স্মৃতিচারণায় অনীক দত্ত
এ বার তরুণ মজুমদার স্বয়ং ‘পলাতক’! সকালবেলা উঠে সামাজিক মাধ্যমে খবরটা শুনলাম। আমি বিদেশে, অক্সফোর্ডে। প্রবাসী বাঙালিদের ‘অপরাজিত’ দেখানোর আমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছি। কতিপয় লোক যাঁরা এখনও ছিলেন, যাঁদের শ্রদ্ধাভক্তি করা যেত, যাঁরা অভিভাবকের মতো ছিলেন, তনুবাবু সেই তালিকার শেষ ব্যক্তিত্ব। যে সমস্ত চিত্র পরিচালককে নিয়ে আমরা গর্ব করি, তিনি তাঁদের শেষ প্রতিনিধি। তিনিও পঞ্চভূতে বিলীন। এমন সময়ে চলে গেলেন, যখন আনুগত্য কিলো দরে বিক্রি হয়!
কোনও দিন অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। বরাবরের একরোখা, জেদি। কিছুর বিনিময়ে শিরদাঁড়া জমা রাখেননি। সেই পরিচালকের না থাকাটা একটু অস্বস্তির তো বটেই। মনে হচ্ছে, যাঁকে হয়তো কিছু কথা ফোন করে বলা যেত সেই মানুষটাই আর নেই। আমি যখন চলে আসছি অক্সফোর্ডে, ছবির বিশেষ প্রদর্শনীতে তার ঠিক আগের দিন হাসপাতালে দেখা করেছিলাম। তখনও ওঁর জ্ঞান রয়েছে। কিন্তু কথা বলতে পারছিলেন না। আমিও বেশি ক্ষণ ওঁকে বিরক্ত করতে চাইনি।
আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান, তনুবাবু নিজে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ‘অপরাজিত’ দেখেছিলেন। এবং অনেক উৎসাহব্যঞ্জক কথাও বলেছিলেন। ভাবিইনি ছবি দেখে এত কথা বলবেন! সত্যিই এতটাও আশা করিনি। বর্ষীয়ান পরিচালক সে দিন বলেছিলেন, ‘‘আপনি জানেন না, আপনি কী করেছেন! এই পঙ্কিল অবস্থা থেকে বাংলা ছবিকে আপনাদের টেনে তুলতে হবে।’’ কী সেই ‘অবস্থা’? আপনারা অনুমান করে নিন। পরিচালক আলাদা করে বিশেষ কোনও শব্দ উচ্চারণ করেননি। পাশাপাশি কিছু ক্ষোভপ্রকাশও করেছিলেন। সে সব সবিস্তার বলার উপযুক্ত সময় এখন নয়।
‘দাদার কীর্তি’র পরিচালক আমার কাঁধে একটি গুরুদায়িত্বও দিয়ে গিয়েছেন। আজ ওঁকে উদ্দেশ করে বলছি, "স্যর, আমি জানি না সেই দায়িত্ব পালনের আমি যোগ্য কি না। তবে এটুকু জানবেন, আপনার প্রতি যে সম্মান দেখানোর কথা ছিল সেটা যে দেখানো হয়নি সেটা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। হয়তো প্রতিকার করতে পারব না। ইতিমধ্যে অনেকেই হয়তো তার পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন। আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা করব আপনাকে সম্মান জানাতে। শুধুই স্মৃতিসভা বা রেট্রোস্পেক্টিভের মধ্যে দিয়ে নয়। আমাদের প্রতিটি কাজের মধ্যে দিয়ে।"