ইন্ডাস্ট্রিতে যখন প্রথম পা রেখেছিলেন, সকলে তাঁর তুলনা করতেন মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে। হিন্দি এবং মরাঠি ছবিতে অভিনেত্রী হিসেবে তিল তিল করে তৈরি করেছিলেন নিজের জায়গা। কিন্তু হঠাৎ করেই ইন্ডাস্ট্রি থেকে হারিয়ে গেলেন অশ্বিনী ভাবে।
অশ্বিনীর জন্ম ১৯৭২ সালের ৭ মে। রুপারেল কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক হন তিনি। এর পর থিয়েটার করতে শুরু করেন। সুযোগ পান টেলিভিশনে। ‘অন্তরীক্ষ’ ধারাবাহিকে তাঁর কাজ নজর কেড়ে নেয়।
মরাঠি ছবিতে ভাল অভিনয়ের জোরে অশ্বিনী জায়গা করে নেন হিন্দি ছবির ইন্ডাস্ট্রিতেও। ‘হনিমুন’ ছবিতে তিনি অভিনয় করেন ঋষি কপূরের বিপরীতে। শ্যুটিঙের সময় তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব তৈরি হয় ঋষির সঙ্গে। সে সময় ঋষি ‘হিনা’ ছবিতেও অভিনয় করছিলেন।
এই ছবির কাজ চলাকালীনই রাজ কপূরের মৃত্যু হয়। ছবি শেষ করার দায়িত্ব এসে পড়ে ৩ ভাইয়ের উপরে। ছবিতে একটি চরিত্রে অভিনেত্রী পেতে সমস্যা হচ্ছিল। আয়েষা জুলখা, মীনাক্ষী শেষাদ্রি, জুহি চাওলা-সহ সব নায়িকা এই ছোট ভূমিকায় অভিনয় করার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
সকলের প্রত্যাখ্যাত সেই চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন অশ্বিনী। তিনিই এই ছবির ‘চাঁদনি কউল’। তাঁর উপর চিত্রায়িত গান ‘দের না হো যায়ে’ বলিউডের চিরসবুজ গানের মধ্যে অন্যতম।
বক্স অফিসে ‘হিনা’ ছিল সুপারহিট। এই ছবির বাকি অভিনেতাদের সঙ্গে অশ্বিনীও প্রচারের আলোয় চলে আসেন। ‘হনিমুন’-এর আগেই মুক্তি পায় ‘হিনা’। প্রথম ছবি সুপারহিট হওয়ার পরে অশ্বিনীর কাছে সুযোগের অভাব হয়নি। ১৯৯৩ সালে তিনি ‘সৈনিক’ ছবিতে অভিনয় করেন অক্ষয় কুমারের বিপরীতে।
যশরাজ ফিল্মসের ছবি ‘পরম্পরা’য় অশ্বিনী অভিনয় করেছিলেন সৎ মায়ের ভূমিকায়। বড় ব্যানারের ছবি বলেই তিনি তুলনামূলক ভাবে অনেক কম বয়সেই মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ছবিতে আমির খান এবং সইফ আলি খান তাঁর ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। যদিও বাস্তবে তাঁরা দু’জনেই অশ্বিনীর থেকে বয়সে বড়।
প্রথম ছবিতে ঋষি কপূরে বিপরীতে রোমান্টিক নায়িকা। তার দু’বছরের মধ্যে বয়সে বড় নায়কদের মায়ের ভূমিকায় অভিনয়। এই ওঠানামা অশ্বিনীর কেরিয়ারকে কার্যত কিছুটা পিছিয়েই দেয়। এর পর থেকে তাঁর কাছে সুযোগে কিছুটা ভাটা পড়ে।
ইন্ডাস্ট্রিতে সে সময় কিছুটা দোলাচল দেখা দিয়েছিল। অপরাধ জগতের ছায়া প্রকাশ্যেই দীর্ঘ হয়ে ওঠে ইন্ডাস্ট্রির উপরে। ফলে আরও কিছু নবাগত নায়ক নায়িকার মতো অশ্বিনীরও কিছু ছবি দিনের আলোর মুখ দেখেনি। কিছু ছবিতে সই করার পরেও তার কাজ শুরু হয়নি।
১৯৯৫ সালে অশ্বিনী সুযোগ পান ‘বন্ধন’ ছবিতে। এই ছবিতে তিনি ছিলেন সলমন খানের বোনের চরিত্রে। ১৯৯৫ সালে শ্যুটিং শুরু হলেও ছবিটি মুক্তি পেতে অনেক দেরি হয়ে যায়।
এই সময় অশ্বিনী বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর পক্ষে নায়িকার ভূমিকায় ফিরে আসা কঠিন। যে সুযোগ তাঁর কাছে আসছিল, তা ছিল পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের। ফলে অভিনয় ছেড়ে তিনি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। কয়েক বছর ধরেই আমেরিকাবাসী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার তথা ব্যবসায়ী কিশোর বোপার্ডিকরের সঙ্গে তাঁর প্রেম চলছিল।
কিশোরকে বিয়ে করে অশ্বিনী আমেরিকা চলে যান। তার পরেও তাঁকে ভারতে এসে ‘বন্ধন’ ছবির কিছু কাজ করতে হয়েছিল। কারণ ছবিটির শ্যুটিং চলেছিল ৫ বছর ধরে।
অশ্বিনীর বলিউড ছেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বন্ধন ছবি নিয়ে টানাপড়েন। তাঁর অভিযোগ, এত দিন সময় লাগায় বেশ কিছু ছবির কাজ তাঁর হাতছাড়া হয়েছিল। তা ছাড়া, সবমিলিয়ে ইন্ডাস্ট্রির প্রতি তাঁর মন নেতিবাচক হয়ে পড়েছিল। তাই তিনি ঠিক করেন, আর হিন্দি ছবিতে অভিনয় করবেন না।
বিয়ের পরে সানফ্রান্সিসকোর অ্যাকাডেমি অব আর্ট ইউনিভার্সিটি থেকে মোশন পিকচার্স অ্যান্ড টেলিভিশন বিষয়ে তিনি স্নাতক হন। তবে বেশ কয়েক বছর কাজ থেকে দূরে তিনি ব্যস্ত ছিলেন স্বামী এবং দুই সন্তানের সংসার নিয়ে।
২০০৭ সালে অশ্বিনী বলিউডে ফিরে আসেন প্রযোজক হয়ে। প্রযোজনার পাশাপাশি তিনি অভিনয়ও করেন মরাঠি ছবি ‘কদাচিৎ’-এ। কিন্তু এই ছবি সুবিধা করতে পারেনি বক্স অফিসে।
আমেরিকায় থাকার সময়ে নানা ভাবে অশ্বিনী বলিউডে ফিরে আসার চেষ্টা করেন। সলমন খানের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বজায় ছিল। ‘২৪’ ওয়েবসিরিজে তিনি অডিশন দিয়েছিলেন অনিল কপূরের স্ত্রী-র চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। কিন্তু তাঁর বদলে সুযোগ পান টিস্কা চোপড়া।
হিন্দি ও মরাঠির পাশাপাশি অশ্বিনী অভিনয় করেছেন ৩টি কন্নড় ছবিতেও। বিয়ের পরে অবশ্য বলিউডে আর ফিরে আসা সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে। তবে অভিনয় করেছে মরাঠি ছবিতে।
তাঁর উল্লেখযোগ্য হিন্দি ছবি হল ‘কায়দা কানুন’, ‘জখমি দিল’, ‘পুরুষ’, ‘জুরমানা’, ‘ভৈরবী’ এবং ‘যুগপুরুষ’। দর্শকদের একাংশের মতে, প্রথম থেকেই মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে তাঁর তুলনা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে চলা পথে। আবার অনেকের মতে, সঠিক চিত্রনাট্য নির্বাচন করতে না পারার জন্যই অভিনয়প্রতিভা এবং নায়িকাসুলভ চেহারা থাকার পরেও হারিয়ে যেতে হয় অশ্বিনীকে।