আত্মপ্রকাশেই জয় করেছিলেন বলিউড। ছিলেন নব্বইয়ের দশকের প্রথম সারির নায়িকা। কিন্তু বেশি দিন দীর্ঘ করেননি নিজের কেরিয়ার। এখন আয়শা জুলকা একজন সফল ব্যবসায়ী।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর উইং কম্যান্ডার ইন্দ্রকুমার জুলকার মেয়ে আয়শার জন্ম শ্রীনগরে, ১৯৭২ সালের ২৮ জুলাই।
তাঁর শৈশবের বড় অংশ কেটেছে দিল্লিতে। পড়াশোনা দিল্লির লোরেটো কনভেন্ট স্কুলে। গ্র্যাজুয়েশনের আগেই সিনেমায় অভিনয় শুরু আয়শার।
ছবিতে অভিনয়ের আগে বেশ কয়েক বছর চুটিয়ে মডেলিং করেছেন তিনি। তাঁর কৈশোরের প্রেমিক রজম মাথুরের কথায় মডেলিং শুরু করেছিলেন।
সাফল্য পেয়ে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরে রুপোলি দুনিয়ায় পা রেখে ভেঙে যায় রজতের সঙ্গে সম্পর্কও।
আশির দশকের শেষে সে সময় বলিউডে একগুচ্ছ নতুন নায়ক। অক্ষয় কুমার, আমির খান তাঁদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম। তাঁদের সঙ্গে আয়শার জুটি সুপারহিট ছিল বক্স অফিসে।
আয়শার প্রথম ছবি ‘ক্যায়সে ক্যায়সে লোগ’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮৯ সালে। প্রথম থেকেই আয়শার নিষ্পাপ লুক মনে ধরেছিল দর্শকদের। ১৯৯০ সালে ‘মিত মেরে মন কে’ ছবিতে প্রথম নায়িকার ভূমিকায় আত্মপ্রকাশ।
১৯৯০ সালে সলমন খানের বিপরীতে ‘কুরবান’ ছবি সফল হয়। ১৯৯২ সালে মুক্তি পায় ‘যো জিতা ও হি সিকন্দর’। চিত্রনাট্য-গান-গল্প সব মিলিয়ে এই ছবি বক্স অফিসে সুপারহিট হয়। আমির খান-আয়শা জুলকা জুটি, বিশেষ করে তাঁদের উপর চিত্রায়িত ‘পহেলা নেশা’ গানটি তুমুল জনপ্রিয় হয়।
নব্বইয়ের দশকে আয়শার বেশ কয়েকটি ছবি পর পর সফল হয়। তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হল ‘কোহরা’, ‘মেহেরবান’, ‘দালাল’, ‘রং’, ‘ওয়ক্ত হমারা হ্যায়’, ‘দিল কি বাজি’, ‘মাসুম’, ‘চাচি ৪২০’, ‘হোতে হোতে প্যায়ার হো গ্যয়া’ এবং ‘উমরাও জান’। হিন্দির পাশাপাশি অভিনয় করেছেন ওড়িয়া, কন্নড় ও তেলুগু ছবিতেও।
তাঁর কেরিয়ারের সবথেকে বড় হিট ছবি ছিল ‘দালাল’। এই ছবি ঘিরেই এসেছে বিতর্ক। আয়শার অভিযোগ ছিল, ছবিতে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে তাঁর বডি ডাবল ব্যবহার করা হয়েছে।
তাঁকে না জানিয়ে এই কাজ করায় তিনি অভিযুক্ত করেন পরিচালক পার্থ ঘোষ এবং প্রকাশ মেহরাকে। উঠতি নায়ক আরমান কোহালিকে জড়িয়েও তাঁর সম্বন্ধে অনেক গুঞ্জন শোনা যেত ইন্ডাস্ট্রিতে।
পরে আয়শার ঘনিষ্ঠ হিসেবে শোনা গিয়েছে নানা পটেকর, মিঠুন চক্রবর্তী, অক্ষয় কুমারের নাম-ও। নানা-র সঙ্গে বেশ কিছু সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করার পর আরও তির্যক হয় গুঞ্জন।
তবে কোনও গুঞ্জনই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কেরিয়ারের শীর্ষে থাকতে থাকতই আয়শা বিয়ে করে নেন সমীর ভাসিকে। বিয়ের পরে স্পা, রিসর্ট, বুটিক-সহ একাধিক ব্যবসার কাজে স্বামীর ব্যস্ততার শরিক তিনিও।
বলিউড থেকে বিদায় নেওয়ার বহু বছর পরে ‘গদর’ ছবির পরিচালক অনিল শর্মার কথায় তিনি ‘জিনিয়াস’ ছবিতে অভিনয়ে রাজি হন।
কিন্তু মূল স্রোতে আর ফিরে আসেননি আয়শা। যেমন অল্প বয়সে এসে খ্যাতির শিখরে উঠেছিলেন, তেমনই ইন্ডাস্ট্রি থেকে বিদায় নেন সময়ের অনেক আগেই।