কলকাতায় ঝটিকা সফরে অপু বিশ্বাস, কেরিয়ার, বৈবাহিক জীবন নিয়ে আলাপচারিতায় অভিনেত্রী। ছবি: সংগৃহীত।
কলকাতায় ঝটিকা সফরে বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস। এসেছিলেন কলকাতা বইমেলায়। তার মাঝেই প্রাণখোলা আড্ডা দিলেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে। সদা হাসিখুশি নায়িকার ব্যক্তিগত জীবনে ওঠাপড়া কম নেই। তাঁর গল্প হয়তো হার মানাবে সিনেমার চিত্রনাট্যকেও। বাংলাদেশের ‘কিং খান’ শাকিব খানের স্ত্রী, পাশপাশি ছেলের দায়িত্ব। তাঁকে ঘিরে থাকা নানা বিতর্কের সোজাসাপটা উত্তর দিলেন অপু বিশ্বাস। জানালেন নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও।
প্রশ্ন: অপু বিশ্বাসের কলকাতায় যাতায়াত বেশ বেড়েছে, কাজের সংখ্যা কি বাড়ল এ পারে?
অপু: হ্যাঁ ঠিকই বলছেন, আশা করছি কাজের সংখ্যা বাড়বে। এত দিন বাংলাদেশে ব্যস্ততার কারণে সময় দিতে পারিনি। এখন সময় আছে, তাই আশা করছি কলকাতায় যাতায়াতের পাশপাশি কাজের জায়গাটাও বাড়বে।
প্রশ্ন: কোন প্রযোজনা সংস্থায় চেষ্টা করছেন?
অপু: আসলে বহু দিন ধরেই আমার বেশ কিছু প্রস্তাব আসছিল এখান থেকে। কিন্তু বাংলাদেশে কিছু কাজের দায়বদ্ধতা থাকায় তখন করে উঠতে পারিনি। বলতে পারেন ১২ মাসও যেন কম ছিল। তবে এখন সেই সময় পেয়েছি। আশা করছি, এখন দুই বাংলায় সময় দিতে পারব।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের শিল্পীদের জন্য এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে একটা উন্মাদনা লক্ষ করা যাচ্ছে। সেই দেশের শিল্পী হয়ে কতটা উপভোগ করেন?
অপু: পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যে কাঁটাতার ছাড়া আর কোনও অমিল দেখি না। আমাদের সংস্কৃতি, ভাষা, সৃষ্টি সবই তো এক। ঋতুপর্ণা দিদি, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়রা তো বাংলাদেশের কাজ করেছেন। অন্য দিকে, আমাদের দেশের ফিরদৌস ভাইও খুব জনপ্রিয় ছিলেন দুই বাংলায়। তাই এই মেলবন্ধনটা বহু দিনের।
সদা হাসিখুশি নায়িকার ব্যক্তিগত জীবনে ওঠাপড়ার গল্প নেহাত কম নয়। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: ‘হাওয়া’-র পর চঞ্চল চৌধুরীকে নিয়েও বাড়তি উত্তেজনা তৈরি হয়েছে...।
অপু: আমাদের দেশে এক জন চঞ্চল চৌধুরী আছেন সেটা ভেবে ভীষণ গর্ব বোধ হয়।
প্রশ্ন: কলকাতার মতো বাংলাদেশেও কি এই পরিমাণ উন্মাদনা লক্ষ করেন চঞ্চলকে নিয়ে?
অপু: চঞ্চল ভাইকে নিয়ে একটাই কথা বলব, উনি খুবই মেধাবী, চতুর ও বুদ্ধিমান। কখন কোন কাজটা করা প্রয়োজন, সেই ধারণাটা করতে পারেন। যেটা সকলের থাকে না।
প্রশ্ন: ক্যামেরার সামনে সব সময় হাসিখুশি, মনখারাপ কি হয় না অপু বিশ্বাসের?
অপু: না না, হয় তো মনখারাপ। আসলে এত কম বয়সে মা-বাবাকে হারিয়েছি এটা আক্ষেপ। কিন্তু ছেলে জয় অবশ্য সেই কষ্টে প্রলেপ লাগিয়েছে। ও আমার মা, ও-ই বাবা। দিনের শেষে বাড়ি ফিরে আশ্রয়টা মিস করি। আবার রাগ দেখানোর লোকের অভাব। তবে অনুরাগীদের থেকে পাওয়া ভালবাসা এই সব দুঃখ ভুলিয়ে দেয়।
কলকাতা বইমেলায় অপু বিশ্বাস। ছবি: ফেসবুক।
প্রশ্ন: সদ্য নিজের প্রযোজনা সংস্থা খুলেছেন, কলকাতার কোনও শিল্পীকে কি নিজের ছবিতে নিতে চাইবেন?
অপু: খুব কঠিন প্রশ্ন, সত্যিই জানি না।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ থেকে যে সব শিল্পী এখানে কাজ করেন, সকলেই মোটামুটি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করেন, আপনার ইচ্ছে নেই?
অপু:আসলে সৃজিতের সঙ্গে আমার আগে কখনও কথা হয়নি সে ভাবে। ভবিষ্যতে কী হবে, জানি না। কর্ম নিজের গতিতেই চলে। আমি যখন কাজ করতে আসি, বাংলাদেশে সেই সময় অনেক অভিনেত্রী ছিলেন। কিন্তু তাঁরা সে ভাবে কাজ পাননি। উল্টো দিকে, আমি একের পর এক কাজ করছি। প্রযোজক-পরিচালকরা অপেক্ষা করেছেন আমার জন্য। সবটাই সময়। সৃজিতের সঙ্গে কথা বলে যদি কাজের জায়গা তৈরি হয়, কিংবা আমাকে যদিও কোনও চরিত্রে প্রয়োজন হয় তা হলে নিশ্চয়ই সেটা বাস্তবায়িত হবে।
প্রশ্ন: কলকাতার কোন জিনিসটা ঢাকায় নেই?
অপু: কলকাতার ফুচকা, আটার রুটি আর রাস্তার ধারের রকমারি খাবার যেটা ঢাকায় পাওয়া যায় না। আসলে কলকাতার মধ্যে একটা সাবেকি ব্যাপার রয়েছে। তবে কলকাতায় এলে মনেই হয় না, দেশের বাইরে আছি।
প্রশ্ন: দেশের বাইরে এলে ছেলের দেখভাল কে করেন?
অপু: আমি না থাকলে জয় ওর ঠাকুমা, দাদু, পিসি, বাবার সঙ্গে সময় কাটায়। সেই বাড়িতেই থাকে।
স্বামী শাকিব খান ও ছেলে জয়ের সঙ্গে অপু। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: আপনি আর শাকিব খান তা হলে সন্তানের কো-প্যারেন্টিং করছেন?
অপু: আমাদের দু’জনের কাছে এখনও সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যটাই অগ্রাধিকার পায়। একসঙ্গে থেকে হোক কিংবা না থেকে। জয় জানে, তাঁর বাবা-মা দু’জনেই ব্যস্ত। তাই কখনও আমি তাঁকে স্কুলে পৌঁছে দিই, শাকিব ওকে নিয়ে আসে— এ ভাবেই চলছে।
প্রশ্ন: তা হলে আপনার ও শাকিব খানের সম্পর্ক এখন ঠিক কোনও জায়গায় দাঁড়িয়ে, আপনারা কি বিবাহিত?
অপু: সেটা এখনই বলছি না, উহ্য থাক। সময় এলে গণমাধ্যমকে জানব। তবে আগের মতো ক্ষোভ রাখতে চাই না।
প্রশ্ন: একটা সময় শ্বশুরবাড়ি উপর একাধিক অভিযোগ ছিল আপনার, এই পরিবর্তনটা সম্ভব হল কী ভাবে?
অপু: আসলে আমরা শিল্পীরা খুব আবেগপ্রবণ। অনেক সময় এমন কিছু বলে ফেলি, পরে তা শুধরে নেওয়ার জায়গা থাকে না। আমি তো চাইলেও সেটা মুছতে পারব না। আসলে যখন কথাগুলি বলেছিলাম ওদের প্রতি রাগ ছিল, আমি একটু অবসাদের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি ওঁদের কাছে ক্ষমা চাইতে চাই। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি খুব ভাল মানুষ। আমি ভাগ্যবান ওঁদের পেয়েছি, আমার জীবনে বাবা-মায়ের ঘাটতি পূরণ করছেন ওঁরাই।
প্রশ্ন: বুবলির সন্তান আর আপনার ছেলে কি একসঙ্গেই বড় হচ্ছে শাকিবের বাড়িতে?
অপু: আসলে সন্তান তো সন্তানই হয়। আমি নিজে মা হওয়ার পর থেকে উপলব্ধি করেছি পৃথিবীর সব সন্তানই আমার স্নেহের।
প্রশ্ন: এখনও কি তা হলে সবটাই এক সুতোয় বাঁধা?
অপু: (হাসি) আসলে আজকে শাকিব যদি আমার পাশে না থাকত, তা হলে এই অপু বিশ্বাস হত না। সহ-অভিনেতা হয়ে আমাকে অভিনয়ের খুঁটিনাটিতে সাহায্য করেছে সে। আমার কেরিয়ারে ৮০ শতাংশ কৃতিত্ব শাকিবের, বাকিটা আমি অর্জন করেছি। তাই ওঁর প্রতি সারা জীবন সেই সম্মান থাকবে।
প্রশ্ন: জয়ের মা হওয়া কঠিন, না কি শাকিবের স্ত্রী হওয়া?
অপু: অনেক বাধা পেরিয়ে মা হয়েছি। তাই মা হওয়াটা খুব কঠিন।
বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিতে দিদি এক জনই অপু। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: অপু বিশ্বাসকে লোকে আপা বলেন, না কি দিদি?
অপু: বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রিতে দিদি এক জনই— অপু। আসলে বাংলাদেশে আমার আগে অনেক নায়িকা এসেছেন যাঁরা হিন্দু। কিন্তু কোনও কারণে ধর্ম পরিবর্তন করেছেন। যার ফলে তাঁদের আপু বা আপা ডাকা হয়েছে। আমি প্রথম দিন থেকেই বলেছি, আমি অপু বিশ্বাস, আমি হিন্দু, আমাকে দিদি বলবে। ওখানে আমার নাম হয়ে গিয়েছে ‘অপুদি’, অপু বিশ্বাস নেই আর।
প্রশ্ন: শাকিব খানের একের পর এক সম্পর্ক নিয়ে এত ধরনের গুঞ্জন, কেমন লাগে যখন শোনেন?
অপু: এক জন সুপারস্টারকে নিয়ে যদি গুঞ্জন না হয়, তা হলে সে কিসের সুপারস্টার? এটা তাঁর কৃতিত্ব, এখনও তাঁকে নিয়ে গুঞ্জন হয়, অন্যদের নিয়ে হয় না। নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে দু-একটা প্রেমের গুঞ্জন না থাকলে পর্দায় রোম্যান্স ফুটিয়ে তুলবেন কী ভাবে! আমি সাধুবাদই জানাই।
প্রশ্ন: ভবিষ্যতে কি ঘর বাঁধার পরিকল্পনা রয়েছে?
অপু: কেরিয়ার নিয়ে খুব ব্যস্ত এখন, কলকাতায় এখন কাজের চেষ্টা চলছে। তাই কাজটাই ফোকাস।