রাজনীতির পাশাপাশি বলিউডেও অমর সিংহ ছিলেন আলোচিত নাম। টিনসেল টাউনের বহু তারকার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাঁদের মধ্যে সবথেকে আলোচিত অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তাঁর সখ্যতা। বচ্চনদের পারিবারিক বন্ধু ছিলেন সদ্য প্রয়াত এই সমাজবাদী পার্টির নেতা। কিন্তু ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে এই সম্পর্ক এক সময় খাদের কিনারায় গিয়েও পৌঁছেছিল।
১৯৯৬-’৯৭ সালে অমর সিংহ ছিলেন ক্ষমতার মধ্যগগনে। অন্য দিকে, তাঁর বন্ধু অমিতাভের কেরিয়ারে তখন হঠাৎই অস্তগামী সূর্যের ছায়া এসে পড়েছিল। শাহরুখ খানের জনপ্রিয়তার জোয়ারে অমিতাভ ম্যাজিক তখন কিছুটা হলেও ভাটার মুখে।
অভিনেতা পরিচয় থেকে সরে এসে অমিতাভ চেয়েছিলেন প্রযোজক হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন পরিচয় তৈরি করতে। কিন্তু তাঁর সংস্থা মুখ থুবড়ে পড়ল। একের পর এক ছবি ব্যর্থ হল বক্স অফিসে। চরম আর্থিক সঙ্কটের মুখে এ সময়ে অমিতাভের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অমর সিংহ।
ধীরে ধীরে বলিউডে হারানো জমি ফিরে পান অমিতাভ। যশরাজ ফিল্মসের ব্যানারে ২০০০ সালে মুক্তি পায় ‘মহাব্বতেঁ’। এর পর থেকে আবার ছবিতে এবং ছোট পর্দায় ‘কেবিসি’-র দৌলতে জনপ্রিয়তার মানচিত্রে ফিরতে শুরু করেন অমিতাভ। তাঁর হাত ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত বাড়ে অমর সিংহেরও।
আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত অমর সিংহ কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন ২০১১ সালে। তিনি ছিলেন তিহাড় জেলে। এ সময় থেকে অমিতাভ ধীরে ধীরে তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে থাকেন। কিন্তু প্রকাশ্যে সেই তিক্ততা বা দূরত্ব আনতে চাননি বিগ বি।
বরং, বারবার বলেছেন, অমর সিংহের মতো ভাল বন্ধু না থাকলে তিনি হয়তো মুম্বইয়ের রাজপথে ট্যাক্সি চালাতেন। অন্য দিকে, অমর কিন্তু প্রকাশ্যে বিষোদগার করেছেন অমিতাভের বিরুদ্ধে।
এক সাক্ষাৎকারে তো রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন অমর সিংহ। বলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে যখন অমিতাভের আলাপ, তার অনেক আগে থেকেই অমিতাভ-জয়া আলাদা থাকেন! তবে এই বিতর্কিত দাবিতেও কোনও মন্তব্য করেনি বচ্চন পরিবার।
শোনা যায়, সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে অমিতাভ-জয়ার দূরত্ব বাড়ার অন্যতম কারণও এই অমর সিংহ। যদিও এই দাবি অস্বীকার করেন রাজনীতিক অমর। তাঁর দাবি, সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে বচ্চন পরিবারের দূরত্বের কারণ মোটেই তিনি নন। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, দীর্ঘ দিন একসঙ্গে থাকেন না অমিতাভ-জয়া। এক জন থাকেন ‘প্রতীক্ষায়’, অপর জন থাকেন ‘জনক’ নামের অন্য আর একটি বাংলোয়।
সঙ্কটের সময়ে অমিতাভের পাশে যাঁরা দাড়িয়েছিলেন, তাঁদের নামও প্রকাশ করেন অমর সিংহ। বলেছিলেন, ধীরুভাই অম্বানী নাকি ২৫ কোটি টাকা অবধি দিতে চেয়েছিলেন অমিতাভকে। কিন্তু অমিতাবের তখন দরকার ছিল ২৫০ কোটি টাকা।
অমর সিংহের আরও দাবি ছিল, ইউনিটেক নামে এক সংস্থা অমিতাভকে ১০০ কোটি টাকা দিয়েছিল। স্টক মার্কেটের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব কেতন পারেখ দিয়েছিলেন সমপরিমাণ অর্থ। সহারা গোষ্ঠীও নাকি বিগ বি-কে ৫০ কোটি টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিল। তবে তিনি নিজে কত টাকা দিয়েছিলেন, সেই অঙ্ক প্রকাশ্যে আনেননি।
অমর সিংহের আরও দাবি, সাহায্যকারী সংস্থা এবং ব্যক্তিদের কোনও টাকাই ফেরত দেননি অমিতাভ। বিগ বি-কে আত্মকেন্দ্রিক বলে বর্ণনা করে অমর সিংহ বলেছিলেন, অমিতাভ মুখে বন্ধুদের নিয়ে যা-ই বলুন না কেন, ব্যক্তিগত ভাবে বন্ধুদের সাহায্যের কথা মনে রাখেন না।
ইন্ডাস্ট্রিতে মেহমুদ, মনমোহন দেশাই, প্রকাশ মেহরার মতো বন্ধুদের কঠিন সময়েও অমিতাভ কিছু করেননি বলে অভিযোগ অমরের। সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নায়কের বদলে অমিতাভকে কার্যত খলনায়ক হিসেবেই চিহ্নিত করেন অমর।
তাঁর আরও দাবি, ‘মহাব্বতেঁ’ ছবির শুটিং থেকে ফিরে তাঁর কাঁধে মাথা রেখে নাকি অমিতাভ কাঁদতেন। বিগ বি-র আক্ষেপ ছিল, শুটিংয়ের কেন্দ্রবিন্দু নাকি শাহরুখ। তিনি নাকি যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন না। দাবি অমরের। অমিতাভের এই করুণ পরিস্থিতি দেখেই নাকি তিনি তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
এত সব কিছুর পরেও অমিতাভ একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি অমরের বিরুদ্ধে। অমরের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে।
প্রয়াত বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে অমর একটি টুইট করেন। নিজেও মৃত্যুপথযাত্রী অমর লেখেন, তিনি সংবাদ মাধ্যমে যা যা বলেছেন অমিতাভ এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে, তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী এবং অনুতপ্ত। বচ্চন পরিবার যেন ঈশ্বরের আশীর্বাদ থেকে কখনও বঞ্চিত না হয়। তিনি একটি ভিডিয়োও শেয়ার করেন।
সেখানে অমর বলেন, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে অমিতাভ বচ্চন এই বিশেষ দিনটিতে তাঁর বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বার্তা পাঠান। ১০ বছরে এক বারের জন্যেও এই দিনটির কথা ভোলেননি অমিতাভ। পাশাপাশি তিনি শুভেচ্ছা জানিয়ে এসেছেন অমরের জন্মদিনে। সে কথা উল্লেখ করে বিদায়বেলায় বন্ধুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে যান প্রবীণ রাজনীতিক অমর সিংহ।