আপস করাই কি বাঁচার পথ?
Tollywood

বাংলা ওয়েবে যৌন দৃশ্য না থাকলে আমল পাচ্ছেন না নতুন পরিচালকরা!

তবে ব্যবসায়িক দিক থেকে দেখলে, যে কোনও ফরম্যাটেই যৌনতা বিক্রি করা যায় খুব সহজে।

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২০ ০০:৩৪
Share:

‘হ্যালো’ সিরিজ়ের দৃশ্য-‘দুপুর ঠাকুরপো’য় মোনালিসা

গত দু’-তিন বছরেই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সমান্তরাল একটি ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে জমি শক্ত করেছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলি। সর্বভারতীয় স্তরে দেখলে, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজ়ন, অল্ট বালাজি, জ়ি ফাইভ-এর কনটেন্টে একটি বিষয় চোখে পড়ার মতো, যৌনতার অবাধ প্রদর্শন। নেটফ্লিক্সের প্রথম অরিজিন্যাল দেশজ সিরিজ় ‘সেক্রেড গেমস’-এ দেখানো হয়েছিল ‘ফ্রন্টাল নুডিটি’, যা মেনস্ট্রিম ঘরানায় একটি নজির তৈরি করে। ২০২০তে দাঁড়িয়েও যৌনতা নিয়ে ছুঁতমার্গ দেশের প্রতিটি স্তরের মজ্জায় গভীর ভাবে প্রোথিত। তার মূল কারণ, জেন্ডার, নারীশরীর নিয়ে অশিক্ষা ও ভ্রান্ত ধারণা। যার ফলে এই দেশে যৌন অপরাধের হারও তুলনায় বেশি।

Advertisement

তবে ব্যবসায়িক দিক থেকে দেখলে, যে কোনও ফরম্যাটেই যৌনতা বিক্রি করা যায় খুব সহজে। সাধারণ মানুষের অদম্য কৌতূহল এবং যৌনতা নিয়ে লুকোছাপা থাকার কারণেই স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলিতে ‘সেক্স সেলস’। কিন্তু যে নতুন পরিচালক এই ধরনের কনটেন্ট বানাতে রাজি নন, তাঁর কি আপস করা ছাড়া বাঁচার কোনও পথ নেই?

সম্প্রতি এক ছোট মাপের প্রযোজকের হাতে হয়রানির শিকার হয়েছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট পরিচালক ইন্দ্রায়ুধ সরকার। নিজের অভিজ্ঞতা তিনি ফেসবুকে লিখেছেন। আনন্দ প্লাসের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কারও নাম করে বলতে পারব না। তা হলে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ পাব না। আমাদের মতো নতুন পরিচালকদের বড় প্রযোজনা সংস্থারা পাত্তা দেবে না। তাই ছোট ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রযোজক আমাদের ভরসা। এমনই এক প্রযোজকের কাছে গিয়েছিলাম কনটেন্ট নিয়ে। স্পষ্ট ভাবে বলা হয়, যৌন দৃশ্য না থাকলে তা গৃহীত হবে না।’’ বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে এমন অনেক ছোট ছোট প্রযোজনা সংস্থা রয়েছে, যারা যৌনতাকে প্রাধান্য দিয়ে কনটেন্ট বানাচ্ছে, অ্যাপ বানাচ্ছে। উদ্দেশ্য, দ্রুত ভিউয়ারশিপ বাড়ানো ও টাকা রোজগার। কার্যক্ষেত্রে তা ফলপ্রসূও। কিন্তু বড় প্রযোজনা সংস্থা কি এর চেয়ে আলাদা স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে? সেখানকার কনটেন্ট কতটা নতুন?

Advertisement

বাংলায় এসভিএফ প্রযোজনা সংস্থার অ্যাপ হইচই এবং সুরিন্দর ফিল্মস-এর আড্ডাটাইমস দর্শকের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়। দু’টি প্ল্যাটফর্মের সিরিজ়েই যৌনতার আধিক্য নজর কাড়ে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে যে নিছক উত্তেজনা তৈরি করার খাতিরেই, তা-ও বুঝতে অসুবিধে হয় না। কারণ ব্যাখ্যা করলেন পরিচালক সৌরভ চক্রবর্তী, ‘‘নেটফ্লিক্স, অল্ট বালাজি,‘হইচই’ প্রত্যেকেই নিজের মতো করে বাজার ধরার জন্য প্রথম দিকে যৌনতার দিকে ঝুঁকেছিল। কারণ এটা নির্ভরযোগ্য পথ। ‘সেক্রেড গেমস’ সিজ়ন ওয়ান-এ যতটা সেক্স ছিল, সিজ়ন টু-এ কিন্তু তত নেই। অল্ট বালাজিও এখন অন্য স্বাদের সিরিজ় আনছে। ওয়েবে সেন্সরের কাঁচিও নেই। তাই সে দিক থেকেও বাধা নেই। তবে প্রতিটি প্ল্যাটফর্মই এখন আর গোড়ার মতো সেক্স-নির্ভর নেই। আমি ‘হইচই’তে ‘জাপানি টয়’ বানিয়েছি। আবার ‘শব্দজব্দ’ করলাম, যেখানে কোনও যৌনতা নেই।’’

আরও পড়ুন: শিক্ষাগুরু আমির

‘জাপানি টয়’-এর চিত্রনাট্যকার অয়ন চক্রবর্তী সম্প্রতি ‘জাজমেন্ট ডে’ নামে একটি ওয়েব সিরিজ় বানিয়েছেন। ‘হইচই’-এর হিট সিরিজ় ‘দুপুর ঠাকুরপো’ সিজ়ন থ্রি-এর অন্যতম পরিচালক তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রযোজক নয়, কনটেন্ট ঠিক করে দেয় সংশ্লিষ্ট ওয়েব প্ল্যাটফর্ম। জোর করে যৌনতা দেখানোর কথা কেউ বলেননি।’’একই বক্তব্য পরিচালক সায়ন্তন ঘোষালের। তাঁর নতুন সিরিজ় ‘লালবাজার’-এ যৌনতা এসেছে ক্রাইম সিনে। ‘‘গল্প অনুযায়ী যৌনতা দেখানো হয়,’’ বললেন তিনি।

আসল কথা, ছোট প্রযোজনা সংস্থা যে কথা রাখঢাক না রেখেই বলে, বড় প্রযোজনা সংস্থা তা কখনও সরাসরি বলবে না। বললেও, থাকবে চার দেওয়ালের মধ্যেই। তবে ওয়েবের দর্শকের বুঝতে অসুবিধে হয় না, কোনটা গল্পের খাতিরে আর কোনটা নিছক দেখানোর জন্য দেখানো...

আরও পড়ুন: আছে মায়া, জাল বিস্তার নেই

এখনও অবধি সেন্সরের কাঁচি না থাকায় নির্মাতাদের এ ধরনের কনটেন্ট তৈরি করতে বেগ পেতে হচ্ছে না। তবে ভিউয়ারশিপের ম্যাজিক সংখ্যাই বলে দিচ্ছে, ‘জো বিকতা হ্যায়, ওহি দিখাতে হ্যায়...

আরও পড়ুন: পিরিয়ডই পছন্দ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement