ঊর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়
মার্চ মাসে বাদশার ‘গেন্দা ফুল’ গানের রিমিক্স এক্কেবারে মনে ধরেনি তাঁর। সদ্য হওয়া লকডাউনে পড়াশোনার চাপও তখন কিছুটা হালকা। অফুরন্ত অবসরকে কাজে লাগিয়ে গানকে নিয়ে নিজের মতামত জানিয়ে আচমকাই একটা ভিডিয়ো ফেসবুকে আপলোড করে দিলেন। তারপর? ৫৮ সেকেন্ডের সেই ভিডিয়ো ভাইরাল ।‘টাইমপাস’ করার জন্য তৈরি ভিডিয়োর ভিউ হয়ে দাঁড়ায় ১২ লক্ষ।
এরপরেই বেলুড়ের ২১ বছরের ঊর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে উঠলেন ফেসবুকের ‘অ্যাংরি দিদি’। রাজ চক্রবর্তী থেকে অনীক দত্ত, তাঁর গুণমুগ্ধের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু নিজের জন্য এমন অদ্ভুত নাম বেছে নিলেন কেন? তা হলে কী তিনি সত্যিই সব সময় রেগে থাকেন?
উত্তর খুঁজল আনন্দবাজার ডিজিটাল।
কথার শুরুতেই বহুশ্রুত প্রশ্ন,
ফেসবুকে এত সাফল্য পেয়ে কেমন লাগছে?
ঊর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মৃদু হেসে বললেন, “খুব ভাল লাগছে। আমি মানুষের প্রতিক্রিয়া জানতে ভিডিয়োগুলো তৈরি করতাম। কিন্তু সবাই এত প্রশংসা করবেন ভাবতে পারিনি। রেগে রেগে ভিডিয়ো বানাই বলে আমার দর্শকই আমার নাম অ্যাংরি দিদি রেখেছে।”
তবে আচমকা ভিডিয়ো করা নয়, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময় থেকেই অল্পস্বল্প মিমিক্রি করতেন তিনি। যদিও প্রথমদিকে এক বন্ধুর প্রোফাইল থেকে সব ভিডিয়ো আপলোড হত। তার পর চলতি বছরের ১০ মে নিজের ফেসবুক পেজ তৈরি করেন। ইতিমধ্যেই সেই পেজের ফলোয়ার সংখ্যা ২ লক্ষ ছুঁই ছুঁই।
বর্তমান সময়ে তৈরি মহালয়ার অনুষ্ঠান দেখে কেমন প্রতিক্রিয়া দেবেন বা কোনও পড়ুয়া মাধ্যমিকের পর আর্টস নিয়ে পড়তে চাইলে আত্মীয়রা কী বলেন— এমনই বিচিত্র সব বিষয়ের উপর স্বল্পদৈর্ঘ্যের মজার ভিডিয়ো তৈরি করেন ঊর্ণা। নিজের পারিপার্শ্বিক থেকেই ভিডিয়োর বিষয় খুঁজে নেন তিনি। ফেসবুকে এই ভিডিয়োগুলির ভিউ চার লাখের বেশি, সঙ্গে রয়েছে অজস্র লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার।
আরও পড়ুন: অনির্বাণ অনবদ্য, মিমি লাগসই, লোক টানবে বাংলার প্রথম ড্রাকুলা
ঊর্ণা ফেসবুকে রীতিমতো সাড়া ফেললেও, ইউটিউবে তাঁর নিজস্ব কোনও চ্যানেল নেই।
তবে কি প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চান তিনি? ঊর্ণার মতে, তিনি কোনও প্রতিযোগিতার অংশ নন। ফেসবুক ভিডিয়ো থেকে কোনও অর্থও উপার্জন করেন না। বছর ২১-এর এই তরুণীর স্বপ্ন ইউপিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়া। মানুষকে হাসাতে ভালবাসেন। নিছকই সেই নেশায় ভিডিয়ো তৈরি করেন ঊর্ণা। তাঁর কথায়, “এর পর পড়াশোনার চাপ আরও বেড়ে যাবে। তখন সে দিকেই বেশি নজর দিতে হবে। তাই ইউটিউব চ্যানেলের কথা সে ভাবে কখনও ভাবিনি।”
অবসর সময়ে গান করতে ভালবাসেন ঊর্ণা। ছোটবেলা থেকে গান শিখেছেন তিনি। এক সময় হৈমন্তী শুক্লর থেকেও তালিম নিয়েছেন । তবে প্রিয় ‘হবি’র কথা জানতে চাইলে পড়াশোনাকেই এগিয়ে রাখেন ‘অ্যাংরি দিদি’।
বাংলায় ‘কন্টেন্ট ক্রিয়েশন’ নিয়ে আশাবাদী ঊর্ণা। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে জানালেন, “বং গাই, ওয়ান্ডার মুন্না, বাঁকুড়া মিমসের উন্মেষদা, এঁদের প্রত্যেকের সঙ্গেই আমার যোগাযোগ রয়েছে। আমাকে ছোট বোনের মতো করেন গাইড করে ওঁরা। আমার কাজ ভাল লাগলে, আমার প্রশংসা করেন। কোনও ভুল হলে সেটা সংশোধন করে নিতে বলেন। প্রত্যেক মুহূর্তে কাজ করার উৎসাহ দিয়ে চলেন এই মানুষগুলো।”
'অ্যাংরি দিদি' ঊর্ণা
কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় তো অনেক কুরুচিকর মন্তব্যেরও মুখোমুখি হতে হয়।খারাপ লাগে না?
ঊর্ণার স্পষ্ট উত্তর, “এত কমেন্ট আসে, কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ সেটা অনেক সময় দেখতেই পাই না। কিন্তু যদি কোনও অশ্লীল মন্তব্য চোখে পড়ে তখন আমি প্রতিবাদ করি। আবার অনেক কমেন্ট নেগেটিভ হলেও, খুব মজার হয়। সেগুলো দেখে আর রাগ করতে পারি না। পড়ার পর হেসে ফেলি। আসলে বাড়িতে বসে উল্টোপাল্টা বলা যায়। সবাই ভাবে, আমাদের কাজটা খুব সহজ। কিন্তু একটা ভিডিয়ো বানানোর সময় আমাকে অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়। কোনও কথা যাতে কারোর ভাবাবেগে আঘাত না করে সেই দিকেও নজর রাখতে হয়।”
ইতিমধ্যেই সিনেমার জন্য একাধিক অফার পেয়েছেন ‘অ্যাংরি দিদি’। তবে এই মুহূর্তে এ সব নিয়ে কিছু ভাবছেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় এত সাফল্যের পরেও তাঁর লক্ষ্য ইউপিএসসি। ছাত্রী হিসেবে বরাবরই ভাল ঊর্ণা। অগ্রসেন বালিকা শিক্ষা সদনের ছাত্রী স্কুলে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন। তার পর তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে যাদবপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঊর্ণা মনে করেন, পড়াশোনার প্রতি ভালবাসাই তাঁকে সিভিল সার্ভিসের দিকে এগিয়ে দিয়েছে।
পড়াশোনার পাশপাশি সিনেমা দেখতে ভালবাসেন ঊর্ণা। রকমারি ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে সঙ্গী করে লকডাউন মন্দ কাটেনি তাঁর।
নিজেই জানিয়েছেন, তাঁর প্রথম প্রেম শাহরুখ খান। আর বাস্তবের প্রেম? কোনও উত্তর দিলেন না। ফোনের ও পাশ থেকে শুধু খিলখিলিয়ে হাসির শব্দ। মানুষের ভালবাসা অনেকাংশেই জীবন বদলে দিয়েছে ঊর্ণার। ইদানিং রাস্তায় বেরলে অনেকেই সেলফি তুলতে চান তাঁর সঙ্গে। এই তো সেদিন মায়ের সঙ্গে রেস্তরাঁতে বসে মনের সুখে বার্গারে কামড় বসাতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তার আগেই উড়ে এল সেলফি তোলার আবদার। অগত্যা লোভ সামলে, সাধের বার্গারটাকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হেসে পোজ দিলেন ঊর্ণা। মেয়ের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত মা-বাবা। ইতিমধ্যেই ঊর্ণাকে তাঁর মায়ের সঙ্গে দেখা গিয়েছে ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এর একটি এপিসোডে।
আরও খবর: পরিণত কোয়েলই ‘রক্ত রহস্য’-এর প্রাণভোমরা
আপাতত পুজো নিয়ে মেতে আছেন ঊর্ণা। মায়ের সঙ্গে কেনাকাটা করতে গিয়ে ১৫টা জামাও কিনে ফেলেছেন। পুজোর গন্ধ গায়ে মেখে, প্রিয় বিরিয়ানি সহযোগে কাছের মানুষদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে এই কালো বছরে পুজোর চারটে দিন হইহই করে কাটাতে চান ‘অ্যাংরি দিদি’।