সুন্দরী নায়িকাদের সঙ্গে রোমান্স করছেন স্বামী। আর তিনি বাড়িতে বসে আছেন তিমিমাছ হয়ে! কিছুতেই কিছু ভাল লাগত না। মনে হত এ বার বিয়েটা শেষ করেই ফেলবেন। এ রকমই ইচ্ছে হত অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়। জানিয়েছেন তাহিরা কশ্যপ। একাধিক সাক্ষাত্কারে এই স্বীকারোক্তি এসেছে জাতীয় পুরস্কারজয়ী অভিনেতা আয়ুষ্মান খুরানার ঘরনির কাছ থেকে।
স্বামীর জন্যই টিকে গিয়েছে বিয়ে। আয়ুষ্মানই চাননি সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে আসতে। একইসঙ্গে এই কথাটাও জানাতে ভোলেননি লেখিকা-পরিচালক এবং থিয়েটার ব্যক্তিত্ব তাহিরা।
বয়সে কয়েক মাসের বড় আয়ুষ্মানের সঙ্গে তাহিরার আলাপ পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে। দু’জনেই মাস কমিউনিকেশনের পড়ুয়া ছিলেন। থিয়েটারের প্রতি ভালবাসা থেকেই গাঢ় হয় প্রেম। দু’জনে বিয়ে করেন ২০০৮-এ।
তখনও আয়ুষ্মান ঠিক করেননি কোনদিকে নিয়ে যাবেন কেরিয়ারকে। ব্যস্ত ছিলেন টেলিভিশন শো এবং রেডিয়ো সঞ্চালনা নিয়ে। কিন্তু সাংবাদিক বা রেডিয়ো-টেলিভিশন জকি, কোনওটাই হওয়া হল না। ২০১২ সালে সুজিত সরকারের ‘ভিকি ডোনর’ তাঁকে নিয়ে এল বড় পর্দায়। প্রথম ছবির সাফল্যের পরে আয়ুষ্মান আর অভিনয় ছেড়ে অন্যদিকে যাওয়ার কথা ভাবেননি।
এ দিকে কেরিয়ারের মোড় ঘুরে গেল, অন্যদিকে বাড়িতে উত্তপ্ত হল পরিস্থিতি। তাহিরা কিছুতেই মেনে নিতে পারতেন না তাঁর স্বামী ছবিতে নায়িকাদের চুমু খাচ্ছেন! পরে তাহিরা বলেছেন, তাঁর আর আয়ুষ্মানের, দু’জনেরই তখন বয়স কম। বলতে গেলে, তাঁরা একে অন্যের জীবনে প্রথম পুরুষ এবং প্রথম নারী। ফলে অধিকারবোধ কাটিয়ে ওঠা তাঁর পক্ষে কাটিয়ে ওঠা সহজ ছিল না।
তাহিরা নিজেও থিয়েটার-অন্ত-প্রাণ ছিলেন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু তিনি অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেননি। তিনি অধ্যাপনা করেছেন মুম্বইয়ের মিঠিবাঈ কলেজ এবং আর ডি ন্যাশনাল কলেজ ও ডব্লু এ সায়েন্স কলেজে। পরবর্তী কালে একটি নামী রেডিয়ো চ্যানেলের প্রোগ্রামিং হেড ছিলেন।
কিন্তু এত দিকে শাখা বিস্তার করলেও অন্তঃসত্ত্বা অবস্থার ডিপ্রেশন তিনি কাটিয়ে উঠতে পারতেন না। সে সময়ে আয়ুষ্মানকে কাজ করতে দেখলেই তাঁর ডিপ্রেশন বেড়ে যেত। বুঝতে পারতেন, তাঁর স্বামী কোনও প্রতারণা করছেন না তাঁর সঙ্গে। কিন্তু তারপরেও অভিনয় শিল্পের মাধ্যম হিসেবেও পর্দায় অন্য নায়িকার সঙ্গে স্বামীর চুম্বনদৃশ্য মেনে নিতে পারতেন না। ফলে অন্তত তিন বছর তাঁদের দাম্পত্য এগিয়েছে টালমাটাল পথে।
তাহিরা বা আয়ুষ্মান, কেউ বাড়তি কিছু করেননি দাম্পত্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। বরং, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যে পরিণতমনস্কতা এসেছে, তাতেই মেরামত হয়ে গিয়েছে সম্পর্কের ভাঙাচোরা দিক। যে কোনও সম্পর্ককেই তার প্রয়োজনীয় সময় দিতে হয়। সেটা তাঁদের সম্পর্কেও দিতে হয়েছে। দাম্পত্যের ১২ বছর পেরিয়ে সে কথা স্বীকার করেন আয়ুষ্মান-তাহিরা।
এই সময় দেওয়ার টানাপড়েনে পড়ে জীবনের খারাপ সময়ের পর্বও। তেমনই এক অন্ধকার হঠাতই নেমে এসেছিল খুরানা দম্পতির দাম্পত্যে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আয়ুষ্মান ব্যস্ত ‘বধাই হো’, ‘অন্ধাধুন’-এর প্রচারে। তাঁদের ছেলে বীর্যবীরের বয়স চার বছর। মেয়ে বরুষ্কা দুই বছরের। জানা গেল, তাহিরা ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত।
শুনে যেন পায়ের নীচে জমি সরে গিয়েছিল। খবরটা জানার পরে এক সপ্তাহ দু’জনে রাতে ঘুমোতে পারেননি। তাহিরা রাত জেগে শুধু কাঁদতেন। আবার সকালে চোখ মুছে হাসিমুখে দাঁড়াতেন বাচ্চাদের সামনে। আয়ুষ্মান সকালে যেতেন ছবির প্রচারে। রাত জাগতেন দুশ্চিন্তায়।
স্টেজ ওয়ান ব্রেস্ট ক্যানসার জয় করেছেন তাহিরা নিজেই। তাঁর মানসিক দৃঢ়তা আর বাঁচার ইচ্ছে দিয়ে। বলেন আয়ুষ্মান। আর তাহিরা নিজে বলেন, আয়ুষ্মান পাশে না থাকলে তিনি এই যুদ্ধে জয়ী হতে পারতেন না।
এক সময় ব্রেস্ট ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইকেও জীবনের যাত্রাপথের অঙ্গ হিসেবে মেনে নিয়েছেন আয়ুষ্মান-তাহিরা। অভিযোগ বা বিলাপের পথে না গিয়ে মুখোমুখি হয়েছে সত্যের। তাতেই হয়তো সংগ্রামের রসদ পেয়েছেন। কেমোথেরাপি চলার সময়ে তাহিরা নিজের ছবিও শেয়ার করেছেন নিয়মিত।
জীবনকে উপভোগ করছেন আয়ুষ্মান আর তাহিরা। আয়ুষ্মান এখন কেরিয়ারে সাফল্যের শীর্ষে। নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে জাতীয় পুরস্কার। তাহিরাও উজ্জ্বল নিজের কক্ষপথে। ২০১৮ সালে মুক্তি পেয়েছে তাঁর পরিচালিত শর্ট ফিল্ম ‘টফি’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমিক জুটি থেকে আজ তাঁরা জীবনযুদ্ধে পোড় খাওয়া দম্পতি। একসঙ্গে কলমও ধরেছেন সেই গল্প জানাতে, আয়ুষ্মানের জীবনী ‘ক্র্যাকিং দ্য কোড’-এ। স্বামীর সঙ্গে তাহিরাও এই বইয়ের সহলেখিকা।
জীবনকে বইয়ের পাতার মতোই উপভোগ করতে চান তাঁরা। যেখানে দিন ফুরিয়ে যায় পরের দিনটাকে দেখার ইচ্ছে নিয়ে। ঠিক যেমন বইয়ের একটা পৃষ্ঠা পড়া শেষ হয় পরের পৃষ্ঠায় কী আছে জানার জন্য। (ছবি: ফেসবুক)