পারিবারিক ধারা ও ঐতিহ্য অনুসরণ করে পা রেখেছিলেন সঙ্গীত জগতে। প্লে-ব্যাক গায়ক হওয়ার থেকেও তাঁর আকর্ষণ ছিল সফল গানের কারিগর হওয়া। সাফল্যও পেয়েছিলেন মিউজিক অ্যারেঞ্জারের ভূমিকায়। আরও অনেক কিছু তাঁর কাছ থেকে পাবে বলে অপেক্ষায় ছিল বলিউড। সেই অপেক্ষা অনন্ত রেখে অকালে চলে গেলেন অনুরাধা পড়োয়ালের ছেলে আদিত্য।
আদিত্যর জন্ম ১৯৮৫ সালের ২৫ জুলাই। মায়ের পাশাপাশি আদিত্যর বাবা সুরকার অরুণ পড়োয়ালও ছিলেন গানের জগতের নামী মুখ। অরুণ-অনুরাধার মেয়ে, আদিত্যর বোন কবিতাও একজন সঙ্গীতশিল্পী।
মুম্বইয়ের দ্য ক্যাথিড্রাল অ্যান্ড জন ক্যানন স্কুল থেকে পাশ করার পরে আদিত্য স্নাতক হন মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আশৈশব গানের পরিবেশে কাটানো আদিত্যর গানের জগতে পা রাখা ছিল কার্যত সময়ের অপেক্ষা।
তবে আদিত্য এক সাক্ষাৎকারে পরে জানান, গানকেই যে পেশা হিসেবে নিতে হবে, এমন কোনও চাপ তাঁর উপর ছিল না। অন্য যে কোনও পেশায় তিনি যেতেই পারতেন। কিন্তু তাঁর বিশ্বাস ছিল, সঙ্গীত তাঁর রক্তেই মিশে ছিল।
ছোটবেলায় তবলা বাজাতে ভালবাসতেন আদিত্য। তবলায় তাঁর হাতেখড়ি শিল্পী পণ্ডিত মদন মিশ্রর কাছে। তার পরে তিনি টানা ন’বছর তবলাবাদনের প্রশিক্ষণ নেন ওস্তাদ জাকির হোসেনের কাছে।
মাঝে মাঝে গান করলেও আদিত্যর কাছে মুখ্য ছিল তবলাবাদন-ই। মাত্র ন’বছর বয়সে তিনি সুর দিয়েছিলেন সাঁই বাবার ভজনের অ্যালবামে। এত অল্প বয়সে এই কৃতিত্বের জন্য লিমকা বুক অব রেকর্ডসে জায়গা পান তিনি।
তবে সঙ্গীতশিল্পীর সন্তান হয়ে জন্মালেই যে কেরিয়ার তৈরি সহজ, মনে করতেন না আদিত্য। তাঁর কথায়, ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের পরিচিতিটা তৈরি করতে হয় নিজেকেই।
বাবা মায়ের ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে বলিউডে একটু একটু করে নিজের পায়ের নীচে জমি মজবুত করছিলেন আদিত্য।
সঙ্গীত পরিচালক রঞ্জিত বারোতের সহকারী হিসেবে ‘তশন’, ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’, ‘ভুলভুলাইয়া’, ‘ক্যাশ’-সহ বেশ কিছু ছবিতে কাজ করেছেন আদিত্য।
২০১৯-এ মুক্তি পাওয়া ছবি ‘ঠাকরে’-তে কাজ করেছেন আদিত্য। ‘সাহেব তু সরকার তু’ গানটিতে তিনি-ই ছিলেন অ্যারেঞ্জার।
তবে ইদানীং ভক্তিগীতির ক্ষেত্রে মূলত কাজ করছিলেন আদিত্য। মায়ের সঙ্গে আরও কাজ করার ইচ্ছে ছিল তাঁর। কিন্তু সে সব অধরাই থেকে গেল।
কিডনির অসুখে মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে আদিত্যর চলে যাওয়া মানতে পারছে না বলিউড। উদিত নারায়ণ, শঙ্কর মহাদেবন-সহ বেশ কয়েক জন শিল্পী শোকপ্রকাশ করেছেন আদিত্যর মৃত্যুতে।
স্মৃতিচারণায় উদিত বলেছেন, ‘আশিকি’ ছবির গানের রেকর্ডিংয়ে ছোট্ট আদিত্যকে নিয়ে যেতেন অনুরাধা। সম্প্রতি তরুণ আদিত্যর কাজ করার ধরনও ভা্ল লাগত উদিতের। শোকবার্তায় জানিয়েছেন তিনি।
শঙ্কর মহাদেবনের মনে পড়ছে আদিত্যর সঙ্গে কাজ করার মুহূর্তগুলি। বলেছেন, ভবিষ্যতে তিনি মিস করবেন আদিত্যর মতো দক্ষ শিল্পীকে।
উদিত, শঙ্করের মতো অসংখ্য গুণমুগ্ধকে রেখে অকালে চলে গেলেন আদিত্য। রেখে গেলেন মনে রাখার মতো বেশ কিছু কাজ। সেইসঙ্গে রেখে গেলেন সুব্যবহার এবং নিষ্পাপ হাসি। দু’টোই নাকি সংক্রামক ছিল। বলছেন তাঁর গুণমুগ্ধরা।