বাবা বিশিষ্ট কবি। দাদা বলিউডের সুপারস্টার। কিন্তু তিনি নিজে থাকেন প্রচারের আড়ালেই। অনেকেই জানেন না, দাদার মহাতারকা হয়ে ওঠার পিছনে তাঁর অবদান কিছু কম নয়। অথচ তাঁর সঙ্গেই দীর্ঘ দিন দাদার সম্পর্ক ছিল শীতল। বাবা এবং দাদার নামের ছায়ায় চির দিন ঢাকা থাকলেন অজিতাভ বচ্চন।
হরিবংশ এবং তেজী বচ্চনের দুই ছেলেরই পড়াশোনা নৈনিতালের শেরউড স্কুলে। অমিতাভ এবং অজিতাভের বয়সের ব্যবধান ছিল ৫ বছরের। অজিতাভ যখন দ্বাদশ শ্রেণিতে, অমিতাভ তখন কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছেন।
অমিতাভের মতো তাঁর ভাইয়েরও জীবনের বেশ কিছু বছর কেটেছে কলকাতায়। চাকরি করতেন শিপিং কোম্পানিতে। সে সময়ই দাদার সূত্রে অজিতাভের সঙ্গে আলাপ হয় রমোলার। রমোলা ছিলেন অমিতাভের বন্ধু। দু’জনে একসঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও যেতেন। পরবর্তীতে রমোলা বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন ভাই অজিতাভের সঙ্গে। রমোলাকে এতটাই ভাল লেগেছিল অজিতাভের, যে তাঁকেই বিয়ে করেন।
দাদা অমিতাভকে অভিনয়ের জন্য উৎসাহিত করেছিলেন অজিতাভই। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন কলকাতায় চাকরি করলেও সেই জীবনে আনন্দ পাচ্ছেন না অমিতাভ। দাদার কিছু ছবি তিনি পাঠিয়েছিলেন প্রযোজকদের কাছে। কিন্তু প্রথমে ছবিগুলি বাতিল হয়ে যায়। পরে অবশ্য ওই ছবির দৌলতেই ‘সাত হিন্দুস্তানি’ ছবিতে সুযোগ পান অমিতাভ।
কেরিয়ারের স্বার্থে অমিতাভ মুম্বই চলে যাওয়ার পরেও অজিতাভ রয়ে গিয়েছিলেন কলকাতাতেই। কয়েক বছর স্ট্রাগলের পরে বলিউডে নিজের জায়গা তৈরি করেন অমিতাভ। সে সময় কলকাতার পাট চুকিয়ে অজিতাভও চলে যান মুম্বই। তিনি প্রথমে দাদার ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন।
অমিতাভের তারকা হয়ে ওঠার পিছনে সেলিম-জাভেদের গভীর অবদান ছিল। বিগ বি-র অসংখ্য সুপারহিট ছবির নেপথ্য কারিগর ছিলেন তাঁরাই। অমিতাভের কেরিয়ারের সেরা সময়ে সেলিম-জাভেদ ভেবেছিলেন একটি ছবি প্রযোজনা করবেন। যেখানে নায়ক হবেন অমিতাভই।
ছবির বিষয়ে আলোচনার জন্য তাঁরা হাজির হন অমিতাভের অফিসে। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে প্রথমে কথা বলেন অজিতাভ। শোনা যায়, তিনি এতটাই বেশি পারিশ্রমিক তাঁর দাদার জন্য চেয়ে বসেন যে, সেলিম-জাভেদ প্রস্তাব থেকে পিছিয়ে আলেন। এর পর তাঁদের আর প্রযোজক হওয়া হয়নি। জুটিও ভেঙে যায় তাঁদের।
খ্যাতির বৃত্তে থাকার সময় অমিতাভ যখন রাজনীতির দুনিয়ায় পা রাখেন, তখন অজিতাভ চলে যান লন্ডন। সেখানেই থিতু হন। লন্ডনে ওষুধের ব্যবসা সামলাতেন তিনি। শোনা যায়, এই ব্যবসার মূলধন ছিল অমিতাভেরই। ভাই অজিতাভ শুধু ব্যবসার দেখভাল করতেন। ব্যবসা এবং পারিবারিক পরিচিতির সূত্রে লন্ডনের অভিজাত মহলের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন অজিতাভ-রমোলা।
এর মধ্যেই বফর্স মামলায় জড়িয়ে যায় অমিতাভের নাম। তার আঁচ থেকে রেহাই পাননি অজিতাভও। তাঁর ব্যবসাও চলে আসে কড়া নজরদারির আওতায়। শোনা যায়, গা ঢাকা দেওয়ার জন্য সে সময় লন্ডন থেকে বেলজিয়ামে গিয়ে ছিলেন অজিতাভ। পরে অবশ্য এই মামলায় দুই ভাই-ই ক্লিনচিট পেয়ে যান।
অমিতাভের জীবনে রাজনীতিক পরিবারের প্রভাব বেড়ে যাওয়ার ফলে তাঁর সঙ্গে ভাই অজিতাভের দূরত্ব তৈরি হয়। সে কথা এক সাক্ষাৎকারে নিজেই স্বীকার করেছিলেন অজিতাভ।
পরে অমিতাভ যখন প্রোডাকশন হাউস খোলেন তখন অজিতাভও এর পার্টনার ছিলেন। ব্যবসার আর এক পার্টনার ছিলেন অভিনেত্রী কিরণ খেরের প্রাক্তন স্বামী গৌতম ব্যারি। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই এই সংস্থার ভরাডুবি হয়। বাজারে ২৫০ কোটি টাকার দেনা ছিল এই সংস্থার।
পরে এক সাক্ষাৎকারে অজিতাভ বলেছিলেন, তাঁদের মধ্যে দূরত্ব অনেক দিন এসে গিয়েছিল। কিন্তু বাবা হরিবংশ রাই বচ্চনকে দুঃখ দিতে চাইতেন না বলে তাঁরা সদ্ভাব রাখার অভিনয় করতেন। ২০০৩ সালে তাঁদের বাবার মৃত্যুর পরেই দু’জনে আলাদা হয়ে যান।
দূরত্ব এতটাই বেড়ে গিয়েছিল, অমিতাভের কোনও অনুষ্ঠানেও অজিতাভ আমন্ত্রিত থাকতেন না। অজিতাভ বলেছিলেন, তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল অর্থনৈতিক বিষয়কে কেন্দ্র করেও।
২০০৭ সালে অজিতাভ লন্ডন থেকে পাকাপাকি ভাবে ভারতে চলে এসেছিলেন। রমোলার সঙ্গে তাঁর দাম্পত্যেও টানাপড়েন তৈরি হয়। শোনা যায়, পরে ফ্যাশন ডিজাইনার রমলার সঙ্গে তাঁর সংসার ভেঙেও যায়।
অজিতাভ-রমোলার ছেলে ভীম পেশায় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার। ৩ মেয়ে নীলিমা, নয়না এবং নম্রতা শিল্পী। তাঁদের মধ্যে নয়না বিয়ে করেছেন বলিউড অভিনেতা কুণাল কপূরকে। তাঁদের বিয়ের আসরে দুই ভাইয়ের পরিবারকে একসঙ্গে শামিল হতে দেখা গিয়েছিল।
শোনা যায়, ২০১২ সালে দুই ভাইয়ের মধ্যে সব দ্বন্দ্ব দূর হয়ে যায়। অমিতাভ নাকি তাঁর প্রতীক্ষা বাংলো দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন অজিতাভকে। কিন্তু অজিতাভ সেটা নিতে চাননি। সুদূর অতীতের অন্তরঙ্গতা ফিরে না এলেও তিক্ততা সরিয়ে সৌজন্যমূলক সম্পর্ক বজায় রেখেছেন এই সেলেব্রিটি ভাই জুটি।