এআর রহমান। —ফাইল চিত্র।
গত ১০ সেপ্টেম্বর চেন্নাইয়ের ইস্ট কোস্ট রোডের আদিত্যরাম প্যালেস সিটিতে আয়োজন করা হয়েছিল সঙ্গীতশিল্পী এআর রহমানের কনসার্টের। সেই কনসার্ট ঘিরে তৈরি হয় চরম বিশৃঙ্খলা। অনুষ্ঠানের জায়গায় অতিরিক্ত ভিড় ও তা সামলানোয় গলদ থাকার ফলে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। বহু শ্রোতার পদপিষ্ট হওয়ার খবর মেলে। এমনকি শ্লীলতাহানির শিকার হন বহু মহিলা শ্রোতা, এই অভিযোগও ওঠে। অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ার জন্য সঙ্গীতশিল্পীকেও কাঠগড়ায় তোলেন অনেকে। সমাজমাধ্যমের পাতায় চলতে থাকে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের পালা। এমনকি, অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়া নিয়ে সম্প্রতি আয়োজকদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের হয়েছে পুলিশে। কনসার্টের প্রায় সপ্তাহ দুয়েক পরে তার ‘সুখস্মৃতি’ সমাজমাধ্যমের পাতায় শেয়ার করে ফাঁপরে পড়লেন রহমান। এমন বিভীষিকাময় অনুষ্ঠান নিয়ে এই ধরনের স্মৃতিচারণ করেন কী করে শিল্পী, প্রশ্ন নেটাগরিকদের একাংশের। তাঁদের রোষের মুখে পড়ে সমাজমাধ্যমের পাতায় কমেন্টের সেকশনই বন্ধ করতে হল অস্কারজয়ী সুরকারকে।
গত শুক্রবার অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক এসিটিসি ইভেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে চেন্নাই পুলিশ। আসনের থেকে বেশি সংখ্যক টিকিট বিক্রি করা, শ্রোতা ও দর্শকের বিশ্বাস ভাঙার অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে অভিযোগ। শুধু ১০ সেপ্টেম্বর রহমানের অনুষ্ঠানের বিশৃঙ্খলার পরিপ্রেক্ষিতে নয়, অতীতে আরও দু’টি অনুষ্ঠানে চূড়ান্ত অব্যবস্থার অভিযোগের ভিত্তিতেও তদন্ত শুরু করেছে চেন্নাই পুলিশ। চেন্নাই পুলিশের এক আধিকারিকের দাবি, রহমানের অনুষ্ঠানে যত জন শ্রোতার জায়গা হওয়ার কথা, তার থেকে প্রায় ১৫ হাজার বেশি শ্রোতা উপস্থিত হয়েছিলেন সেখানে। ওই পুলিশ আধিকারিকের দাবি, ‘‘২৫ হাজার শ্রোতার জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা ছিল। এ দিকে, অনুষ্ঠানের দিন সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন ৩৫-৪০ হাজার জন।’’ এই অব্যবস্থার জন্য আয়োজকদের দায়ী করে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৬ ও ১৮৮ ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছে চেন্নাই পুলিশ।
সপ্তাহখানেক আগে একটি বিবৃতি জারি করে অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ জানান, কনসার্টে বিশৃঙ্খলার দায় সম্পূর্ণ তাঁদের। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘আমাদের লক্ষ্য ছিল, শ্রোতাদের একটা স্মরণীয় কনসার্টের অভিজ্ঞতা উপহার দেওয়া। তবে নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। অনেক অনুরাগী অনুষ্ঠানের জায়গা পর্যন্ত পৌঁছতেই পারেননি। এর সম্পূর্ণ দায় আমরা নিচ্ছি। এতে এআর রহমানের কোনও দোষ নেই। তিনি তাঁর কাজ করেছেন। শুধু তাই-ই নয়, যাঁরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ শ্রোতা অনুষ্ঠান উপভোগও করেছেন। অনুষ্ঠানে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল, তা আমাদের গাফিলতির ফল। এর কারণে রহমানকে দায়ী করা উচিত নয়।’’ আয়োজকদের দাবি, লাভের লোভে বেশি সংখ্যক টিকিট বিক্রি করেননি তাঁরা। বরং টিকিট জালিয়াতির কারণেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। সেই কারণেই নাকি টিকিট থাকা সত্ত্বেও অনুষ্ঠানে ঢুকতে পারেননি বহু শ্রোতা। তবে টিকিট সংক্রান্ত সমস্যার কারণে যে অনুরাগীরা অনুষ্ঠানে ঢুকতে পারেননি, তাঁদের টিকিটের দাম ফেরত দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ।