে লাল শিবিরের কর্মী। তা ছাড়া, দেবদূত নিজের পেশা ভাঙিয়ে টিকিট পাননি। বাকি দলে যা হচ্ছে। এমনও অনেককে দেখছি, রাজনৈতিক যোগ ছাড়াই শুধু নিজস্বী তুলে এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন! তাঁরা কেউ কোনও দিন কোনও কাজ করেননি। তারকা যোগ যদি বলতেই চান, বাম শিবিরে সেটাও হাতেগোনা। আমি, বাদশা মৈত্র, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, তরুণ মজুমদার, অনীক দত্ত, সব্যসাচী চক্রবর্তী, মানসী সিংহ দলে রয়েছি। অনীকদা, তরুণবাবু অসুস্থ। সম্প্রতি, চিঠি লিখে তরুণবাবু মীনাক্ষীকে সমর্থন জানিয়েছেন।
প্রশ্ন: শত্রু শিবির গুঁড়িয়ে আবার ক্ষমতায় ফিরতে পারবে লাল শিবির?
শ্রীলেখা: ফিরতেই পারে। কিন্তু চ্যানেলে চ্যানেলে যে ভাবে বাইনারি ভোটযুদ্ধ দেখানো হচ্ছে, সেখানে তৃতীয় পক্ষের তো কোনও অস্তিত্ত্বই নেই! নেটমাধ্যম যদিও তা বলছে না। বামেদের যদি দূরবিন দিয়েই দেখতে হয়, তা হলে ব্রিগেডে এত লোক হল কেন? মীনাক্ষীর মাইক ভেঙে দেওয়ারও কোনও দরকার পড়ত না। ধনেখালিতে তৃণমূল প্রার্থীকে ঝাঁটা মেরে অঞ্চলছাড়া করা হয়েছে, জানেন? সবার দাবি, গত ১০ বছরে নাকি কোনও উন্নয়ন হয়নি সেখানে। জনগণই আবার ফেরাতে চাইছে বামফ্রন্টকে। একটা কথা বলি?
প্রশ্ন: নিশ্চয়ই, বলুন...
শ্রীলেখা: প্যারোডি গান, হল্লা গাড়ি, এই প্রজন্মের প্রার্থী-- সব মিলিয়ে বাম দল কিন্তু ভীষণ সমসাময়িক। নিজেদের আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে সব কিছুতেই। এই ছাপ ব্যালট বক্সে, মানুষের মনে পড়তে বাধ্য।